Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

অশান্তি হলে করণীয় কী, ধন্দেই পুলিশ

পুলিশ জানে, কোনও ভাবেই এই মিছিলকে বেথুয়াডহরি পর্যন্ত যেতে দেওয়া যাবে না। তা হলেই বিপদ। বড় ধরনের গন্ডগোল বেধে যাওয়ার আশঙ্কা।

 সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির প্রতিবাদে মিছিল। ঝিটকিপোতার মদিনা নগরে শুক্রবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির প্রতিবাদে মিছিল। ঝিটকিপোতার মদিনা নগরে শুক্রবার। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর  শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:২০
Share: Save:

বিক্ষোভ দেখানোর কথা ছিল দুপুর ৩টে থেকে। সেই মতো প্রস্তুতও ছিল নাকাশিপাড়া থানার পুলিশ। কিন্তু সকাল থেকে আশপাশের গ্রাম থেকে মানুষ জমায়েত হতে শুরু করে নাগাদিবাজারে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে। খবর পেয়ে গেলেন ওসি রাজ সরকার। কিন্তু কোনও ভাবেই জমায়েত আটকানো গেল না। মিছিল এগিয়ে চলল বেথুয়াডহরির দিকে। অনেকের হাতে লাঠি। অনেকে রীতিমত উত্তেজিত।

তা হলে কি কোনও বড় গন্ডগোল অপেক্ষা করছে? প্রমাদ গুনছেন উপস্থিত পুলিশকর্মীরা।

পুলিশ জানে, কোনও ভাবেই এই মিছিলকে বেথুয়াডহরি পর্যন্ত যেতে দেওয়া যাবে না। তা হলেই বিপদ। বড় ধরনের গন্ডগোল বেধে যাওয়ার আশঙ্কা। আবার জোর করে আটকাতে গেলেও হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে। তা হলে উপায়? ওসি বুঝলেন, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। যেমন করেই হোক বুঝিয়ে-সুজিয়ে জনতাকে নিরস্ত করতে হবে। তিনি এগিয়ে গেলেন। জানিয়ে দিলেন, তিনিও হাঁটবেন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে। সেই মতো মিছিলের সামনে হাঁটতেও থাকলেন তিনি। আক হাঁটতে-হাঁটতেই কথা বলতে থাকলেন মিছিলে শামিল মানুষজনের সঙ্গে।

পুলিশের কথা শুনে কেউ রাজি হন, আবার কেউ বেঁকে বসেন। এ ভাবে প্রায় সাত কিলোমিটার হাঁটার পরে মিছিলের লোকজনকে রাজি করান গেল। বেথুয়াডহরি ঢোকার অনেক আগে থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া গেল মিছিল। শুধু মাত্র টায়ার পুড়িয়েই ক্ষোভ উগরে ফিরে গেল জনতা।

সেই মিছিলের সঙ্গে প্রায় সাত কিলোমিটার হাঁটা এক পুলিশকর্মী বলছেন, “পুরো শাঁখের করাতের মতো অবস্থা। এক দিকে কড়া অবস্থান নিলে সমালোচনা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ‘পুলিশ কেন এত নির্দয় হবে?’ আবার আমরা যদি বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করি, বলা হচ্ছে, ‘পুলিশ কেন চুপ করে আছে?’ কেন কড়া পদক্ষেপ করছে না। যে দিকেই যাও, বলা হবে, ‘পুলিশ-প্রশাসন ব্যর্থ’।

ঠিক কোন অবস্থান তা হলে নেবে পুলিশ? প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন জেলা পুলিশের এক ওসি। তাঁর দাবি, “আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে কোনও রকম অশান্তি না হয়। চেষ্টা করছি, ক্ষিপ্ত জনতাকে বুঝিয়ে নিরস্ত করতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি সেটা করা না যায়? যদি অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়, তখন? সেক্ষেত্রে তো কড়া অবস্থান নিতেই হবে।”

কিন্তু জেলার পুলিশকর্তা থেকে শুরু করে একেবারে নিচু স্তরের কর্মী, যাঁদের সরাসরি পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে তাঁরা সকলেই চাইছেন যত দূর সম্ভব কতা বলে পরিস্থিতি শান্ত করতে। করণ, প্রথমেই কড়া অবস্থান নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যেতে পারে। ক্ষিপ্ত হয়ে আরও বহু মানুষ রাস্তায় নেমে পড়তে পারে। শুধু তা-ই নয়। এই সুযোগে সাম্প্রদায়িক ভাবাবেগও উসকে তোলা হতে পারে।

জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “সমস্ত দিক বিচার করেই আমরা বুঝিয়ে-সুজিয়ে যতটা সম্ভব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। সেই মতো থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কোন ভাবেই অশান্তির পরিবেশ তৈরি হতে দেওয়া যাবে না।”

আগেই দেখা গিয়েছে, এক দিকে যখন পুলিশের গুলিতে লখনউ ও ম্যাঙ্গালুরুতে বিক্ষোভে শামিল হওয়া মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, বেঙ্গালুরুতে নিজে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করেছেন এক পুলিশকর্তা। কোন পথ নেবে নদিয়ার পুলিশ? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পুলিশের অন্দরে। বেশির ভাগ পুলিশকর্মীই চাইছেন, দ্বিতীয় রাস্তায় হাঁটতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে উত্তেজিত জনতাতে শান্ত না করা যায়? যদি তারা পুলিশকে আক্রমণ করে? যদি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়? যদি ক্রমশ আরও ছড়িয়ে পড়ে অশান্তি? জেলা পুলিশের এক অফিসার বলছেন, “আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে সেই পরিস্থিতি তৈরি না হয়। তেমন হলে পরিস্থিতিই বলে দেবে, কী করতে হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Violence Protest CAA Citizenship Amendment Act
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE