রোগী দেখছেন ফার্মাসিস্ট। নিজস্ব চিত্র
গ্রামের একে তাঁকে বার পাঁচেক জিজ্ঞাসার পরে খোঁজ একটা মিলল বটে, কিন্তু লতাপাতায় ঢাকা বাড়িটিকে আর যাই হোক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভাবার কোনও কারণ নেই। তবে ভাবতে হচ্ছে তাঁদের দেখে। চৈতন্যপুর আর তাকে ঘিরে থাকা গোটা পনেরো গ্রামের ভরসা সেই বাড়ির সামনে কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। তবে ‘তিনি’ আছেন। পেশায় ফার্মাসিস্ট, তবে মন দিয়ে দাঁত থেকে পেট, হাড়ের জখম থেকে ঘুসঘুসে জ্বর সব দেখেন তিনি। আশপাশের গাঁ গঞ্জ যাঁকে বলেন, ‘ডাক্তারবাবু’। এবং এও বড় সত্যি কথা, তিনি না থাকলে এটুকুও থাকত না সে গাঁয়ে!
বেলডাঙা ১ ব্লকের চৈতন্যপুর গ্রামে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘ডাক্তারে’র ঘরের সামনে লম্বা লাইন। রোগীরা জানেন না তিনি কিসের ডাক্তার। তাঁকে পরম ভরসায় তাঁরা বলছেন—‘ডাক্তারবাবু তিন দিন ধরে জ্বর। সঙ্গে কাশি, যন্ত্রণা।’ কেউ বলছেন, ‘গলায় ব্যথা, ঢোঁক গিলতে পারছি না!’ কারও বা তীব্র হাঁটুর যন্ত্রণা।
ডাক্তারের ভারী গলা, ‘নাম বলুন, বাড়ি কোথায়?’ জেনে নিয়ে টেবিলে সাজানো ওষুধ থেকে প্যারাসেটামল, রেনিটিডিন, ব্রুফেন, ভিটামিন ক্যাপসুল। পুরনো ক্ষত নিয়ে এলে বিটাডাইন।
তাঁকে সাহায্য করছেন, ইসরামুল শেখ। তিনি সরকারি কর্মী নন। হাসপাতাল দেখা শোনার জন্য রোগী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। আশপাশের গ্রামের লোকজন ডাকে ‘হাফ ডাক্তার’! ফার্মাসিস্টের নির্দেশ মতো রোগীদের ওষুধ দেন তিনি।
ফার্মাসিস্ট সমীর জানা অকপটেই বলছেন, ‘‘এক জন ডাক্তার ছিলেন। তিনি এক বছর ধরে নেই। কী করব, মানুষগুলো ভরসা করে এলে, ফিরিয়ে দেব!’’ সনাতন মণ্ডল বলেন, “আমার পেটের ব্যথা নিয়ে এসেছিলাম। ওষুধ পেলাম। কিন্তু কাজ হল না। শেষে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে বেলডাঙা গিয়ে ডাক্তার দেখালাম।”
মঞ্জুশ্রী হালদার বলছেন, “আমার মেয়ে ক্লাস সেভেনে পড়ে। তার ঋতুকালীন সমস্যা নিয়ে হাসপাতাল গিয়েছিলাম। ডাক্তার ফিরিয়ে দিলেন।’’ চৈতন্যপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়ত প্রধান রোজিনা বিবি বলেন, “জানি, এক জন ফার্মাসিস্টই ভরসা। কত বার আবেদন করব বলুন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy