Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

থমকে পর্যটন, ধাক্কা শহরের অর্থনীতিতে

যাকে দেখতে প্রতি দিন সারা বিশ্বের মানুষ আসতেন, সেই মহাপ্রভু  মন্দিরেরই যদি এই অবস্থা হয় তা হলে মন্দিরপ্রধান নবদ্বীপের বাকি মঠ-মন্দিরের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। প্রায় তিন মাস লকডাউনের পর জুন মাস থেকে খুলে গিয়েছে বিভিন্ন মঠমন্দিরের দরজা।

ছবি সংগৃহীত

ছবি সংগৃহীত

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২০ ০০:৫৮
Share: Save:

বৃহস্পতিবার, সাপ্তাহিক লকডাউনের প্রথম দিন। মহাপ্রভুর মন্দিরে সেবার দায়িত্ব ছিল প্রদীপ গোস্বামীর। সে দিন রাতে মন্দির বন্ধ করার আগে প্রণামী বাক্স খুলে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তাতে পড়েছে মাত্র একটি টাকা। গত ২৩ মার্চ থেকে টানা একানব্বই দিন বন্ধ থাকার পর ২৩ জুন রথযাত্রার দিন ফের ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হয় ধামেশ্বর মহাপ্রভু মন্দিরের দরজা। তার পর কেটে গিয়েছে প্রায় দেড় মাস। কিন্তু মন্দিরের অবস্থা তথৈবচ!

যাকে দেখতে প্রতি দিন সারা বিশ্বের মানুষ আসতেন, সেই মহাপ্রভু মন্দিরেরই যদি এই অবস্থা হয় তা হলে মন্দিরপ্রধান নবদ্বীপের বাকি মঠ-মন্দিরের অবস্থা সহজেই অনুমেয়। প্রায় তিন মাস লকডাউনের পর জুন মাস থেকে খুলে গিয়েছে বিভিন্ন মঠমন্দিরের দরজা। কিন্তু তাতে পর্যটননির্ভর নবদ্বীপের মুখ থুবড়ে পড়া স্থানীয় অর্থনীতির হাল আদৌ ফেরেনি। এ পাড়ে নবদ্বীপ এবং গঙ্গার পূর্ব পাড়ে মায়াপুর— কোথাওই দেখা নেই পর্যটকের। মায়াপুর ইস্কন মন্দিরের খ্যাতি এখন আন্তর্জাতিক। বছরভর লাখো মানুষের ভিড় হাঁসফাঁস মায়াপুরে এখন সন্ধ্যার গা ছমছম করে। আনলক পর্বে মায়াপুরে ইস্কন মন্দির খুলে দেওয়ার পরেও ভক্তরা সে ভাবে আসেননি। এখনও পর্যন্ত একদিনে পাঁচশোর বেশি দর্শনার্থী হয়নি বলে জানাচ্ছেন ইস্কন মায়াপুরের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস। তিনি বলেন “খুব অল্প মানুষ আসেন এখন। এমনিতে ট্রেন, বাস বা অন্যান্য যানবাহনে দলে দলে মানুষ আসার পরিস্থিতিই তৈরি হয়নি। বরং চার দিকে যে ভাবে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে মানুষের আসাটাও বিপজ্জনক।” তা ছাড়া ইস্কনের তরফে জানানো হয়েছে, মায়াপুরে এখনও অতিথি আবাস চালু হয়নি, পর্যটকদের প্রসাদের ব্যবস্থা নেই। কেবল বিনামূল্যে প্রসাদ বিতরণ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আদৌ ছন্দে ফেরেনি মায়াপুরও। “মহাপ্রভু মন্দিরের দৈনিক খরচ কম করে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা। এর বেশির ভাগই আসত ভক্তদের কাছ থেকে। মার্চ থেকে শুরু করে এখন জুলাইয়ের শেষ। সেবায়েতদের পক্ষে কী করে সম্ভব এই আর্থিক দায় বহন করা?” প্রশ্ন তোলেন নবদ্বীপ মহাপ্রভু মন্দিরের পরিচালন সমিতির কোষাধ্যক্ষ প্রদীপ গোস্বামী।

একই অবস্থা পোড়ামা মন্দিরেরও। মন্দিরের পুরোহিত মানিকলাল ভট্টাচার্য বলেন, “পোড়ামাতলায় একসঙ্গে তিনটি মন্দিরের পুজো করতে হয়। প্রতিদিন কয়েক হাজারের ধাক্কা। এখন টাকা ধার নিয়ে মন্দির চালাতে হচ্ছে।” এই সব মঠ-মন্দিরের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে নবদ্বীপের যাবতীয় ব্যবসা বাণিজ্য। এক সময়ে নবদ্বীপের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রন করত তাঁত। পরে তা পর্যটন প্রধান হয়ে ওঠে। মন্দির এবং উৎসব নির্ভর সেই পর্যটনে কার্যত অনির্দিষ্ট কালের জন্য দাঁড়ি টেনে দিয়েছে করোনা।

বিষয়টি প্রসঙ্গে নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দাসের ব্যাখ্যা, “নবদ্বীপের শতকরা আশি জনেরও বেশি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের মধ্যে বড়জোর দশ শতাংশ মানুষ এই পরিস্থিতিতে কিছু ব্যবসা করার সুযোগ পাচ্ছেন। যেমন মুদিখানা, স্টেশনারি বা ওষুধপত্র। বাকি বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর দিনের পর দিন বউনি হচ্ছে না। খুব খারাপ হাল নবদ্বীপের ব্যবসা বাণিজ্যের।”

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy