প্রতীকী ছবি।
ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রী, শিশুপুত্র ও দুই কিশোরী শ্যালিকাকে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে খুনের অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত যুবকের নাম জাকিরুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ তাকে পাকড়াও করে।
রঘুনাথগঞ্জ থানার গঙ্গাপ্রসাদ গ্রামে গত শুক্রবার শেষ রাতে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কলকাতার এক সরকারি হাসপাতালে বুধবার মৃত্যু হয়েছে ধৃত জাকিরুলের স্ত্রী ফরিদা বিবি (২৪) ও আড়াই বছরের ছেলে ইমরান শেখের। ফরিদার দুই বোন শুকতারা খাতুন (১৩) ও ইশমাতারা খাতুন(১০) বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি। মৃতার বড় মেয়ে বছর চারেকের সুহানা ঘুমোচ্ছিল ছাদে দাদু-দিদিমার সঙ্গে। সেই জন্য রক্ষা পায় সে।
প্রথমে ভাবা হয়েছিল, ঘরে কোনও ভাবে আগুন লেগেও ওই চারজন অগ্নিদগ্ধ হয়েছিলেন। পরে পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে এই অগ্নিকাণ্ড স্বাভাবিক নয়। স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে চলতে থাকা বিরোধের জেরেই স্বামী জাকিরুল পরিকল্পিতভাবে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রীর ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। অভিযোগ, গভীর রাতে ঘরের দেওয়ালে থাকা ছিদ্র দিয়ে ঘরের মধ্যে পেট্রোল ঢেলে দেয় সে। তারপর তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তদন্তে নেমে নিশ্চিত হওয়ার পরই বৃহস্পতিবার রাতে অভিযুক্ত জাকিরুলকে লক্ষীজোলা গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ।
গঙ্গাপ্রসাদ গ্রামে বাপেরবাড়ি মৃতা ফরিদার। তাঁর বাবা মূক ও বধির। মরজেম হোসেন নামে ওই ব্যক্তি কাজকর্ম সেভাবে করতে পারেন না। ফরিদার বিয়ে হয়েছিল বছর পাঁচেক আগে পাশের হাটপাড়া গ্রামে। ফরিদা-জাকিরুলের বছর চারেকের একটি মেয়ে ও আড়াই বছরের ছেলে রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি শুরু হয়েছিল। অশান্তির জেরে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে মাসছয়েক আগে সন্তানদের নিয়ে গঙ্গাপ্রসাদে বাপের বাড়ি চলে এসেছিলেন ফরিদা।
মা পারুল বিবি বলেন, ‘‘বাড়িতে তিনটি ঘর। তারই একদিকের একটি ঘরে থাকত ফরিদা, ওর ছেলে এবং আমার আরও দুই কিশোরী মেয়ে। ইদানীং ফরিদার সঙ্গে বনিবনা হচ্ছিল না। জামাই প্রায়ই অশান্তি করত। মেয়েকে মারধরও করত। গত ছ’মাস ধরে আমাদের কাছেই ছিল মেয়ে ও নাতি-নাতনিরা।’’ তিনি জানান, দিনদশেক আগে জাকিরুল স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েদের নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দু’দিন পরেই অশান্তির জেরে স্ত্রীর মাথা মেরে ফাটিয়ে দেয় সে। ফরিদার মাথায় কয়েকটি সেলাইও পড়ে। তারপরই ফরিদার পরিবার জঙ্গিপুর ফাঁড়িতে গিয়ে জাকিরুলের বিরুদ্ধে ডায়েরি করেছিল। এর কয়েকদিন পর হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসেন ফরিদা।
মৃতার দাদা সাদেকুল শেখ বলেন, ‘‘গত ৫ জুলাই ভোররাতে চিঠকার শুনে ঘুম ভেঙে যায়। আগুন দেখে বেরতো গিয়ে দেখি, দরজায় বাইরে থেকে শিকল তোলা। চিৎকার শুনে মা ছুটে আসেন ছাদ থেকে। সব ঘরে আটকানো শিকল খুলে দেয় মা, বাবা। যে ঘরে ফরিদারা ঘুমোচ্ছিল আগুন লেগেছিল সেখানেই। গুরুতর অগ্নিদগ্ধ চারজনকেই নিয়ে যাওয়া হয় বহরমপুরে এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখান থেকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয় বোন ও ভাগ্নেকে। সেখানেই পর পর বুধবার মৃত্যু হয় তাদের। দুই বোনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তারা রয়েছে বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
সাদেকুল বলেন, “কীভাবে আগুন লাগল, প্রথমে বুঝে উঠতে পারিনি। প্রতিবেশীরা পরে জানালেন, তাঁরা ভোররাতে জাকিরুলকে ছুটে পালাতে দেখেছেন। পুলিশকে সব জানিয়েছি।’’
পুলিশ জানায়, তদন্তে সব স্পষ্ট হয়েছে। বাড়ির পাশে একটি উঁচু ঢিবি রয়েছে। ভোররাতে জাকিরুল শ্বশুরবাড়িতে আসে। ঘরের দেওয়ালে কয়েক জায়গায় ফাঁকা ছিল। ঢিবির উপর উঠে সেখান দিয়েই সে পেট্রোল ছড়িয়ে দেয়। তারপর দেশলাই ছুড়ে দেয় সে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy