জলাশয়ের ধারে দেহ। ফাইল চিত্র।
মাথা ফুঁড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল গুলি। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোও হয়েছিল। তার পর রাতের অন্ধকারে মৃতদেহ এনে জলাশয়ের ধারে ফেলে দেওয়া হয় বলে পুলিশের অনুমান। কিন্তু দু’দিন কেটে গেলেও শান্তিপুরের নবলা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল সদস্য প্রদীপ সরকার খুনে জড়িত কাউকেই ধরতে পারেনি পুলিশ।
মঙ্গলবার সকালে রানাঘাটের দোয়ারপাড়া এলাকায় এক জলাশয়ে প্রদীপের দেহ মেলে। তিনি আদতে ছিলেন শান্তিপুর থানার নবলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রমোদপল্লি এলাকার বাসিন্দা। রানাঘাট থানা এলাকার ধার ঘেঁষা জায়গা। প্রদীপের কাজকারবার বেশির ভাগ রানাঘাট এলাকাতেই ছড়িয়ে ছিল। কিন্তু গত বছর নবলায় এক পঞ্চায়েত সদস্যের ভাইকে কোপানোর ঘটনায় নাম জড়ানোর পরে তিনি এলাকা ছেড়ে সপরিবার কলকাতায় বাসা ভাড়া করে ছিলেন।
প্রদীপের স্ত্রী চঞ্চলা সরকারের দাবি, সোমবার সকালে উজ্জ্বল বিশ্বাস ও চাঁদ বিশ্বাস নামে দুই ঘনিষ্ঠ তাঁকে ফোন করে ডাকেন। পরিবারকে সে কথা জানিয়েই বেরোন প্রদীপ। তাঁর রানাঘাট স্টেশনে নামার কথা ছিল। সেখান থেকে চাঁদ এবং প্রদীপই তাকে মোটরবাইকে নিয়ে যাবেন বলে তিনি জানিয়ে যান। বিকেলে ফের বাড়িতে ফোন করে তিনি জানান, সে দিন আর কলকাতায় ফিরছেন না, পরের দিন ফিরবেন। ওই রাতে কোনও আস্তানায় ঘুমনোর সময়ে তাঁকে খুন করা হয় বলে চঞ্চলার অভিযোগ।
শান্তিপুর ও রানাঘাটের একাধিক সূত্রের দাবি, নবলার বাড়িতে না ফিরলেও প্রদীপ ইদানীং মাঝে-মধ্যে এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিলেন। সোমবার রাতেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে কয়েক জায়গায় তাঁকে দেখা গিয়েছে। এর মধ্যে হোটেল বা ধাবাও রয়েছে। সন্ধ্যায় ফুলিয়ার এক ধাবায় তাঁরা কয়েক জন খাওয়া-দাওয়া করেন। সেখানেই একটা ফোন আসে। তার পরেই তাঁরা তড়িঘড়ি বেরিয়ে যান। ওই রাতে তিনি কোথায় ছিলেন তা অবশ্য রাত পর্যন্ত জানা যায়নি।
খুনের তদন্তে নেমে পুলিশ জাতীয় সড়কের ধারের কিছু জায়গার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, প্রদীপকে অন্যত্র খুন করে জলাশয়ের ধারে এনে ফেলা হয়েছিল। তাঁর পরিবারের তরফে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে ‘তদন্তের স্বার্থে’ পুলিশ এর বেশি কিছু জানাতে চায়নি।
গত বছর মে মাসে প্রমোদপল্লিতে নবলা পঞ্চায়েতের এক সদস্যের ভাইকে কোপানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। আগে থেকেই প্রদীপের নানা কাজকর্মে এলাকার বাসিন্দারা বিরক্ত ছিলেন। তবে ভয়ে অনেকে চুপ করে থাকতেন। ওই ঘটনার পরে প্রদীপ এবং তার সঙ্গীদের বাড়িতে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর পরেই সপরিবার এলাকাছাড়া হন প্রদীপ। শান্তিপুর থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও তিনি দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন। পরে অবশ্য জামিন পান।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অনুমান, পুরনো শত্রুতার জেরে প্রদীপকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। সমাজবিরোধীরাও তাতে যুক্ত থাকতে পারে। আপাতত ওই এলাকায় বেশ কিছু প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। যেমন দীর্ঘদিন এলাকাছাড়া প্রদীপ কি ফেরার চেষ্টা করছিলেন? বছর কয়েক আগেও নিজের এলাকাতেই এক বার আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রদীপ। সে বার প্রাণে বেঁচে যান। পরিচিতেরা জানান, শক্তপোক্ত চেহারার প্রদীপ ছিলেন প্রচণ্ড বলশালী। দু’এক জনের পক্ষে তাঁকে কাবু করা কঠিন। ফলে খুনে বেশ কয়েক জন সরাসরি জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘনিষ্ঠদের দিয়ে ডেকে পাঠিয়ে খুন করা হয়েছে বলেও অনুমান করছেন পরিচিতদের অনেকেই। রাতে ঘুমনোর সময়ে তাঁকে গুলি করা হয়েছিল বলে প্রদীপের স্ত্রীর অনুমান। কাছ থেকে কারও মাথায় গুলি করলে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে দেহে অন্য চোট-আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা নয়। প্রদীপ বা তাঁর সঙ্গীরা মদ্যপান করেছিলেন কি না, তা-ও পুলিশ জানাতে পারেনি। যেমন জানাতে পারেনি, খুনটা
কোথায় হয়েছে।
আরও যে সব প্রশ্নের উত্তর এখনও অস্পষ্ট, তা হল চাঁদ এবং উজ্জ্বল ছাড়া আর কেউ কি সে দিন প্রদীপের সঙ্গে ছিল? থাকলে তারা কারা? ওই দুই ঘনিষ্ঠদের দিয়েই প্রদীপকে ডাকিয়ে আনা হয়েছিল, সন্দেহ নেই। অন্যথায় পুরনো শত্রুদের কাছে যেতে কেনই বা রাজি হবেন প্রদীপ? কিন্তু চাঁদ আর উজ্জ্বল কি খুনের সময়ে ঘটনাস্থলে ছিলেন? চঞ্চলা জানান, প্রদীপের মৃত্যুর খবর শোনার পরে চেষ্টা করেও তাঁরা চাঁদ বা উজ্জ্বলের মোবাইলে যোগাযোগ করতে পারেননি। পুলিশও জানায়, তাঁদের হদিস মিলছে না।
আপাতত এ রকম কিছু ‘মিসিং লিঙ্ক’-এরই সন্ধানে আছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy