Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Kheturi Fair Jiaganj

সোনার গৌরাঙ্গ দর্শন করতে মানুষের ঢল নামে জিয়াগঞ্জ শহরজুড়ে

অধুনা বাংলাদেশের অন্তর্গত রাজশাহী জেলার খেতুর গ্রাম হল বৈষ্ণবদের একটি শ্রীপাট বা পবিত্র ভূমি। এই গ্রামে খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে বৈষ্ণব মহাজন নরোত্তম ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন।

জিয়াগঞ্জ স্টেশন।

জিয়াগঞ্জ স্টেশন। —ছবি : সংগৃহীত

প্রদীপ সরকার
জিয়াগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ১০:০১
Share: Save:

প্রতি বছরের মতো এ বারেও শুরু হয়েছে খেতুরির মেলা। কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে জিয়াগঞ্জের বড় গোবিন্দ বাড়িতে বৈষ্ণব মহাজন নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি অনুসারে গত বুধবার থেকে শুরু হয়েছে এই মেলা।

স্থানীয়রা জানান, এই সময় মন্দির প্রাঙ্গণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী ও কীর্তনীয়াদের সমাবেশ ঘটে। সোনার গৌরাঙ্গ দর্শন করতে মানুষের ঢল নামে শহরে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যাবসায়ীরা, বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীর অস্থায়ী দোকান দেন এই মেলায়। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকেই মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে এই মেলায়।

অধুনা বাংলাদেশের অন্তর্গত রাজশাহী জেলার খেতুর গ্রাম হল বৈষ্ণবদের একটি শ্রীপাট বা পবিত্র ভূমি। এই গ্রামে খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে বৈষ্ণব মহাজন নরোত্তম ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন। এই খেতুরিতেই তৎকালীন বৈষ্ণবগণ একটি মহাসম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। বৈষ্ণব সাহিত্যে এটাই গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণের প্রথম মহাসম্মেলন বলে অভিহিত। এই ঘটনার স্মারক হিসেবে খেতুরি গ্রামে আজও মহোৎসব হয়ে থাকে।

কয়েক শতাব্দী ধরে কোজাগরী পূর্ণিমার পরবর্তী পঞ্চমী তিথি থেকে পাঁচ দিনব্যাপী এই মহোৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বৈষ্ণব মহাজন নরোত্তম ঠাকুর জিয়াগঞ্জের গাম্ভিলা শ্রীপাটে এই খেতুরির মেলার প্রবর্তন করেন। এই শ্রীপাট কয়েক শতাব্দী ধরে মণিপুরবাসীদের কাছেও ‘পবিত্র স্থান’ হিসেবে বিবেচিত। প্রতি বছর মণিপুর থেকে তীর্থযাত্রী এবং সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিরা জিয়াগঞ্জে আসেন এবং গাম্ভিলা শ্রীপাটে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন।

প্রয়াত অধ্যাপক শ্যামল রায়, তাঁর ‘তীর্থস্থানে জীবনযাত্রা’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন, ‘‘বৈষ্ণব ধর্ম ও সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত গাম্ভীলা শ্রীপাট বা বড় গোবিন্দ বাড়িতে রয়েছে বৈষ্ণব পদকর্তা ও ধর্মগুরু নরোত্তম দাস ঠাকুরের সমাধি। তাঁর পাশে সমাধিস্থ রয়েছেন মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র সিংহ ও নরোত্তম দাসের অন্যতম প্রধান শিষ্য গঙ্গানারায়ণ চক্রবর্তী।...তাই আজও জিয়াগঞ্জের বড় গোবিন্দ বাড়ি মণিপুরীদের কাছে গুরুবাড়ি বলে পরিচিত।’’

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা সমীর ঘোষ বলেন, “খেতুরি মহোৎসব থেকেই খেতুরি বা খেতুরের মেলা। কাল নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ১৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে এই মেলা প্রথম শুরু হয়। প্রথম সভামুখ্য ছিলেন নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর দ্বিতীয়া স্ত্রী জাহ্নবা দেবী। অবিভক্ত বঙ্গে রাজশাহীর খেতুরিতে প্রথম বৈষ্ণব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জিয়াগঞ্জ বড় গোবিন্দবাড়ি অন্যতম বৈষ্ণব আচার্য নরোত্তম দাস ঠাকুরের স্মৃতিধন্য। বড় গোবিন্দবাড়ির বৈষ্ণব চর্চার অন্যতম কেন্দ্র গাম্ভীলা শ্রীপাট। এখানে শুধু মেলাই নয়, পালাবদ্ধ রস, কীর্তন, গৌরাঙ্গ বিষয়ক পদাবলীও হয়।”

অন্য বিষয়গুলি:

Jiaganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy