—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
হরিহরপাড়ার রুকুনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ২০১২ সালে বিয়ের সংখ্যা ছিল ২৪৩টি। এর মধ্যে ২২১টি অর্থাৎ ৯১ শতাংশই ছিল বাল্য বিবাহ। পাশের খিদিরপুর পঞ্চায়েতে ২৮১টি বিয়ের মধ্যে ২৫৯টি অর্থাৎ ৯১ শতাংশ বিয়েই ছিল ১৮ বছরের আগে। বেলডাঙার দেবকুণ্ডুতে ৪০৮টির মধ্যে বাল্য বিবাহ ঘটেছিল ৫৮ শতাংশের অর্থাৎ ২৬১ জনের। বেগুনবাড়িতে এক বছরে ৮৬৪টি বিয়ের মধ্যে ৪০৯টি বিয়েই ছিল বাল্য বিবাহ।
মুর্শিদাবাদের বাল্য বিবাহের এই ভয়াবহ চিত্রটি ফুটে উঠেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সমীক্ষায়।
৬ বছর পেরিয়ে ব্যাপক প্রচার, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও কন্যাশ্রীদের নজরদারি এবং পুলিশ ও প্রশাসনের শাসনে এই চিত্র কিছুটা বদলালেও বাল্য বিবাহে রাজ্যে মুর্শিদাবাদ এখনও প্রায় শীর্ষস্থানেই।
রবিবার ফরাক্কায় সাড়ে ১৫ বছরের কিশোরী ও সাড়ে ১৬ বছরের কিশোরের মধ্যে বিয়ে বন্ধ করতে সশস্ত্র পুলিশের যেভাবে কালঘাম ছুটেছে তাতে নাবালকের বিয়ে ফের প্রশ্ন চিহ্নের মুখে ফেলেছে মুর্শিদাবাদকে।
জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হিসেবে, ২০২২-২৩ বর্ষে মুর্শিদাবাদ জেলায় পুলিশের সাহায্য নিয়ে নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করা গিয়েছে ৪২৩টি। এর বাইরেও ,সময়ে খবর না পাওয়ায় বহু নাবালিকার বিয়ে যে জেলায় হয়ে চলেছে তার নজির জেলার হাসপাতালগুলিতে নাবালিকা মায়ের পরিসংখ্যান। বহরমপুরের হাসপাতালে যা ২৫ শতাংশ, জঙ্গিপুরে তা ২৮ শতাংশ।শমসেরগঞ্জে তা প্রায় ৩৫ শতাংশ।
ইউনিসেফের তথ্য মতো, সবচেয়ে বেশি কম বয়সে বিয়ের সংখ্যা মুর্শিদাবাদ জেলায়, প্রায় ৩৫.৮ শতাংশ। করোনার আকস্মিক হানায় ভয়ের বাতাবরণে এই বিয়ের সংখ্যা কিছুটা কমলেও এই প্রবণতা ফের বেড়েছে। জেলার কমবেশি সব জায়গাতেই নাবালিকা বিয়ের ঝোঁক রয়েছে। কিন্তু শমসেরগঞ্জ, সুতি, নওদা, হরিহরপাড়া, ইদানীং ফরাক্কাতেও নাবালিকা বিয়ের সংখ্যা বেশি নজরে আসছে।
এক সরকারি প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দীর্ঘদিন রয়েছেন জেলায়। বলছেন, “সারা দেশের মধ্যে মুর্শিদাবাদে বাল্য বিবাহের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রসবকালীন অবস্থায় যে মায়েরা মারা যাচ্ছেন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে তাঁদের বেশির ভাগটাই বিয়ে হয়েছে কম বয়সে। কম বয়সে বিয়ে দিলেই মেয়েরা মা হতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন। তাই জেলায় আগে বাল্য বিবাহ বন্ধ করা না গেলে স্বাস্থ্য কেন্দ্র বানিয়ে কোনও লাভ হবে না। বহু এলাকায় দেখছি স্কুলে যাওয়া মেয়েকেও বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিয়ের আসরে। বাড়ির বাবা, মা যদি সচেতন না হন, মেয়ের ভাল না চান তা হলে কোনওদিনই বাল্য বিবাহ বন্ধ করা সম্ভব হবে না। গ্রামবাসী ও পঞ্চায়েত সদস্যরাও বাস্তবে গ্রামে বাল্য বিবাহ দেখেও দেখেন না।”
একটি অসরকারি সংস্থার সহকারী অধিকর্তা জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, “বিয়ে বন্ধ হচ্ছে সেইগুলোই যেগুলির খবর প্রশাসন বা আমাদের কাছে আসছে। বহু বিয়ে হচ্ছে যা আমরা জানতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy