ফাইল চিত্র।
মাস কয়েক আগে হালের বলদটা বিক্রি করে হাজার সাতেক টাকা নিয়ে বাসের চেপে কেরলে রওনা দিয়েছিলেন ইসলামপুরের তসলিম আলী। আর ডোমকলের আলী হাসান মোল্লা বাবার কাঠা দশেক জমি বন্ধক রেখে গিয়েছিলেন সেই কেরলে। লকডাউনের পর কিছুটা কম হলেও পুরানো ঠিকানায় পৌঁছে জুটে গিয়েছিল কাজও, ফলে মাথা থেকে পরিবারের দুবেলা খাবার জোটানোর চিন্তাটা মুছে গিয়েছিল তাদের। কিন্তু আবারও করোনা পরিস্থিতি বাধ্য করছে তাদের ঘরে ফিরতে। কেউ কেউ ইতিমধ্যেই ঘরে ফিরে গিয়েছেন, কেউ আবার পথে, আর অনেকেই কেরল, গুজরাট, ইন্দোর শহর থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঘরে ফেরার। ফলে ইদের আগে নতুন করে পরিযায়ী শ্রমিকদের কপালে ভাঁজ পড়েছে। ভাঁজ পড়েছে তাদের পরিবারের কপালেও।
করোনার বাড়বাড়ন্ত হতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। আশঙ্কা করছিল আবারও হয়ত গতবারের মতোই পরিস্থিতি তৈরি হবে। আর শেষ পর্যন্ত তাদের আশঙ্কাই সত্যি হল। মাস কয়েক আগে কাজে ফেরা অনেক শ্রমিক ভোট-ইদের জন্য ঘরে না ফেরার চিন্তাভাবনা করলেও বাধ্য হয়েই ঘরে ফিরছেন। ডোমকলের কুপিলা গ্রামের সাইফুল ইসলাম বলেছেন, "অনেক কষ্টে হাজার কয় টাকা জোগাড় করে বাসে চেপে কেরলে গিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম বছরখানেক টানা সেখান থেকে কিছু টাকা জোগাড় করে তবেই ঘরে ফিরব। কিন্তু পরিস্থিতি যা তাতে আর সেখানে থাকা সম্ভব হলো না। কারণ গতবার যে পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছিল লকডাউনের মধ্যে তা জীবনে কখনও ভুলব না।’’
ওই গ্রামের মনিরুল ইসলাম রমজান মাসেই বিপাকে পড়েছিলেন ঘরে ফিরতে গিয়ে, ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে আটকে পড়েছিলেন প্রায় মাসখানেক। শেষ পর্যন্ত অনেক কষ্টে ঘরে ফিরতে পারলেও বেশিদিন ঘরে থাকা হয়নি তাঁর। কারণ বৃদ্ধ বাবা মা আর সন্তানদের পেটে টান পড়তেই দৌড়াতে হয়েছিল তাকে সেই ভিন রাজ্যে।
ডোমকলের সামসুদ্দিন সর্দার বলছেন, "গতবছর লকডাউনের পর ভেবেছিলাম ছেলেকে আর ভিন রাজ্যে ফিরতে দেবো না, কিন্তু এলাকায় কাজ না পেয়ে পরিস্থিতি এমন তৈরি হল যে দুবেলা খাবার জোটানোটাই কঠিন হয়ে পড়লো। শেষ পর্যন্ত কাঠা কয়েক জমি বন্ধক দিয়ে ছেলেকে আবারও পাঠিয়েছিলাম কাজের জন্য, কিন্তু যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে যে খরচা করে গিয়েছিল আর ফিরতে যা খরচা হবে সেই টাকাটাও জোগাড় হয়নি।" রানিনগরের বাবর আলি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে হাজার কয়েক টাকা ঋণ নিয়ে গিয়েছিলেন ভিন রাজ্যে, ভেবেছিলেন মাস ছয়েক কাজ করে টাকা পাঠিয়ে দেবেন সেই ঋণ শোধ করার জন্য। তাঁর দাবি, "ঋণশোধ তো দূরের কথা, এখন যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বাড়িতে পা রেখেই আবার মুদির দোকান থেকে সবজিওয়ালার কাছে ধার করে খেতে হবে।"
তবে গত বছর লকডাউনে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিক দের নিয়ে রাজনীতির কারবারীদের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল কে কতটা পাশে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু এবার ভোটের মরসুমে তাদের খোঁজ নেওয়ার মত কেউ নেই। ভোট নিয়ে নেতারা এতটাই ব্যস্ত যে পরিযায়ী শ্রমিকরা কি পরিস্থিতিতে আছে সেটা দেখার সময় নেই তাদের কাছে। যদিও পরিযায়ী শ্রমিক থেকে তাদের পরিবার বলছে, নেতাদের ওপর তাদের আর কোনও ভরসা নেই। গতবছরও তাদের নিয়ে কেবলমাত্র রাজনীতির খেলা হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy