Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Kalyani

Crocodile: কুমির পাকড়ে চালান করে দিল জনতাই

ওই ট্রলারে ছিলেন দাবি করে এক যুবক জানান, দড়ির ফাঁস ছুড়ে কুমিরি ধরার পরে তাঁদের মনে হয়, সেটি বেশ দুর্বল।

এই সেই কুমির। কল্যাণীর স্যানালচরে। নিজস্ব চিত্র

এই সেই কুমির। কল্যাণীর স্যানালচরে। নিজস্ব চিত্র

সৌমিত্র সিকদার ,  অমিত মণ্ডল
কল্যাণী শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৫৮
Share: Save:

দুপুর গড়াচ্ছে বিকেলের দিকে।

শিবতলা ঘাটের কাছে অটো থেকে নামতেই এক স্কুলপড়ুয়া এগিয়ে এসে বলে, “কুমির দেখতে এসেছেন? কুমির তো নেই। কতগুলো লোক গিয়ে মাঝগঙ্গায় ছেড়ে দিয়ে এসেছে। কোথায় ছিল দেখবেন?”

কথা শেষ করেই নদীর পাড় ধরে আগে-আগে হাঁটতে শুরু করে ছেলেটা। একটু এগিয়ে জলের দিকে হাত তুলে দেখায়— “এই যে, এখানে।” রবিবার পর্যন্ত যেখানে ছিল কুমির দেখার ভিড়, সোমবার দুপুরে সেখানে সুনসান। তবে গত কয়েক দিনের মতো এ দিনও নদীপারে মুখে-মুখে ফিরছে সেই কুমির।

গত এক-দেড় মাস ধরে কখনও বল্লভপুর, কখনও নবদ্বীপ, কখনও ও পারে পূর্বস্থলীতে দেখা দিয়েছে কুমির। মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থেকে দক্ষিণে ভেসে নদিয়া পেরিয়ে উত্তর ২৪ পরগনাতেও উঁকি দিয়ে এসেছে সে। গত কয়েক দিন ধরে নদিয়ার কল্যাণী ব্লকে চাঁদুড়িয়া ২ পঞ্চায়েতের শিবতলা ঘাটের কাছে‌ দেখা যাচ্ছিল তাকে। বন দফতর সেটিকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেনি। ফলে কুমির এবং নদীপারের বাসিন্দা, দুই পক্ষের কাছেই ঝুঁকির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রবিবার কুমিরটিকে সান্যালচরের শিবতলা ঘাট থেকে বেশ কিছুটা নদীর ভিতরে ভাসচে দেখে দুই পারেই আতঙ্ক ছড়ায়। ও পারে হুগলির বলাগড় এলাকার খামারগাছি। স্থানীয় সূত্রের খবর, উভয় পারেরই কিছু লোকজন তাকে দূরে মাঝগঙ্গার স্রোতে ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। কেননা জলে কুমির থাকায় ওই সব এলাকার মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে যেতে পারছিলেন না। তার উপর কুমির দেখার হিড়িকে নানা এলাকার লোকজন এসে ভিড় জমাচ্ছিল। তাদের পায়ে-পায়ে আশপাশের খেত লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছিল। বন দফতরের কাছে সাহায্য চেয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ।

সান্যালচরের বাসিন্দাদের থেকে জানা যায়, রবিবার বেলা ১১টা নাগাদ দু’পারেরই কিছু মৎস্যজীবী, চাষি এবং অন্য কিছু লোকজন মিলে ট্রলার নিয়ে কুমিরটির কাছে যান। দড়ির ফাঁস ছুড়ে কুমিরের পায়ের নীচে আটকানো হয়। তার পর সেটিকে টেনে শিবতলা ঘাটে আনা হয়।

ওই ট্রলারে ছিলেন দাবি করে এক যুবক জানান, দড়ির ফাঁস ছুড়ে কুমিরি ধরার পরে তাঁদের মনে হয়, সেটি বেশ দুর্বল। সেটির কোনও ক্ষতি হলে তাঁরা বিপদে পড়তে পারেন ভেবে ট্রলারের লোকজন সেটিকে শিবতলা ঘাটে নিয়ে আসেন। ওই যুবকের কথায়, “ঘাটে এনে আমরা কুমিরটিকে ভাল করে দেখি, কোনও ক্ষত আছে কি না। তেমন কিছু দেখা যায়নি। এর পর আমরা কোনাকুনি দক্ষিণ দিকে প্রায় দুই কিলোমিটার নিয়ে গিয়ে গঙ্গার প্রায় মাঝ বরাবর জোরালো স্রোতে সেটিকে ছেড়ে দিই যাতে ভেসে চলে যেতে পারে।” ওই ট্রলারে ছিলেন জানিয়ে আরও এক জন দাবি করেন, “কুমিরটা দুর্বল ছিল বলেই আমরা সেটিকে সহজে ধরতে পেরেছি।”

চাঁদুড়িয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, “কুমিরের কারণে স্থানীয় চাষি ও মৎসজীবীদের ক্ষতি হচ্ছিল। শুনেছি কয়েক জন তাকে দূরে স্রোতে ছেড়ে দিয়ে এসেছে। তার পর থেকে বন দফতরের কর্মীদের দফায় দফায় নদীপাড়ে কুমির খুঁজতে আসতে দেখা যাচ্ছে।”

কল্যাণীর বিডিও দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রথম থেকেই বিষয়টি বন বিভাগের নজরে আনা হয়েছিল। এসাকার মানুষকে সচেতন করতে প্রচারও চালানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও এই ঘটনা ঘটল। আমরা জানার সঙ্গেই সঙ্গেই বন দফতরকে জানিয়েছি।” নদিয়া মুর্শিদাবাদের বিভাগীয় বনাধিকারিক প্রদীপ বাউড়ির দাবি, “আমরা সব সময়ে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় কুমিরটার উপরে নজর রাখছিলাম। মানুষকে বলব, তারা যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। কোনও তথ্য পেলে তারা যেন সঙ্গে সঙ্গে বন বিভাগে জানায়।”

অন্য বিষয়গুলি:

Kalyani Crocodile
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy