Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

পার্থের কথা শুনে স্তম্ভিত শিক্ষক মহল

শিক্ষিকাদের স্ত্রীরোগ নিয়ে যে মন্তব্য মন্ত্রী করেছেন, তা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

স্কুলে বদলির ক্ষেত্রে অসুস্থ শিক্ষকেরা অগ্রাধিকার পাবেন বলে রাজ্য সরকার ঘোষণা করার পরেই নাকি শিক্ষকেরা বেশি ‘অসুস্থ’ হচ্ছেন— দাবি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।

কিন্তু বৃহস্পতিবার নজরুল মঞ্চে তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির অনুষ্ঠানে প্রায় একই নিঃশ্বাসে স্কুলের শিক্ষিকাদের স্ত্রীরোগ নিয়ে যে মন্তব্য মন্ত্রী করেছেন, তা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। স্কুলের শৌচালয় শিক্ষিকাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা উপযোগী, স্বাভাবিক ভাবে সেই প্রশ্নও উঠছে।

সভায় পার্থ বলেন, ‘‘শিক্ষিকারা এত বেশি স্ত্রীরোগে ভুগছেন যে আমি নিজেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি।’’ তাঁর এই মন্তব্য কার্যত কেউই হজম করতে পারছেন না। তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের অনেক নেতা ঘনিষ্ঠ মহলে বিরক্তি প্রকাশ করছেন। তাঁদের আক্ষেপ, “শিক্ষামন্ত্রীর মুখে এ কথা মোটেই রুচিসম্মত নয়।” বিরোধী সংগঠনের নেতারা উল্টে প্রশ্ন তুলছেন সরকার পোষিত স্কুলগুলির পরিকাঠামো নিয়ে।

নদিয়া জেলায় ২৬৪৪টি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১০ হাজার। তার ৪০-৪৫ শতাংশই শিক্ষিকা, যাঁদের অন্তত ৭০ শতাংশ আসেন ৩০ কিলোমিটার বা তার বেশি দূর থেকে। হাইস্কুল ৬৪১টি, শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ১১ হাজার ৬০০। তার মধ্যে শিক্ষিকা প্রায় ৪০ শতাংশ এবং তাঁদেরও প্রায় ৭৫ শতাংশ আসেন ৩০ কিলোমিটার বা তার বেশি দূর থেকে। অন্তত এমনটাই দাবি বিরোধীদের।

অ-তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, প্রচুর প্রাথমিক স্কুল আছে যেখানে শৌচাগার থাকলেও শিক্ষিকাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেই। আসা-যাওয়ার পথে বহু শিক্ষিকা বাধ্য হন স্টেশন বা বাসস্ট্যান্ডের অপরিচ্ছন্ন শৌচাগার ব্যবহার করতে। সব স্কুলে শৌচগারও নিয়মিত সাফাই করা হয় না। সেই কারণেই শিক্ষিকারা অনেকে নানা সংক্রামক স্ত্রীরোগে আক্রান্ত হন।

বাম প্রভাবিত এবিপিটিএ-র নদিয়া জেলা কমিটির সভাপতি অর্চনা বিশ্বাস বলেন, “ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই। এই কথা শিক্ষামন্ত্রী কেন, কোনও সভ্য মানুষের মুখে মানায় না। ওঁর মা শুনলেও লজ্জা পেতেন!” এবিপিটিএ-র জেলা কমিটির সম্পাদক রঞ্জিত মণ্ডলের অভিযোগ, “বহু স্কুলে এখনও শিক্ষিকাদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নেই। তাই বহু শিক্ষিকা রোগের শিকার হচ্ছেন। শিক্ষামন্ত্রী সেই পরিকাঠামো তৈরি না-করে মজা করছেন! ভাবতেও লজ্জা লাগে।”

বিজেপির শিক্ষা সেলের সদ্যগঠিত নদিয়া উত্তর সাংগনিক জেলা কমিটির ইনচার্জ বিশ্ববিজয় ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, “আমরা তৃণমূলের নেতামন্ত্রীদের মুখে মহিলাদের সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য শুনে অভ্যস্ত। তাপস পাল থেকে শুরু করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই রাজ্যের নাগরিক হিসাবে লজ্জা করছে।” যা পরিস্থিতি তাতে এমনকি তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতিও মন্ত্রীর মুখ বাঁচাতে এগিয়ে আসতে পারছে না। বরং সংগঠনের নদিয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ সিংহ গা-বাঁচিয়ে বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী ঠিক কী বলেছেন, সেটা ভাল করে না-জেনে কোনও মন্তব্য করব না।”

সাদা চোখে যা-ই দেখা যাক, পরিকাঠামোগত সমস্যার কথা স্বীকার করতে নারাজ জেলার মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শক খগেন্দ্রনাথ রায়। তাঁর দাবি, “আমাদের কাছে যা তথ্য রয়েছে, তাতে শিক্ষিকাদের জন্য আলাদা শৌচাগার নেই এমন কোনও স্কুল নেই। তবে সেগুলি রক্ষণাবেক্ষের দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষের। আমরা সবাইকেই বলি, শিক্ষিকাদের শৌচাগার যেন ঠিক থাকে।” নদিয়া জেলা প্রথামিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি জ্যোতিপ্রকাশ ঘোষ শুধু বলেন, “আমি সদ্য দায়িত্ব নিয়েছি। ভাল করে খোঁজ না নিয়ে কিছু বলতে পারব না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Chatterjee Teachers TMC Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy