Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Dengue

শিয়রে শমন,খোঁজ চলেছে রোল-অনের

বাজারে নতুন আমদানি অবশ্য ‘রোল অন’। কিছু দিন আগেও লোকে যে নাম শুনেই বুঝে নিত ঘামের গন্ধে সুবাস-প্রলেপ দেওয়া ডিওডোর‌্যান্ট, বা কব্জি-ঘষা আতর। সে-ও এখন তীব্রগন্ধী হয়ে উঠে মশা তাড়াচ্ছে। স্কুলমুখো বাচ্চার ইউনিফর্মে দু’ফোঁটা দিয়ে তবে বাপ-মায়ের শান্তি!

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪৬
Share: Save:

ধূপ কেনার ধুম পড়েছে! মন্দিরে-মাজারে চেরাগের পাশে জ্বালার আগরবাতি নয়। ছিপছিপে টান চেহারা নয়। জুঁই, বেল, চন্দনের সুবাসও নেই। বরং সাপের মতো পাকে-পাকে প্যাঁচ খেয়ে আছে বিষ। জ্বাললেই যা রক্তচক্ষু হয়ে উঠে নির্বংশ করবে মশাদের!

শুধুই কি ধূপ?

কার্তিকের শিরশিরে বাতাসে যখন চামড়ায় খড়ি ফুটতে শুরু করে, হঠাৎ করেই খোঁজ পড়ে কোল্ডক্রিমের। সেই বাতাস এসে গিয়েছে, শীত দুয়ারে। কিন্তু কোল্ডক্রিমের বদলে এখন ঢের টানাটানি অন্য ক্রিম নিয়ে। গ্ল্যাডিওলা বা সূর্যমুখীর স্নেহ নেই, গন্ধটা বেশ খানিকটা বিদঘুটে। মশা বাবাজি উড়ে এসে গায়ে বসতে গেলেই চিৎপাত!

বাজারে নতুন আমদানি অবশ্য ‘রোল অন’। কিছু দিন আগেও লোকে যে নাম শুনেই বুঝে নিত ঘামের গন্ধে সুবাস-প্রলেপ দেওয়া ডিওডোর‌্যান্ট, বা কব্জি-ঘষা আতর। সে-ও এখন তীব্রগন্ধী হয়ে উঠে মশা তাড়াচ্ছে। স্কুলমুখো বাচ্চার ইউনিফর্মে দু’ফোঁটা দিয়ে তবে বাপ-মায়ের শান্তি!

সৌজন্যে, ডেঙ্গি আর ম্যালেরিয়া।

ডেঙ্গির মশা আবার দিনদুপুরে হুল ফুটিয়ে সন্ধেয় বাগানে বেড়াতে যায়! বিকেল গড়ালেই দরজা-জানলা বন্ধ করে ধুনো দেওয়ার ফর্মুলা তাই কাজে দিচ্ছে না। রক্ষাকবচ সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে সর্বক্ষণ। দোকানে হামলে পড়ছে খদ্দের। দোকানিরা সাপ্লাই দিয়ে কুল পাচ্ছে না। আগেভাগে অর্ডার দিয়ে রাখতে হচ্ছে। বহরমপুরের খাগড়ায় স্টেশনারি দোকানি সুসময় ঘোষ থেকে কল্পনা মোড়ের অভিজিৎ সাহার এক দশা। অভিজিৎ বলছেন, “বাজারে যা টান, দু’সপ্তাহ ধরে কোম্পানি মালই দিতে পারছে না। অন্তত দেড়শো খদ্দেরকে খালি হাতে ফিরিয়েছি।” করিমপুরে রাকেশ সরকার, আর কৃষ্ণনগরের বৌবাজারে নারায়ণ কুণ্ডুর স্টেশনারি দোকান। হাসতে-হাসতে রাকেশ বলেন, ‘‘যা বাজার মশাই, কোম্পানি সাপ্লাই দিতে পারলে শুধু মশা মেরেই লাল হয়ে যেতাম!’’

এই সব ফ্যাক্টরি-মেড অস্ত্রশস্ত্রের সঙ্গেই আছে কুটির শিল্প— মশার আদি ও অকৃত্রিম অরি, মশারি। বহরমপুর জলট্যাঙ্কি মোড়ে মশারির কারবার রতন হালদার, ফিরোজ শেখেদের। ফিরোজ বলেন, ‘‘কয়েল-এসে যাওয়ায় মশারি বিক্রিতে টান পড়েছিল কয়েক বছর। এ বার সব উসুল করে দিয়েছে! ধোঁয়া-টোয়ায় অনেকে আর ভরসা রাখতে পারছেন না। মশারির দুর্গে ঢুকে তবেই শান্তি।’’ করিমপুরের মশারি ব্যবসায়ী সত্যরঞ্জন বিশ্বাসও বলছেন, ‘‘গত বারের তুলনায় মশারি বিক্রি বেড়েছে।’’ শুক্রবারই খাগড়ার সুদীপ্ত কর্মকার দোকানে ছুটেছিলেন মশারি কিনতে। তড়বড় করে বলেন, “আমরা তো বাবা বাড়িতে সকলেই মশারি টাঙিয়ে শুচ্ছি। একটা মশারি একটু ফুটো হয়ে গিয়েছে, তাই আর একটা কিনলাম। মশারির মার নেই!” যতক্ষণ না পৌষের হিম হাওয়া করাত চালিয়ে মশা-বাহিনীকে ফৌত করে, এই হিড়িক রোখে কে!

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Mosquitoes Roll-on
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy