Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

ইলিশে হাত দিলেই ছেঁকা

রবিবার ছুটির দিনের দুপুরের পাতে ইলিশের স্বাদ পেতে বহরমপুর স্বর্ণময়ী বাজারে ছিল ভিড়। তবে সেখানে ইলিশের দর, মধ্যবিত্তের সাধ্যের বাইরে।

দরাদরি: বহরমপুরের স্বর্ণময়ী বাজারে। নিজস্ব চিত্র

দরাদরি: বহরমপুরের স্বর্ণময়ী বাজারে। নিজস্ব চিত্র

ইন্দ্রাশিস বাগচী
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০১:৪১
Share: Save:

কথায় আছে ‘মাছে ভাতে বাঙালি’। আর সেই মাছ যদি হয় ইলিশ, তবে তো কথাই নেই।

তবে শ্রাবণ মাসের আর কয়েকটা দিন বাকি অথচ বৃষ্টির দেখা নেই। আবার বাংলাদেশে এখন ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে পদ্মার ইলিশের আমদানি নেই। একই ভাবে খোকা ইলিশ ধরার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে জেলা মৎস্য দফতরের। সব মিলিয়ে মধ্যবিত্ত বাঙালির কাছে ইলিশ এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। বহরমপুরের বাজারে যেটুকু ইলিশের দেখা মিলছে, তা হিমঘরে মজুত থাকা। তার স্বাদ ও গন্ধ নেই বললেই চলে।

রবিবার ছুটির দিনের দুপুরের পাতে ইলিশের স্বাদ পেতে বহরমপুর স্বর্ণময়ী বাজারে ছিল ভিড়। তবে সেখানে ইলিশের দর, মধ্যবিত্তের সাধ্যের বাইরে। যেখানে রুই, কাতলা বিকোচ্ছে কিলো প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে, সেখানে ইলিশের দাম কিলো প্রতি ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা। ওই দর শুনে এক জন ব্যঙ্গ করে বললেন, ‘‘ইলিশের দর শুনে মনে হচ্ছে ভাগীরথী থেকে ধরে সরাসরি নিয়ে আসা হয়েছে বাজারে! হিমঘরের পুরনো ইলিশের না আছে স্বাদ, না আছে গন্ধ! তাও কেন এত দর কিছুই বুঝছি না বাপু?’’ সে কথা শুনে এক মাছ বিক্রেতা মজা করে হাঁক পাড়েন—‘জলের দরে ফলের রস’। কানে যেতেই রানিনবাগানের সুপম মুখোপাধ্যায় ভেবেছিলেন, হয়তো দামটা কমই হবে। কাছে গিয়ে তাঁর ভুল ভাঙে। জানতে পারেন— আটশো গ্রাম থেকে এক কিলো ওজনের ইলিশের দর দেড় হাজার আর ৫০০-৬০০ গ্রামের ছোট ইলিশের দর ৮০০ টাকা কিলো প্রতি। সুপম বলছেন, ‘‘ইলিশের জোগান এ বছর তুলনামূলক ভাবে কম। বাজারে যে ইলিশ বিকোচ্ছে, তার বেশির ভাগ হিমঘর থেকে আমদানি। কিন্তু তার দরও আকাশছোঁয়া। বাড়িতে অতিথি আসবে বলেই ইলিশ কিনতে আসা। তবে স্বর্ণময়ী বাজারে এসে দর শুনে হতাশই হলাম।’’

ইলিশ ছাড়াও রুই, কাতলা, ইলিশ চিংড়ি, সিলভার কার্পের মতো মাছ বিক্রি হচ্ছে, যার দর তুলনামূলক ভাবে সাধারণের নাগালের মধ্যে রয়েছে। রুই কিলোপ্রতি ২০০ টাকা খয়রা কিলোপ্রতি ২০০, চিংড়ি ৩০০, সিলভার কার্প ১৫০, কাতলা কিলোপ্রতি ২০০ টাকা দরে বিকোচ্ছে। তবে সে সব মাছের সঙ্গে তো আর ইলিশের তুলনা করা যায় না। কারণ, স্বাদ ও গন্ধের দিক থেকে ইলিশের জুড়ি মেলা ভার। তবে দর শুনে ইলিশ কেনা থেকে পিছিয়ে এসেছেন অনেকেই। বাধ্য হয়ে ইলিশ বাদ দিয়ে অন্যান্য মাছ কিনে বাড়ি ফিরেছেন ইলিশপ্রেমীরা।

এ দিকে স্বর্ণময়ী বাজারে যদিও ইলিশে দেখা মিললেও বহরমপুরের অন্যান্য বাজারে তাও অমিল। বহরমপুরে পুরনো কান্দি বাসস্ট্যান্ড বাজার, কল্পনার মোড়ের বাজারে ইলিশ হন্যে হয়ে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। বহরমপুরের সুতির মাঠ এলাকার সঞ্জীব রায় বললেন, ‘‘ইলিশের এত দাম হবে বুঝতে পারিনি। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে এখন ইলিশ।’’

মাছ ব্যবসায়ী সেণ্টু হালদার জানান, ইলিশের এখন জোগান কম। তবে মানুষের চাহিদা রয়েছে। সেই কারণে দাম স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। অন্য এক মাছ ব্যবসায়ী স্বপন হালদার বলছেন, ‘‘মানুষ ইলিশ খেতে চাইলেও খেতে পারছেন না দামের কারণে। ফলে ইলিশপ্রেমীরাও এখন রুই-কাতলার উপরেই ভরসা রাখছেন।’’

কিন্তু ‘রুপোলী শস্য’-এর এই হাল কেন ? জেলা মৎস্য দফতরের সহ-মৎস্য অধিকর্তা অমলেন্দু বর্মন বলছেন, ‘‘বেশির ভাগ ইলিশই আসে দিঘা, ডায়মণ্ডহারবার, কাকদ্বীপ থেকে। সেই সব জায়গায় মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জোগান কম। যে ইলিশ বাজারে বিক্রি হচ্ছে, তা হিমঘরের।’’ চাহিদার সঙ্গে জোগানের সামঞ্জস্য না হওয়া পর্যন্ত ইলিশের দর চড়া থাকবে বলেও জানা গিয়েছে।

তত দিন পর্যন্ত অপেক্ষা!

অন্য বিষয়গুলি:

Food Hilsa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy