Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

১৫০ কিমি বাইকে নিজেই এসপি

গত এক বছরে পুলিশের লাগাতার চেষ্টায় ফল যে মেলেনি এমন নয়। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৪৫০ থেকে ৩০০’য় নেমেছে। তবে এর বেশির ভাগটাই মোটরবাইক দুর্ঘটনার শিকার।

মুকেশ কুমার। ফাইল ছবি।

মুকেশ কুমার। ফাইল ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:০০
Share: Save:

হেলমেট না থাকায় বাইক আরোহীকে রাস্তার পাশে দাঁড় করাতেই জামার কলার উল্টে এগিয়ে আসেন যুবন, ‘জানেন না বোধহয়, আমি চেয়ারম্যানের পাড়ার লোক!’

পঞ্চায়েত সদস্যের পাড়াতুতো ভাই, ভায়রাভাইয়ের ছোটকাকা পুরসভার কাউন্সিলর নিদেন পক্ষে ‘আমার ফুপা পুলিশে আছে, জেনেন!’— হেলমেট বাইক থেকে বেপরোয়া চালককে ধরলে, জেলার আনাচ কানাচে পুলিশকে এমন কেতাদুরস্ত প্রশ্নের মুখে বহুবার পড়তে হয়েছে। ‘ক্ষমতা’র সেই নির্লজ্জ চেহারাটা মুছতে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ সপ্তাহে পুলিশের চেষ্টার বিরাম ছিল না। তাতে কাজ হয়নি এমন নয়, তবে ঔদ্ধত্য মোছেনি। এ বার নিয়ম মেনে দ্বিচক্রযান চালানোর ব্যাপারে নিজেই এগিয়ে এসে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার নিজেই মোটরবাইক চালিয়ে সে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার।

গত এক বছরে পুলিশের লাগাতার চেষ্টায় ফল যে মেলেনি এমন নয়। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ৪৫০ থেকে ৩০০’য় নেমেছে। তবে এর বেশির ভাগটাই মোটরবাইক দুর্ঘটনার শিকার। ২০১৬ সাল থেকে তিন বছর ধরে সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ প্রচারের পরও এই সংখ্যা যে আশানুরূপ কমানো যায়নি তা স্বীকার করে নিচ্ছেন জেলার পুলিশ কর্তারা। এ বার তাই মরিয়া হয়ে মুকেশকে নিজেই পথে নামতে হয়েছে।

রবিবার বহরমপুর থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদ, জিয়াগঞ্জ, ভগবানগোলা, লালগোলা, রঘুনাথগঞ্জ, সাগরদিঘি, নবগ্রাম— দিনভর ৮টি থানার উপর দিয়ে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার পথ পেরোলেন মুকেশ ও তাঁর আড়াইশো পুলিশ সঙ্গী। ৮টি থানার কয়েকটি ঘন বসতি এলাকায় সচেতনতা সভাও করলেন পুলিশ সুপার। সেখানে একের পর বাইক দুর্ঘটনা নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেন তিনি।

মাত্র ৪ দিন আগেই ভাবতার কদমতলায় বাইকের তিন আরোহীর সঙ্গে ভ্যানের ধাক্কায় মারা যান দুই আরোহী। ১৫ অগস্ট রঘুনাথগঞ্জ ও সাগরদিঘিতে পর পর তিন তিনটি বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ৬ জন। ৩০ জুলাই বহরমপুর উত্তরপাড়া মোড়ে এক বাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক মহিলার। সেদিনই বিকেলে স্কুটি ও বাইকের সংঘর্ষে গুরুতর আহত হন ৫ জন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনায় হতাহতের কারণ মাথায় হেলমেট না থাকা। পুলিশ সুপার মুকেশ বলেন, ‘‘জেলার জনসংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে গাড়ি ও বাইকের সংখ্যাও। কিন্তু রাস্তা বাড়ানো যায়নি। বাড়েনি সচেতনতাও। সে জন্যই রাস্তায় নামা।’’

বাইক মিছিল খুব একটা অপরিচিত নয় জেলার মানুষের কাছে। তবে সে বাইক মিছিলে সকলের মাথাই থাকে খোলা। রাজনৈতিক দলের ঝান্ডা নিয়ে এমন কান্ডে অভ্যস্থ মানুষ। এ বার তেমনই বিস্তৃত মিছিল, তবে নিয়ম মেনে— অবাকই হয়েছেন জেলার মানুষ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy