ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের এক মহিলা কর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল জঙ্গিপুরে দলেরই এক নেতার বিরুদ্ধে। জেলার টোটো ও অটো শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক ওই নেতার নাম জয়নাল আবেদিন। পেশায় রঘুনাথগঞ্জ চক্রের একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক তিনি।
কিন্তু অভিযোগ, ধর্ষণের অভিযোগ সত্ত্বেও তিন মাসেও গ্রেফতার করা হয়নি তাকে। কলেজ পড়ুয়া ওই তৃণণূল কর্মী শেষ পর্যন্ত কয়েক দিন আগে কলকাতায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে গিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে এসেছেন। অভিযোগ জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও। তবে পুলিশ অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা জয়নাল আবেদিনের নাগাল না পেলেও মঙ্গলবার ফোনে তিনি বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যে । আমাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে। এর সঙ্গে তৃণমূলেরই এক আইনজীবী নেতা জড়িত।"
জঙ্গিপুরের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, ‘‘সমস্ত বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। অবশ্যই তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
নির্বাচনের তিন সপ্তাহ আগে জঙ্গিপুরে তৃণমূল নেতার এই কীর্তির কথা প্রকাশ্যে চাউর হতেই অস্বস্তিতে পড়েছে দল। এ নিয়ে নির্বাচনের মুখে দলের কোনও নেতা মুখ খুলতে চাননি।তবে জঙ্গিপুর মহকুমা তৃণমূল টোটো ও অটো সংগঠনের সভাপতি এবং তৃণমূল নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘‘খুবই বাজে ঘটনা। নিন্দার ভাষা নেই।’’
তৃণমূলের টোটো ও অটো কর্মী সংগঠনের রাজ্যের কার্যকরী সভাপতি কমল বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সংগঠনের জেলা নেতার এই কীর্তির কথা শুনে বলেন, ‘‘অত্যন্ত ঘৃণ্য অপরাধ করেছে সে। তাকে সংগঠন থেকে দ্রুত বহিষ্কার করা হবে। পুলিশকেও বলব এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।’’ রঘুনাথগঞ্জ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রশান্ত সর্দার বলেন, ‘‘পুলিশের কাছ থেকে আমি সমস্ত ঘটনা জেনেছি। পুলিশ যা যা জানতে চেয়েছিল তাও জানিয়েছি। জেলা স্তরেও শিক্ষা দফতরকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আর কিছু বলতে পারব না।’’
ওই তরুণীর অভিযোগ, তিন মাস ধরে ‘ফেরার’ ওই অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা জঙ্গিপুরে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সর্বত্র, কেস তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। ওই তরুণী জঙ্গিপুর শহরের বাসিন্দা। কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। খুবই গরিব পরিবার। কর্মসংস্থানের সুযোগের লোভেই শাসক দলের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয় বছর পাঁচেক আগে। সেখানেই পরিচয় শ্রমিক সংগঠনের ওই জেলা নেতা জয়নাল আবেদিনের সঙ্গে। তিনি তাকে আশ্বাস দেন যে কোনও একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেবেন।
ওই তরুণী বলেন, ‘‘ইউনিয়নের কোনও একটা পদেও বসান আমাকে। এই ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে একদিন শহরের মধ্যে তার সাংগঠনিক অফিসে নিয়ে যায় সে। সেখানেই আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাকে ধর্ষণ করেন। হুমকি দেয় একথা কাউকে জানালে তোমার চাকরি হবে না। চাকরি হবে এই আশায় আমিও চুপ করে থাকতে বাধ্য হই। এর কয়েকদিন পর সে তার গ্রামের বাড়িতে ডাকে। সেখানে যেতেই সে শাসাতে শুরু করে। ধর্ষণের ঘটনার কথা কাকে জানিয়েছ তুমি? আমাকে বেধড়ক মারধর করতে থাকে।’’
ওই তরুণী বলেন, ‘‘এরপরে আর চুপ করে থাকতে পারিনি আমি। দলের নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ সকলকে জানাই ঘটনার কথা। কিন্তু কেউ কোনও ব্যবস্থা নেননি। এর পরই ২১ জুন সমস্ত ঘটনা জানিয়ে অভিযোগ দায়ের করি জঙ্গিপুর মহিলা পুলিশ থানায়। পুলিশ ৩৭৬, ৩২৩ ও ৪০৭ ধারায় মামলা রুজু তৃণমূল নেতা জয়নালের বিরুদ্ধে। বেশ কয়েকবার পুলিশ তাকে ধরতে চেষ্টা করে, কিন্তু এখনও ধরতে পারেনি।’’
ওই তরুণীর কথায়, ‘‘কেউ কিছু না করায় আমি কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে কদিন আগে সমস্ত ঘটনা জানিয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়ে এসেছি। অভিযোগ দিয়েছি দলের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy