বহরমপুরে প্রতিবাদ মিছিল (বাঁ দিকে), সবুজ ঘাসের উপরে ফেলা হয়েছে বালি, কুঁচো পাথর। ছবি: গৌতম প্রমাণিক।
মুখ্যমন্ত্রীর সভা বলে কথা!
বহরমপুরের প্রাণকেন্দ্রে ওয়াইএমএ মাঠের লক্ষ স্কোয়ার মিটার জুড়ে তৈরি হয়েছে বিশাল ম্যারাপ। আষাঢ়ের বৃষ্টিভেজা মাঠের কাদাজল যাতে মা-মাটি-মানুষের নেত্রীর পায়ে না লাগে সে জন্য পুরু করে ফেলা হয়েছে কুঁচো পাথর, বালি। যার বলি মাঠের প্রায় আশি শতাংশ সবুজ ঘাস। এ ভাবে সবুজ ধ্বংস করে সভা কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সভা বলে কথা! এত খুঁত ধরলে চলে নাকি?’’
এমন সাজ সাজ রবের মধ্যেই ‘চোখে আঙুল দাদার’ মতো হাজির হয়েছে বহরমপুর শহরের কিছু সংগঠন। এ দিন বিকালে নাগরিক সমাজ ও মুর্শিদাবাদ জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে মাঠ সংলগ্ন এলাকায় মিছিল করে সবুজ ধ্বংসের প্রতিবাদ জানানো হয়। তাঁদের দাবি, সভা করার জন্য শহরে আরও মাঠ ছিল। যেখানে সভা করলে কারও অসুবিধা হত না। মাঠকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিও উঠেছে ওই মিছিল থেকে।
যদিও গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ জেলা প্রশাসনের কর্তারা। যাঁর দায়িত্বে এই মাঠ, সেই জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তা অতিরিক্ত জেলাশাসক অরবিন্দ মিনা বলেন, ‘‘কিছুই বলতে পারব না। যা বলার জেলাশাসক বলবেন।’’ জেলাশাসক ওয়াই রন্তাকর রাওকে একাধিকবার ফোন, এসএমএস করা হলেও উত্তর মেলেনি।
এই মাঠে সভা করেছেন ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গাঁধী, জ্যোতি বসু-সহ দেশের প্রথম সারির বহু নেতানেত্রী। এই মাঠে খেলেছেন চুনি গোস্বামী, বলরাম, থঙ্গরাজ, হামিদ-সহ একাধিক ভারত বিখ্যাত খেলোয়াড়। ফলে ওয়াইএমএ-র মাঠ নিয়ে বহরমপুর শহর তথা মুর্শিদাবাদবাসীর নস্টালজিয়া রয়েছে। জেলা ক্রিড়া সংস্থার সম্পাদক তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘শতাব্দী প্রাচীন এই মাঠের সঙ্গে বহু ইতিহাস জড়িয়ে। দুটি ক্রিকেট ক্যাম্প ও বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিযোগিতা চলে এই মাঠে।’’ সেই মাঠের সবুজ ধংসের প্রতিবাদ করেছেন তিনি। দাবি উঠেছে, সভার পরেই এই মাঠকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার। শহরের প্রবীণ বাসিন্দা মদনমোহন সরকার বলেন, ‘‘আমরা সকাল সন্ধ্যায় মাঠে হাঁটতে আসি। গান শুনি, গল্প করি। এখন যা অবস্থা তৈরি হয়েছে, তাতে সভার পরে মাঠে পা রাখা দায় হবে।’’
এ দিন নাগরিক সমিতির পক্ষ থেকে কয়েক’শো পুরুষ-মহিলা ঘটনার প্রতিবাদে পথে নামেন। বহরমপুর নাগরিক সমাজের সম্পাদক অতীশ সিংহের যুক্তি, ‘‘শহরে সভা করার মতো মাঠ নেই এমন নয়। স্টেডিয়াম সংলগ্ল মাঠে সভা করা যেত। তা না করে বালি আর পাথর ফেলে মাঠের দফা রফা করা হল!’’ তিনিও দ্রুত মাঠকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি তুলেছেন। একই দাবি জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাসের। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এই জামানায় এটাই দস্তুর।’’
তবে, সবুজ ধংস এই প্রথম নয়। বছর তিনেক আগে জেলা শহরের ব্যারাক স্কোয়ার ময়দানে এ ভাবেই কুচি পাথর ফেলে সবুজ নষ্ট করা হয়েছিল। প্রায় বছর খানেক আগে রাষ্ট্রপতির সফরের জন্য হেলিপ্যড তৈরি করতেও একই ভাবে ডোমকলের একটি মাঠ ও শহরের ব্যারাক স্কোয়ার ময়দান খেলা ও চলাফেরার অযোগ্য করা হয়। ওই ঘটনার পর থেকে ডোমকলের সেই মাঠ আজও খেলার অযোগ্য। এ বার সেই তালিকায় যোগ হল ওয়াইএমএ-র নাম!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy