আজ, সোমবার থেকে রাজ্য জুড়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। আর এ দিনই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শনিবারের ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে পৌঁছনো নিয়ে নানা আশঙ্কায় ভুগছেন অভিভাবকেরা। যদিও জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ জানিয়েছে, পরীক্ষা নির্বিঘ্ন করতে তারা প্রস্তুত। ধর্মঘটের ডাক দেওয়া ছাত্র সংগঠন ডিএসও এবং এসএফআইয়ের জেলা নেতৃত্ব অবশ্য জানান, পরীক্ষার্থীদের তাঁরা ধর্মঘটের আওতার বাইরে রেখেছেন।
যাদবপুরের ঘটনা নিয়ে রবিবার বিকেলে বহরমপুরে জোড়া মিছিল বেরোয়। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর গাড়ির উপরে ‘হামলার’ নিন্দায় তৃণমূলের মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি একটি মিছিল করে। তেমনই বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে ছাত্রদের ‘উপর দিয়ে গাড়ি চালানোর’ অভিযোগে মিছিল হয়েছে। আজ, সোমবার পথে বেরিয়ে পরীক্ষার্থীদের কোনও অসুবিধা হবে না তো! এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তাঁদের বাড়ির লোকজন।
যদিও মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার সুপার সূর্যপ্রতাপ যাদব তাঁদের উদ্দেশে আশ্বাসের সুরে বলেন, ‘‘ছাত্র ধর্মঘটের জেরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের কোনও সমস্যা হবে না। পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশ থাকবে। যানজট যাতে না হয় তার জন্য রাস্তায় অতিরিক্ত ট্র্যাফিক পুলিশও মোতায়েন থাকবে।’’
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) দীননারায়ণ ঘোষ বলেন, ‘‘মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা নির্বিঘ্নে করতে আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছি। ধর্মঘটের প্রভাব যাতে পরীক্ষার্থীদের উপরে না পড়ে তার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে ১৬৩ ধারা কার্যকর করা হবে।’’ প্রশাসন এ নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, পরীক্ষা চলার সময় পরীক্ষা কেন্দ্রের ১০০ মিটারের মধ্যে পাঁচ জন বা তার বেশি লোক জমায়েত করতে পারবেন না। এ ছাড়া, মাইক, লাউড স্পিকার ব্যবহার নিষিদ্ধ। ১ মার্চ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত মাইক এবং লাউড স্পিকার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরীক্ষার দিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পরীক্ষা কেন্দ্রের ৫০০ মিটারের মধ্যে ফোটোকপির দোকান খোলা রাখা যাবে না। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অমরকুমার শীল বলেন, ‘‘পরীক্ষা সুষ্ঠু ভাবে করতে পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের একাধিক বৈঠক হয়েছে। তাঁরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছেন। আমরা প্রস্তুত।’’ যদিও তাতে চিন্তা দূর হচ্ছে না অভিভাবকদের একাংশের। লালগোলার পলাশবাটীর মুকুল কুমার লালার মেয়ে এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবেন। মুকুল বলেন, ‘‘পরীক্ষার দিন ধর্মঘট ডাকলে অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন
হওয়া স্বাভাবিক।’’
যদিও ডিএসও-র মুর্শিদাবাদের জেলা সভাপতি সুরজিৎ দাস বলেন, ‘‘সোমবার জেলার বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট সফল করতে পিকেটিং করা হবে। তবে স্কুল, কলেজের পরীক্ষার্থীরা ধর্মঘটের বাইরে থাকবেন। উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা কলেজে সিমেস্টার দিতে বেরনো পরীক্ষার্থীদের কোনও অসুবিধা হবে না।’’ অন্য দিকে, এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক প্রীতম রুজ বলেন, ‘‘যাদবপুরের ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার জেলা জুড়ে মিছিল করেছি। সোমবার জেলায় আমরা শুধু মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধর্মঘট করব। তাই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হবে না।’’
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নাজমুল মিঞা (সানসাইন) বলেন, ‘‘পরীক্ষার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে আমাদের সংগঠনের কর্মীরা রাস্তায় থাকবেন। প্রয়োজনে তাঁরা পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছেও দেবেন।’’ জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, এ বার জেলার ১১৮টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ৪২,১৮৭ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেবেন। এঁদের মধ্যে ছাত্র ১৭,৫৮২ জন এবং ছাত্রী ২৪,৬০৫ জন। গত বারের তুলনায় এ বার ২২,০৭২ জন পরীক্ষার্থী কম।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)