ধৃত দীপক স্বর্ণকার। নিজস্ব চিত্র।
রানাঘাটে জোড়া খুনের ঘটনায় এক যুবককে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম দীপক স্বর্ণকার। বাড়ি রানাঘাট শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে। শনিবার ধৃতকে রানাঘাট আদালতে তোলা হলে বিচারক সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রানাঘাট থানার আনুলিয়ার মনসাতলা এলাকায় একটি নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে ব্যবসায়িক সুমন চক্রবর্তী (৪০) ও তাঁর গাড়ির চালক রূপম দাসের (৩৮) রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার দিনই অকুস্থল থেকে দীপক স্বর্ণকারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। পুলিশের দাবি, প্রাথমিক জেরায় দীপকের কথায় বেশ কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। তা ছাড়া জোড়া খুনের ঘটনায় নিহত সুমনের স্ত্রী দেবদত্তা রানাঘাট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। সেই অভিযোগ পত্রে সন্দেহভাজন হিসেবে দীপকের নাম ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই ঘটনার সঙ্গে আর কে বা কারা যুক্ত রয়েছে তা জানার চেষ্টা চলছে।
কিন্তু কেন এই খুন?
পুলিশের দাবি, বছর দুয়েক আগে দীপকের বাবা দিলীপ আত্মঘাতী হয়েছিলেন। তিনি সুদের কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মৃত সুমন ও দিলীপের আগে থেকেই পরিচয় ছিল। দিলীপের মৃত্যুর পর তাঁর ব্যবসা কুক্ষিগত করে ফুলে-ফেঁপে উঠতে শুরু করেন সুমন। বাবার টাকা-পয়সা অন্য কেউ আত্মসাৎ করবে, এটা কখনওই মেনে নিতে পারেননি দীপক। যে কারণে চাপা ক্ষোভ থেকেই এই খুন বলে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে প্রমাণ লোপাটের জন্য গাড়ির চালককেও খুন হতে হয়।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় যে অচেনা নম্বর থেকে রানাঘাট শহরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের পুরসদস্য বিজন সরকারের ওরফে বাপ্পার কাছে ফোন গিয়েছিল, তা-ও এ দিন স্পষ্ট হয়। জানা গিয়েছে, দীপক নিজেই ওই দিন পুর-প্রতিনিধিকে ফোন করে বিষয়টি প্রথম জানায়। বিজন বলেন, ‘‘সন্ধ্যা ৬টার পর পর অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসে। নম্বরটি আমার ফোনে সেভ করা ছিল না। ফোন করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে, আমি দীপক বলছি। সুমনদা ও সোনাই দা (মৃত চালকের ডাকনাম) রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।" ওই ফোন পাওয়ার পর আমি ব্যক্তিগত ভাবে পরিচিত কয়েক জনকে নিয়ে মনসাতলার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। সেই সঙ্গে রানাঘাট থানাতেও ফোন মাধ্যমে খবর দিয়েছিলাম। পুলিশ ও আমরা প্রায় একই সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছই। সেখানে গিয়ে দেখি দীপক ঘরের বাইরে এক কোণে অন্ধকারে কাঁদছে।’’
এ দিন আদালত থেকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে ধৃত দীপক সংবাদ মাধ্যমকে জানায়, ‘‘আমি নির্দোষ। আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমিই প্রথম বাপ্পাদাকে (পুর-প্রতিনিধি বিজনের ডাকনাম) ফোন করে খবর দিয়েছিলাম।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যে নির্মীয়মাণ বাড়িতে খুন হয়, সেই বাড়ির পাশেই একটি চাষের জমিতে নার্সারি রয়েছে দীপকের। নির্মীয়মাণ বাড়িটি যেহেতু ওই নার্সারির পাশে তাই সেই বাড়ির একটি চাবি দীপকের কাছে থাকত। আবার সুমন ও তাঁর সঙ্গীরা মাঝেমধ্যে ওই বাড়িতে গেলে, দীপক তাঁদের ওই বাড়ির তালা খুলে দিত। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিনও দীপক দুপুরে ওই বাড়ি দরজা তুলে দিয়ে, নিজের নার্সারিতে কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরে।
দীপকের স্ত্রী দিব্যশ্রী স্বর্ণকার বলেন, "মৃত সুমনের স্ত্রী ঘটনার দিন ৪টে নাগাদ আমার স্বামীকে ফোন করে বলে, তাঁর স্বামীকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ওঁকে একবার ওই বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিতে বলি। পরে স্নান খাওয়া সেরে আমার স্বামী সুমনের খোঁজে ওই বাড়িতে গিয়েছিল। আমার স্বামীকে ফাঁসানো হচ্ছে।’’
তদন্তকারী এক পুলিশের এক কর্তার কথায়, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার খুনের ধারা ও তথ্য প্রমাণ লোপাট ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy