সাগরদিঘির আনাচে কানাচে পড়ে থাকা নানা মূর্তি পাচারের সুযোগ নিতে তৎপর মূর্তি পাচারকারীরাও।
কোটি টাকায় একটি কালো পাথরের বিষ্ণুমূর্তি কেনার লোভ দেখিয়ে ৫ জনের একটি প্রত্ন সামগ্রী পাচারের চক্র ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি হাতে নাতে ধরা পড়ে রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশের হাতে। ওই থানারই জরুর পঞ্চায়েতের রমজানপুর গ্রামের এক বাড়িতে ওই পাথরের বিষ্ণুমুর্তিটি নিয়ে এসেছিল সাগরদিঘির গয়েশাবাদ থেকে দুই যুবক। রঘুনাথগঞ্জ থানার পুলিশ পরিচয় গোপন রেখে তাদের সঙ্গে মূর্তি কেনার কথাবার্তা চালায়। এক কোটি টাকায় দাম রফা হয়। সেই মূর্তিটি আনার জন্যই যান ছদ্মবেশে সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মীরা।
কষ্টি পাথরের মূর্তি ভেবেই তার চড়া দাম পাওয়ার আশায় তা পাচারের চেষ্টা করছিল তারা বাংলাদেশে।
উচ্চতা ২ ফুট এবং ওজন প্রায় ১২ কিলোগ্রাম। এই মূর্তিটির মাথায় একটি কীর্তিমুখ। তার দুপাশে দুটি অপ্সরা। দণ্ডায়মান বিষ্ণুমূর্তির চার হাতের ডান হাতে শঙ্খ ও নীচের হাতে কমণ্ডুল। বাঁ দিকের উপরের হাতে পদ্ম, নীচের হাতে গদা। দুপাশে দুই দণ্ডায়মান দেবী মূর্তি। পদতলে ৪টি ছোট ছোট মুর্তি। নিচে লেখা ‘কেসব’।
মূর্তিটি মহীপাল এলাকার। এই এলাকার গোবর্ধনডাঙা ও পাটকেলডাঙা অঞ্চলের গয়েশাবাদ, হুকারহাট, সিংহেশ্বরী গৌরীপুর, ভুঁইহাট, মহীপাল, বিনোদ এলাকায় খনন করতে গিয়ে অতীতে অজস্র প্রত্ন সামগ্রী ও বিভিন্ন ধরণের কালো পাথরের মূর্তি উদ্ধার হয়েছে।
গয়েশাবাদের পূর্ব নাম ভাদুরীহাট।
প্রত্ন গবেষকরা জানান, মহীপালের গোটা গ্রাম জুড়েই বিভিন্ন সময়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ প্রস্তর বিগ্রহ মিলেছে। লোকশ্রুতি, এখানেই ছিল প্রথম মহিপালের রাজধানী। দশম-একাদশ শতকে গয়েশাবাদ পাল রাজধানী মহীপাল নগরের অংশ ছিল বলে প্রসিদ্ধ। এখান থেকেই ক্যাপ্টেন লেয়ার্ড ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে পালিলিপিতে লেখা শিলালিপি, স্বর্ণমুদ্রা, বহু মৃৎপাত্র পান। একটি মুণ্ডহীন দ্বাদশভুজ মূর্তি এখান থেকেই উদ্ধার করে তিনি এশিয়াটিক সোসাইটির সংগ্রহশালায় অর্পণ করেন।
এলাকার বহু পরিবারের বাড়িতেই রয়েছে এরকম পাথরের বহু মূর্তি। পূর্বতন এক রাজ্য প্রত্ন অধিকর্তার মতে, পাল সেন রাজত্বের আধিপত্য ছিল গয়েশাবাদে। পুলিশের সন্দেহ, ওই এলাকা থেকেই চোরাই মূর্তিটি আনা হয়েছিল রঘুনাথগঞ্জের সীমান্তে। এদের সঙ্গে প্রত্ন সামগ্রীর বিদেশি কারবারিদেরযোগাযোগ আছে।কারণ বাইরের বাজারে চড়া দাম রয়েছে এই ধরণের ভারতীয় প্রত্ন সামগ্রীর।
গয়েশাবাদের চৌকাঠ খণ্ডটি সাগরদিঘি থানার পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় থানায়। সেটি বর্তমানে থানার চত্বরে রোদ বৃষ্টির মধ্যেই অযত্নে পড়ে রয়েছে। একই ভাবে রঘুনাথগঞ্জ থানায় রয়েছে উদ্ধার হওয়া বিষ্ণুমূর্তিটিও। জেলা প্রত্ন সংগ্রহশালার কিউরেটর মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায় চক্রবর্তী বলেন, “পুলিশের উচিত উদ্ধার হওয়া সমস্ত মূর্তি রাজ্য প্রত্ন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া। এই সব মূর্তির গবেষণা থেকেই নানা তথ্য মেলার সম্ভাবনা রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy