নবারুণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এনটিপিসি-র দগ্ধ কর্মীরা। শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
বিদ্যুৎ চুল্লির ছাই বেরনোর পাইপের মুখ আটকে গিয়েছিল। জ্বলন্ত ছাই উপচে বেরিয়ে অগ্নিদগ্ধ হলেন ফরাক্কা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুই কর্মী এবং সাত ঠিকা শ্রমিক।
শুক্রবার সকাল ৮টা নাগাদ ২০০ মেগাওয়াটের ১ নম্বর ইউনিটে এই দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের প্রথমে মুর্শিদাবাদেই এনটিপিসি-র নবারুণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুপুরের পর ছ’জনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও নুর নবি শেখ, কিপাজুদ্দিন শেখ এবং হাবিবুর শেখ তিন ঠিকা শ্রমিকের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের মালদহে সংস্থারই পুবারুণ হাসপাতালে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গত বছর ১৯ ডিসেম্বর রাতেও একটি ইউনিটের পাইপ থেকে উত্তপ্ত ছাই ছিটকে বেরিয়ে জখম হয়েছিলেন এনটিপিসি-র তিন জন অফিসার। ছাই বেরনোর পাইপ পরিষ্কার করতে গিয়েই দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এ বার ঠিক কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তা পরিষ্কার নয়। তবে কি ছাই বেরনোর পাইপ কি ঠিক সময়ে পরিষ্কার করা হয়নি? এনটিপিসি তা মানতে নারাজ। সংস্থার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (মানবসম্পদ) মিলন কুমারের দাবি, “নিরাপত্তার সব রকম ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। তা সত্ত্বেও কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লিতে কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরে একটা বড় পাইপ দিয়ে ছাই বের করে দেওয়া হয়। তার মধ্যে জ্বলন্ত কয়লাও মিশে থাকে। পাইপ এসে ঢোকে মাটি থেকে ২০-২৫ মিটার উচুঁতে ‘হপার’ নামে একটি বড় ড্রামে। সেখান থেকে চাপ দিয়ে ওই ছাই পাঠিয়ে দেওয়া হয় তুলনায় সরু একটি পাইপে। তা দিয়ে ছাই নীচে জ্বলে গিয়ে পড়ে।
ফরাক্কা ১ নম্বর ইউনিট পুরনো মডেলের হওয়ায় তাতে স্বয়ংক্রিয় ভাবে কয়লা ভরা যায় না। মজুর দিয়ে ভরাতে হয়। হপারের ঠিক নীচে কাজ করেন তাঁরা। এ দিন কাজ চলাকালীন হপারের হাওয়া চলাচলের ফুটো দিয়ে আগুন-ছাই বেরিয়ে এসে তাঁদের গায়ে পড়ে। এনটিপিসি সূত্রের খবর, হপার থেকে বেরনো সরু পাইপের মুখ আটকে যাওয়াতেই ছাই বেরোতে পারেনি। তাই উপচে পড়েছে।
ফরাক্কার ঠিকা শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অমর চক্রবর্তীর অভিযোগ, ১৯৮৫-৮৬ সালে চালু হওয়া ২০০ মেগাওয়াটের সবচেয়ে পুরনো তিনটি ইউনিট রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। সেগুলিতেই বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে। ৫০০ মেগাওয়াটের আধুনিক ইউনিটে দুর্ঘটনা হয় না।
কিন্তু পুরনো ইউনিটের নিরাপত্তা নিয়ে কর্তৃপক্ষকে বারবার সতর্ক করা হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তার ফলেই এই দুর্ঘটনা। তাঁর আক্ষেপ, হপারের কাছে কাজ করা শ্রমিক-কর্মীদের ‘হিট-প্রুফ জ্যাকেট’ দেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছিল। তাতে কেউ কর্ণপাত করেনি।
মিলনবাবু অবশ্য দাবি করেন, ওই শ্রমিকদের হেলমেট ও জুতো দেওয়া হয়। হিট-প্রুফ জ্যাকেটের প্রয়োজন নেই বলেই তা দেওয়া হয় না। রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক মতো হলে পাইপের মুখ আটকাল কী করে? কর্তার ব্যাখ্যা, অনেক সময়ে আর্দ্রতার কারণে ছাই দলা পাকিয়ে পাইপ আটকে যায়। এ ক্ষেত্রেও সম্ভবত তা-ই ঘটেছিল। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে তদন্ত চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy