শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে শুক্রবার বিকেল থেকে লাইন দিয়েও কুপন পেলেন না জেসমিনা বিবি। হতাশ তাঁর মা-ও। নিজস্ব চিত্র
তিন মাসের শিশুকন্যাকে নিয়ে আধার সংশোধনের জন্য রাত জেগে হরিহরপাড়া পোস্ট অফিসের সামনে একটি দোকানের ছাউনিতে ঠাঁই নিয়েছিলেন দক্ষিণ হরিহরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জেসমিনা বিবি। শনিবার নাম সংশোধনের জন্য কুপন না পেয়েই তিনি ঘরে ফেরেন তিনি। তাঁর আগে অন্তত এক হাজার জন লাইনে ছিলেন। তাঁদের কুপন দেওয়া হয়। রাত জেগে লাইন দিয়েও জেসমিনা কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছতেই পারেননি।
জেসমিনা বিবির আধার কার্ডে নাম ও জন্মতারিখ ভুল রয়েছে। হরিহরপাড়া পোস্ট অফিসে আধার সংশোধনের কাজ হবে জেনে শুক্রবার বিকেল থেকেই জেসমিনা বিবি তাঁর শিশুকন্যাকে নিয়ে লাইনে ইট পেতে একটি দোকান ঘরের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেন। সঙ্গে ছিলেন মা রেখা বিবিও। শনিবার ভোরের আলো ফুটতেই সন্তানকে কোলে নিয়ে লাইনে দাঁড়ান তাঁরা। কিন্তু কাউন্টার পর্যন্ত যেতে পারেননি। হতাশ জেসমিনা এ দিন বললেন, ‘‘শুনছি কাগজপত্রে ভুল থাকলে দেশে থাকতে পাওয়া যাবে না। স্বামী কেরলে কাজ করে। তাই নিজেই এই শীতের রাতে আধার কার্ডের নাম সংশোধন করতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু কুপন পেলাম না।’’ আধার সংশোধনের তারিখ আবার দেওয়া হলে, আবার লাইন দেবেন তিনি।
শনিবার থেকে আধার সংশোধনের জন্য নাম নথিভুক্তিকরণ শুরু হয়েছে হরিহরপাড়া সাব পোস্ট অফিসে। হরিহরপাড়ার পিন নম্বরের বারোটি ডাকঘর এলাকার বাসিন্দাদের নাম সংশোধনের জন্য শনিবার এক হাজার জনের নাম নথিভুক্ত করে কুপন দেওয়া হয়। তবে লাইন পড়ে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই। তিন দিন ধরে হরিহরপাড়া পোস্ট অফিসের সামনে রীতিমতো মেলার চেহারা নিয়েছে। এই সুযোগে কয়েক জন অস্থায়ী খাবারের দোকান খুলে বসেছেন। লুচি, আলুর দম, ঝালমুড়ি ছাড়াও দুপুরে মিলছে ভাত, ডাল, তরকারি। রাতে রুটি, তরকারি।
পোস্টমাস্টার বিজয়কৃষ্ণ দাস বলছেন, ‘‘কর্মীর অভাবেই আধার সংশোধনের কাজ শুরু করা যায়নি। শনিবার এক হাজার নাম আধার সংশোধনের জন্য নথিভুক্ত হয়েছে।’’
বেলডাঙাতেও বড় লাইন শনিবার সকালে রাস্তা অতিক্রম করে জনকল্যাণ মাঠে পৌঁছয়। তৈরি হয় যানজট। পরে বেলডাঙা থানার পুলিশ এসে সেই লাইন ঘুরিয়ে দেয়। লাইন বেলডাঙা পোস্ট অফিসের সামনে থেকে আড়াআড়ি ভাবে জনকল্যাণ মাঠে দাঁড়ায়। তবে লাইনে দাঁড়িয়ে অনেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দিনের পর দিন লাইনে দাঁড়িয়েও ফর্ম পাননি অনেকে। তাঁদের মধ্যে কদমা বিবি, নজরুল শেখ রয়েছেন। তবে পুলিশ থাকায় বড় সমস্যা হয়নি।
বেলডাঙা সাব পোস্ট অফিস জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে লিখিত ভাবে জানিয়েছে ১৮ জানুয়ারি আধার সংশোধনের ফর্ম দেওয়া হবে ১২০ জনকে। কিন্তু শনিবার ফর্ম দেওয়ার কথা থাকলেও লাইন শুরু হয়েছে বুধবার থেকে।
সেই লাইন বৃহস্পতিবার বড় আকার নেয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর লাইন আরও বড় হতে থাকে। এই তীব্র শীত উপেক্ষা করে রাতেও লাইন ছিল। লাইনে কে আগে কে পরে তা নিয়ে ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতি হয় বার তিনেক। আসে বেলডাঙা থানার বড় পুলিশ বাহিনী। অনেক রাত পর্যন্ত সেখানে পুলিশ ছিল।
শনিবার বেলা ১১টা নাগাদ দাঁড়িয়ে ছিলেন মির্জাপুরের কদমা বিবি। তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার থেকে আছি। কিন্তু শনিবার সকালে এসেও ফর্ম পেলাম না। তিনটে দিন ভোগান্তি সার হল।’’
নজরুল শেখ বলেন, “আমি শুক্রবার সকাল থেকে লাইনে ছিলাম। কিন্তু শনিবার বেলা সাড়ে দশটায় জানতে পারলাম আমার আগে ১২০ জন হয়ে গিয়েছে।” একশো কুড়ি জনকে ফর্ম দেওয়ার কথা থাকলেও লাইন অনেক বড় হচ্ছে। তাই সকলে পাচ্ছেন না। কেন এত লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিরা জানাচ্ছেন, কোথাও বাবার নামে ভুল। কোথাও ছেলের নামে ভুল। তাঁরা জানাচ্ছেন, ভুল সংশোধন না হলে এনআরসি-তে বাদ পড়ার আশঙ্কা। দেশ ছাড়াও ভয় রয়েছে তাঁদের।
তার সঙ্গে বছরের শুরুতে স্কুলে ভর্তি চলছে। অনেকে স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে নামের ভুলে সমস্যায় পড়েছেন। কাপাসডাঙার বাসিন্দা নজু শেখ বলেন, “ছেলেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করবো। সব জোগাড় হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আধার কার্ডে নামের বানান ভুল। তাই লাইন দিয়েছি। নাম দ্রুত ঠিক করতেই হবে।” তাই রাত জাগছেন তাঁর মতো অনেকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy