বহিরাগতেরা কী ভাবে ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রদের উপরে হামলা চালাল, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই বা এই ঘটনায় কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন, সেই প্রশ্নই আপাতত বড় হয়ে উঠছে। প্রশ্ন উঠছে ক্যাম্পাসের ভিতরে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, দুই ‘বহিরাগত’— রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা টিএমসিপি-র সহ-সভাপতি আকাশ দাস এবং কল্যাণী শহর টিএমসিপি-র সভাপতি অঙ্কুর মজুমদারকে এই হামলার পুরোভাগে দেখা গিয়েছে। এসএফআইয়ের তরফেও এই অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও আকাশ দাসের দাবি, তাঁদের সমর্থকেরা আক্রান্ত হয়েছেন শুনে তিনি পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের বাইরে টিএমসিপি-র ‘ধিক্কার কর্মসূচি’র পরে কিছু বহিরাগতকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে এসএফআই নেতাকর্মী এবং বামপন্থী কর্মচারী সমিতির সদস্যদের উপরে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। এক চিত্রগ্রাহকের ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া হয়, বাধা দিতে গিয়ে দুই সিভিক ভলান্টিয়ার মার খান বলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি। যদিও রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি, পুলিশকর্তারা এই নিয়ে মুখও খোলেননি।
আকাশ অবশ্য এ দিন উল্টে দাবি করেন, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর আক্রান্ত হওয়ার প্রতিবাদে আমরা মূল ফটকের বাইরে প্রতিবাদ কর্মসূচি করি। তার পর আমাদের সমর্থকেরা যখন নিজেদের বিভাগে ফিরে যাচ্ছেন, এসএফআই তাঁদের আক্রমণ করে।”
আকাশের অভিযোগ, “সেখানে উপস্থিত ছিলেন এসএফআই নেতা সবুজ দাস, যাঁর পিএইচডি হয়ে গিয়েছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন অর্থাৎ বহিরাগত। তাঁর নেতৃত্বে এসএফআই এবং বামপন্থী কর্মচারী সংগঠনের লোকজন হামলা চালায়।”
এসএফআইয়ের প্রাক্তন নদিয়া জেলা সম্পাদক সবুজ দাস পাল্টা বলেন, “যিনি বলেছেন যে আমি এখন আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নই, মনে হয় তিনি কালীঘাটের পাঠশালায় পড়াশোনা করেন। আমি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-ছাত্র।”
তাঁর অভিযোগ, “এসএফআই সমর্থকেরা এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলেন এবং গল্প করছিলেন। সেই সময়ে আকাশ দাসের নেতৃত্বে টিএমসিপি এবং তৃণমূলের বহিরাগতেরা এসে তাঁদের আক্রমণ করে। আকাশ দাসের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢোকার কথাই নয়। তিনি নিজে একজন বহিরাগত।”
এসএফআইয়ের তরফে পুলিশে অভিযোগ করা হল না কেন?
সবুজের বক্তব্য, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইন আছে। আমরা অভিযোগ জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষ যদি পদক্ষেপ না করেন, এর পর প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাব।” কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাংশু রায় বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। পুরো বিষয়টির তদন্ত হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)