Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Maoist

মাওবাদীরা তৎপর ফের? ধন্দ পুলিশের

রাজ্যের জঙ্গলমহলে মাওবাদী তৎপরতা শুরুর সঙ্গেই, ২০০০ সাল নাগাদ নদিয়াতেও তাদের কার্যকলাপ শুরু হয়।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

সুস্মিত হালদার
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২১ ০৬:১৩
Share: Save:

পুলিশ মুখে যা-ই বলুক, নাকাশিপাড়ায় জোড়া খুনে মাওবাদী যোগের সম্ভাবনার কথা ওঠায় কপালে ভাঁজ পড়েছে জেলার পুলিশ কর্তাদের একাংশের। বছর দশেক আগেও নদিয়া জেলার এই সমস্ত এলাকায় মাওবাদী যথেষ্ট তৎপরতা ছিল। খুন-পাল্টা খুন হয়েছে। পুলিশের ধরপাকড়ের ফলে একটা সময়ের পরে সে সব বন্ধ হয়।

রাজ্যের জঙ্গলমহলে মাওবাদী তৎপরতা শুরুর সঙ্গেই, ২০০০ সাল নাগাদ নদিয়াতেও তাদের কার্যকলাপ শুরু হয়। কোতোয়ালি থানার চাঁদপুর, জলকর-মথুরাপুর, ভগবানপুরে বিলে মাছ চাষের প্রশ্নে এবং ধুবুলিয়া, নাকাশিপাড়া, চাপড়া, তেহট্টের একাধিক গ্রামে জলঙ্গির চরে জমির অধিকার নিয়ে তারা লড়াই শুরু করেছিল। থানারপাড়ার লালনগর, ভাজিলনগর, পণ্ডিতপুরেও তারা সক্রিয় হতে থাকে। কোথাও সিপিএম, কোথাও আরএসপি, আবার কোথাও সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ শুরু হয়। একের পর খুনের ঘটনাও ঘটে।

নাকাশিপাড়ার পাটিকাবাড়িতেই এক রাতে সস্ত্রীক খুন হয়েছিলেন সিপিএমের কৃষক সভার নেতা মৃণাল মণ্ডল। দিনদুপুরে রাস্তায় গুলি করা হয়েছিল সিপিএম নেতা আলম শেখকে। জলঙ্গি নদীর ধার বরাবর প্রত্যন্ত ও একদা প্রায় দুর্গম সব গ্রামে মাওবাদীদের সক্রিয়তা বাড়তে শুরু করেছিল। তার মধ্যে বাদবিল্ব, পেটোভাঙা, বানগড়িয়ার সঙ্গে এই ধাপারিয়াও ছিল অন্যতম। স্থানীয়দের পাশপাশি পুলিশেরও একটা অংশের দাবি, ওই সময় থেকেই ধাপারিয়ার তেঁতুল দফাদারেরা মাওবাদীদের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। তাদের সঙ্গে যুক্ত ছিল জোড়া খুনের জড়িত অভিযোগে ধৃত আকসার শেখও।

২০০৭ সালে কোতোয়ালি থানার ভুতপড়া এলাকায় এক রাতে টহলদার পুলিশের কাছ থেকে দুটো রাইফেল ছিনতাইের অভিযোগ উঠেছিল মাওবাদীদের বিরুদ্ধে। তার পরেই পুলিশ মাওবাদীদের ধরতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ২০০৮ সালের মাঝামাঝি নাগাদ এক দিনে জেলার প্রথম সারির প্রায় সমস্ত মাওবাদীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে মাওবাদীদের গ্রেফতারি চলতে থাকে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত চলে সেই ধরপাকড়। এই সময়ের মধ্যে পুলিশ যেমন বেশ কয়েকজন মাওবাদীকে গ্রেফতার করে, তেমনই অনেকে ঘাড় বাঁচাতে যোগ দেন শাসক দল তৃণমূলে। কেউ কেউ আবার বসেও যান। জেলার গোয়েন্দাদের একটা অংশের দাবি, ধাপারিয়ার বাসিন্দা দুই নিহত এবং খুনে জড়িত সন্দেহে ধৃত এক জন পরবর্তী কালে মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে তৃণমূলে যোগ দেন। কিন্তু এঁদের মধ্যে অন্তত এক জনের কাছে মাওবাদীদের দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্র রয়ে গিয়েছিল। তা নিয়েই গোলমাল বেধে থাকতে পারে।

জেলা পুলিশের একটি অংশের দাবি, আকসার মাওবাদীদের অস্ত্র ফেরত দিলেও তেঁতুল দেয়নি। তাঁকে বারবার চাপ দিয়েও কাজ না হওয়ায় খুনের ছক কষে মাওবাদীরা। তারাই আকসারকে দিয়ে তেঁতুলদের ডাকিয়ে আনে। যদিও এই দাবির পিছনে নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ কিছু নেই।

২০১৩ সালের পর থেকে মাওবাদীরা ক্রমশ নদিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্র থেকে হারিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশের হাতে ধরা পড়া মাওবাদীরা সম্প্রতি একে-একে ছাড়া পেতে শুরু করেছেন। বাদবিল্ব, বানগড়িয়া এলাকার কয়েকজন জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গ্রামে ফিরেছেন। যদিও তাঁরা পুরোপুরি মূলস্রোতে ফিরে গিয়েছেন বলে স্থানীয়দের দাবি।

জেলা পুলিশের একটি অংশের দাবি, দিন কয়েক আগে মুর্শিদাবাদের নওদা এলাকার বাসিন্দা এক মাওবাদী নেতা জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। স্থানীয় সূত্রের দাবি, রবিবার খুনের সময়ে স্থানীয়দের পাশাপাশি নওদা ও চাপড়া এলাকার লোকজনও উপস্থিত ছিল। তারা আগের রাতেই এলাকায় এসে উপস্থিত হয় এবং পূর্ব পরিকল্পনা মত তেঁতুলদের ডেকে এনে খুন করে। পুলিশ মাওবাদী যোগের কথা স্বীকার না করেলও একেবারে উড়িয়েও দিচ্ছে না। কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশ সুপার ঈশানী পাল বলেন, “আমরা সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখছি। তবে মাওবাদী যোগ নিয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনও আমরা পাইনি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Maoist nakashipara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy