—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
এক সময় গোটা রাজ্যেই নাম ছিল অরঙ্গাবাদের বাজির। ঝাউ, কদম্ব, কালেন্ডার, ঝর্না, এয়ার ফাইটার, শিপ, কাদম্বিনী এমন হরেক রকম নামের সব বাজি অরঙ্গাবাদ থেকে যেত রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে। বিশেষ করে বিয়ে, অন্নপ্রাশন বা যে কোনও পুজো পার্বণে সব সম্প্রদায়ের মানুষ বাজির প্যাকেজের বায়না দিলে অরঙ্গাবাদের বাজি কারিগরেরাই বাজি নিয়ে হাজির হত বাড়িতে। দুপুর থেকেই বাঁশ বেঁধে সাজানো হত বাজি ফাটানোর মঞ্চ। সন্ধ্যা নামতেই বাজিতে আগুন দিতেন তাঁরাই। রাতের আধাঁরে বাজির রোশনাই দেখতে ভিড় জমত গ্রামের মানুষের। কখনও মালা বদলরত রমণী আকাশ থেকে নেমে আসত, কখনও বা সানাই সহ বাজনদারের মূর্তি ভেসে উঠত রাতের আকাশে।
সেই সব সোনার দিনের স্মৃতি এখনও এই গ্রামের ঘরে ঘরে রয়ে গিয়েছে। কিন্তু বদলে গিয়েছে বাজি।
পুলিশের উপর হামলাই কাল হয়েছিল বাজিগ্রামের কয়েক জনের। অরঙ্গাবাদ লাগোয়া পাশের এক গ্রামে দুই গোষ্ঠীর বোমাবাজি থামাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন সুতি থানার তৎকালীন ওসি সুরজিত সাধুখাঁ। আর তার জেরেই সুতির গ্রামগুলিতে বারুদের কারবার বন্ধ করতে উঠেপড়ে লাগে পুলিশ।
পুলিশি হানা বাড়ে গ্রামের পাশেই প্রাক্তন মন্ত্রী জাকির হোসেনের উপর বোমা হামলায়। গ্রামে হানা দেয় এনআইএ। ধরা পড়ে ইশা শেখ, দত্তপুকুরের বিস্ফোরণে মৃত জেরাত শেখের দাদা। পিংলা বিস্ফোরণে এই গ্রামেরই সুরজ শেখের সাজা হয়েছে ১৫ বছরের।
বন্ধ হয়ে যায় নতুন চাঁদরার বাজির কারবার। কিন্তু বাজির কারবার বন্ধ হলেও বাজির সঙ্গে নতুন চাঁদরার সম্পর্ক যে আজও ভাঙতে পারা যায়নি তা দত্তপুকুরের বিস্ফোরণ কাণ্ড চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আরও এক বার। আর এই অবৈধ সম্পর্কের পরিণতিতেই অকালে ফের ঝরে গেল ৬ জনের প্রাণ।
২০১৫ সা২০১৫ সালে পিংলা বিস্ফোরণে প্রাণ গিয়েছিল গ্রামেরই ১০ জনের। সে দিন ঘনঘন গ্রামে এসেছিলেন মন্ত্রী থেকে প্রশাসনিক কর্তারা ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়ে সে দিন কথা দিয়েছিল গ্রামের মানুষ আর বাজির সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না। কথা রাখেনি নতুন চাঁদরা।
ষাটোর্ধ বয়স এমন এক গ্রামবাসী বলছেন, ‘‘খুব ছোট থেকেই বাজির কারবার দেখে আসছি গ্রামে। বিয়ের মরসুমে ও পুজোর মাসে নাওয়া খাওয়ার সময় থাকত না কারওরই। বাড়ির শিশু, কিশোর, মেয়েরাও সমানে হাত লাগাত বাজি তৈরিতে। উঠোন ছিল না কোনও বাড়িতেই। তাই বাইরের রাস্তা জুড়ে রোদে দিনভর শুকোনো হত সে বাজি তালের পাটিতে। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত লেবেল সেঁটে তা প্যাকেটে ভরত মেয়েরা। এখন সেই বাজিই যেন কাল হয়েছে অরঙ্গাবাদবাসীর কাছে। বাজি বদলে গিয়েছে বোমায়। বারুদ ও মশলা এনে বোমা গড়ছে দুষ্কৃতীরা।বাজি গড়ে আগে ইনাম পেতাম, এখন বোমা গড়ে কেউ মানুষ মারছে,কেউ জেলে যাচ্ছে। বোমা যেন এখন কুটির শিল্প হয়ে উঠেছে আশপাশের কয়েকটি গ্রামের। বাজি তৈরির পাট উঠলেও বাজির সঙ্গে সম্পর্ক আজও শেষ হয়নি নতুন চাঁদরার।’’
বিড়ি বেঁধে মেলে ১০০ টাকা, বাজি বেঁধে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজ। যারা এই শ্রমিকদের নিয়ে যেত তারা মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। মোটা টাকার প্রলোভনেই নতুন চাঁদরা জুগিয়ে গেছে শ্রমিক রাজ্যের বাজি কারখানায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy