বিজয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
একটু সুযোগ পেলেই সাইকেলে করে চলে যেতেন মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত প্রান্তে। সেখান থেকে খুঁটে খুঁটে তুলে আনা তথ্য সমৃদ্ধ করত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসঘর। নবাবদের জেলার ইতিহাস লেখার দায়িত্ব যে স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন বিজয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রাপ্ত তথ্য ও বিশ্লেষণ ছাড়া এই জেলার ইতিহাসচর্চাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। মঙ্গলবার গভীর রাতে নব্বই বছর বয়সে তাঁর প্রয়াণে তাই শোকাচ্ছন্ন জেলা। বুধবার খাগড়া শশ্মানঘাটে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
বিজয়বাবুর লেখা বই ‘পশ্চিমবঙ্গের পুরাসম্পদ: মুর্শিদাবাদ’, ‘শহর বহরমপুর’, ‘ইতিহাসের মুর্শিদাবাদ’, ‘মুর্শিদাবাদ যুগে যুগে’, ‘মুর্শিদাবাদের মন্দির’ এবং ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ সমগ্র’ মুর্শিদাবাদের ইতিহাসের গবেষকদের অবশ্যপাঠ্য। কিন্তু ইতিহাস তাঁর প্রিয় বিষয় হলেও, বিজয়বাবু ছিলেন বাংলার ছাত্র এবং শিক্ষক। জন্ম ১৯২৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর। সৈদাবাদের কাঠমাপাড়ায়। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনিই বড়। ১৯৪৫ সালে বর্তমান মণীন্দ্রচন্দ্র হাইস্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে আইএ পাশ করে ওই কলেজ থেকেই ১৯৪৯ সালে বিএ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। সে বছরই সহকারী শিক্ষক হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় মহিষমারা এমই হাইস্কুলে। পরে গুড়াপাশলা শিক্ষা নিকেতনে বাংলার শিক্ষক ছিলেন। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত সেখানেই শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৫ সালের মাঝামাঝি থেকে তিনি বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ স্কুলে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। ১৯৯০ সালে অবসর নেন ওই স্কুল থেকেই।
তার পরে আরও আগ্রহের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ইতিহাস গবেষণায়। ক্ষেত্র সমীক্ষার উপরে বরাবর জোর দিতেন। তাঁর প্রাক্তন ছাত্র বিষাণ গুপ্ত বলেন “তাঁর ভালবাসার ক্ষেত্র ছিল ইতিহাস ও পুরাসম্পদ। মুর্শিদাবাদকে হাতের তালুর মতো চিনতেন।’’
বিজয়বাবুর প্রাক্তন ছাত্র কৃষ্ণনাথ কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক পার্থসখা বসু বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ জেলার মন্দির-মসজিদ, প্রাচীন বাড়ি-ঘর, ভগ্নস্তূপ যেমন তাঁকে আকর্ষণ করত, তেমনই খাল, বিল, জলাশয়, নদীর বাঁক, নদীপথের পরিবর্তনও তাঁকে সমান ভাবে টানত। স্বেচ্ছায় হেঁটে বা সাইকেল চড়ে সর্বত্র যেতেন। নিজের চোখে দেখে এসে নথিভুক্ত করতেন। ছাত্রদরদী, অমায়িক, বিনয়ী, দৃঢ়চেতা বিজয়বাবুর ব্যক্তিত্ব আমাদের আকর্ষণ করত। মনে হত, তাঁর মতো শিক্ষক হওয়াই জীবনের আদর্শ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy