Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

গুজব-গুঁতো, জোর ধাক্কা মুরগির দামে

ভুয়ো বার্তা ভাইরাল হওয়া ইস্তক বহু লোক মুরগির মাংস খেতে ভয় পাচ্ছেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মনিরুল শেখ
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২০ ০১:৪৪
Share: Save:

মাসখানেক আগেও মুরগির মাংসের বাজার চাঙ্গা ছিল। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে করোনাভাইরাসের গুজবের ধাক্কায় ধরাশায়ী নদিয়ার মুরগির মাংসের ব্যবসা।

পোলট্রি মুরগির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র ও বড় ব্যবসায়ীদের আক্ষেপ, অপরিচিত কোনও ভাইরাসের উপদ্রব হলেই বলে দেওয়া হয়, পোলট্রি মুরগি থেকে রোগ ছড়াচ্ছে। চিনে করোনাভাইরাসে বহু মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পরেই গত কয়েক দিন ধরে অসুস্থ মুরগির ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, বিশেষত হোয়াটসঅ্যাপে। তার সঙ্গে লেখা হচ্ছে— নদিয়ায় এসে গিয়েছে নোভেল করোনাভাইরাস। মুরগিটি তাতেই আক্রান্ত। ভুয়ো চিকিৎসকদের নাম দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে, মুরগির মাংস থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে।

এই সব ভুয়ো বার্তা ভাইরাল হওয়া ইস্তক বহু লোক মুরগির মাংস খেতে ভয় পাচ্ছেন। দক্ষিণে কল্যাণী থেকে উত্তরে তেহট্ট, শান্তিপুর থেকে কালীগঞ্জ— ছবিটা কমবেশি একই। কল্যাণীর কাঁঠালতলা চৌরাস্তায় বহু বছর ধরে মুরগির মাংসের কারবার করে আসছেন অপু সরকার। তিনি জানান, মাস দেড়েক আগেও রোজ অন্তত এক কুইন্টাল করে মুরগির মাংস বিক্রি করতেন। আর এখন সেটা মেরেকেটে ৩০ কিলোয় দাঁড়িয়েছে। তা-ও আবার খরিদ্দারেরা ভাইরাস নিয়ে নানা আশঙ্কার কথা শুনিয়ে তার পর যেন অনিচ্ছায় মাংস কিনছেন।

এর ফলে বহু জায়গাতেই মাংসের দাম কার্যত তলানিতে চলে গিয়েছে। কাঁঠালতলায় কাটা মাংস বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০০ টাকা কেজি দরে। তবে ওই এলাকায় এমনিতেই অন্য জায়গার তুলনায় মুরগির মাংসের দর একটু কমই থাকে। কল্যাণীর ফার্ম মোড়ের মুরগির কারবারি অলোক মণ্ডলের আক্ষেপ, ‘‘মাস দেড়েক আগে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি হত। আচমকা এমন ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়েছে যে এক ধাক্কায় দাম কমে হয়েছে ১৩০ টাকা। আর, বিক্রি তো প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গিয়েছে।’’

কালীগঞ্জের নাড়ুগোপাল প্রামাণিক পড়েছেন রীতিমতো বেকায়দায়। তিনি জানান, গত বছরেও এই সময়ে এক কেজি মুরগির মাংসের দাম ছিল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। এখন সেটা ১২০ টাকায় নেমে এসেছে। তার পরেও লোকে খাচ্ছে না। কিছু দিন আগেও রোজ কমবেশি ৮০ কেজি মাংস বিক্রি হত। এখন ২০ কেজিও হচ্ছে না। মুরগির কারবারিরা জানান, পোলট্রি মুরগি খোলা জায়গা থেকে খাবার সংগ্রহ করে না। রীতিমতো ঘর বানিয়ে পর্যাপ্ত কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করে তাদের রাখতে হয়। মাস দেড়েকের মধ্যে খাওয়ার উপযুক্ত মুরগি তৈরি করতে দামি খাবারও দেওয়া হয়। কিন্তু যে ভাবে বাজারে মুরগির বিক্রি কমে গিয়েছে আর দামও তলানিতে এসে ঠেকেছে, তাতে মুরগিকে খাওয়ানোর খরচ ওঠাই দুষ্কর।

হরিণঘাটা সরকারি মুরগি খামারের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক উৎপল কর্মকার জানান, এই সময়ে মুরগির ফাউল পক্স, ইনক্লুসন বডি হেপাটাইটিস ও ম্যাটেক্স-এর মতো কিছু রোগ হতে পারে। ওই রকম কিছুতে আক্রান্ত মুরগির ছবিই গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে করোনাভাইরাস আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে। উৎপল বলেন, ‘‘নোভেল করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাখিদের মধ্যে কোনও কালেই দেখা যায়নি। এ নিয়ে আতঙ্ক অর্থহীন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Chicken
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy