থিকথিকে ভিড়। করোনার ভ্যাকসিন নিতে। কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ
করোনার আতঙ্ক আর তার পাশাপাশি করোনার ভ্যাকসিন বা টিকা মিলবে কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা— দুই সঙ্গী করে ভোরবেলা বা অনেকক্ষেত্রে ভোররাতে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।
এঁদের মধ্যে বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু দাঁড়ালেই যে টিকা পাবেন, সেই নিশ্চয়তাও নেই। হয়তো ভোর তিনটে থেকে লাইন দেওয়ার পর ভোর ৬টায় হাতে একটা টোকেন ধরিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘আজ আর হবে না। টিকা ফুরিয়ে গিয়েছে। অমুক দিন আবার আসুন!’ করোনাকালে এই অসহায়তা আর দুর্ভোগে দিশেহারা বহু মানুষ।
করিমপুর ১ ও ২ ব্লকে গড়ে প্রায় ৩৫০ লোক ভ্যাকসিন নিতে আসছেন। বৃদ্ধদের জন্য কোনও আলাদা ব্যবস্থা নেই। মরিয়া হয়ে তাঁরাও তপ্ত রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়াচ্ছেন। করিমপুরের প্রবীণ বাসিন্দা, স্বপন কুমার বিশ্বাস বললেন, ‘‘হাঁটতে চলতে অসুবিধা হয়। কিন্তু আমাদের কথা ভাবার সময় কার আছে? প্রাণে বাঁচতে লাঠিতে ভর দিয়ে লাইন দিচ্ছি।’’
নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েও ভ্যাকসিনের কুপন না পেয়ে ফিরতে হচ্ছিল অনেককে। এতে ক্ষোভ বাড়ছিল সাধারণ মানুষের। হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মীদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ছিলেন অপেক্ষমান মানুষ। দিনপাঁচেক বন্ধ থাকার গত ২৬ এপ্রিল থেকে নবদ্বীপ হাসপাতালে ফের ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হলেও কেবলমাত্র দ্বিতীয় ডোজ মিলছে। যাঁরা প্রথম ডোজ নেবেন তাঁরা পাচ্ছেন না। অপেক্ষাই সার।
ভোরবেলা থেকে তেহট্ট হাসপাতালে লাইন দিচ্ছেন মানুষ। বেশিরভাগই প্রবীণ। বৃহস্পতিবার মহকুমা হাসপাতালের ভ্যাকসিন কেন্দ্রে ১৫০ জনকে দেওয়া হয় কুপন। বাকিদের অন্য দিন আসতে বলা হয়। বিক্ষোভে ফেটে পড়েন দূর-দূরান্ত থেকে এসে সকাল থেকে লাইন দেওয়া মানুষ। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, ভ্যাকসিনের সংখ্যা কত বা কত জনকে দেওয়া যাবে সেটা প্রথমেই কেন জানানো হচ্ছে না? তা হলে তো মানুষ আর শুধুশুধু অপেক্ষা করেন না।
নাজিরপুর মৃগী থেকে এসেছিলেন পান্নালাল মণ্ডল। বলেন, ‘‘গাড়ি ভাড়া করে দ্বিতীয় ডোজ নিতে আসি। আমার সঙ্গে আরও প্রতিবেশীরা এসেছেন। সকাল বেলা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে। দুপুরে বলা হচ্ছে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না! দেশে কি কোনও নিয়মকানুন নেই?’’
কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রে টিকা নেওয়ার জন্য প্রতিদিনই লম্বা লাইন পড়ছে। তবে এখন শুধু কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে। মদনপুর, শিমুরালি, চাকদহ থেকে মানুষ ভোরবেলা থেকেই লাইন দিচ্ছেন। এমনকি ব্যারাকপুর থেকেও লোকে টিকা নিতে আসছেন। তাঁদের অপেক্ষার জন্য কোনও ছাউনির ব্যাবস্থা নেই। অনেকেই সঙ্গে হাতপাখা আনছেন।
হরিণঘাটা টিকাকেন্দ্রে বৃহস্পতিবারও টিকার অভাবে অনেকেই ফিরে গিয়েছেন। সেখানেও শুধুমাত্র কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। হরিণঘাটা গ্রামীণ হাসপাতালে টিকার অভাবে টিকাকরণ বন্ধ ঘোষণা হয়েছে আগামী দু’দিন।
শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে আবার ভোররাত থেকে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়েও টোকেন না-পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে বৃহস্পতিবার নোটিস দেওয়া হয়েছে যে, শুধুমাত্র ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy