ফাইল চিত্র।
এত দিন তবু কিচু রাখঢাক ছিল, রবিবার সেটাই প্রকাশ্যে চলে এল। রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে জেলার সমস্ত বিধায়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে জেলা পরিষদের সভাকক্ষে বৈঠক ডাকলেন কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সদ্যনিযুক্ত কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। কিন্তু সেই বৈঠকে এলেন না দলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা সাংসদ মহুয়া মৈত্র।
তৃণমূল সূত্রের দাবি, দিন কয়েক আগে পঞ্চায়েতের টাকা খরচ সংক্রান্ত নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ভিডিয়ো বার্তায় মহুয়ার কার্যত রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তোলা ভাল ভাবে নেননি রাজ্য নেতৃত্ব। কার্যত রাজ্য নেতৃত্বের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। দলে মহুয়া-বিরোধীদের দাবি, এ দিন বৈঠকে না এসে কার্যত রাজ্য নেতৃত্বকেই উপেক্ষা করলেন তিনি।
মহুয়া কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলায় দলের বিধায়কদের সঙ্গে, বিশেষ করে পুরনো নেতাদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। এ নিয়ে বর্ষীয়ান নেতারা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে একাধিক বার অভিযোগও করেছেন। এই বিরোধের জেরেই একে-একে বিধায়ক তথা জেলার গুরুত্বপূর্ণ পুরনো নেতারা একজোট হতে থাকেন। কিন্তু পূর্বতন অবিভক্ত সাংগঠনিক জেলার দীর্ঘদিনের দুই সভাপতি তথা বিধায়ক উজ্জ্বল বিশ্বাস ও গৌরীশঙ্কর দত্ত বা নদিয়ায় তৃণমূলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তথা নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁয়ের সহ্গে কোনও আলোচনা না করেই নতুন কমিটি গঠন করেন মহুয়া। সেখানে পুরনো নেতাদের বাদ দিয়ে কংগ্রেস থেকে আসা ‘নব্য তৃণমূল’ নেতাদের জায়গা দেওয়া হয়।
শুধু তা-ই নয়। উজ্জ্বল, গৌরী, কল্লোলের ঘনিষ্ঠ ব্লক সভাপতিদেরও পদ থেকে সরিয়ে নিজের অনুগামীদের সেই সব পদে বসান মহুয়া। তার আগেও চাপড়ার বিধায়ক রুকবানুর রহমান, কালীগঞ্জের বিধায়ক হাসানুজ্জামান এবং কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক অবনীমোহন জোয়ারদারদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ তৈরি হয়েছিল। এই জেলা কমিটি তৈরি ও ব্লক সভাপতিদের সরিয়ে দেওয়া নিয়ে প্রায় সমস্ত বিধায়কের সঙ্গে তাঁর বিরোধ চরম আকার নেয়। তৃণমূল সূত্রের খবর, এই সব বদল মেনে নেবেন না বলে বিধায়কেরা রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন। রাজ্য নেতারাও জানান, এই সব রদবদলের বিষয়ে তাঁরাও কিছু জানতেন না। এর পর থেকে নতুন কমিটির বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলতে থাকেন নেতাকর্মীরা।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য নেতৃত্ব জেলার পুরনো ও প্রাক্তন সভাপতিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার পর থেকেই জেলা নেতাদের একটা অংশ উজ্জ্বলকে কোর কমিটির চেয়ারম্যান করে মহুয়ার ডানা ছাঁটার সম্ভাবনার কথা বলছিলেন। মহুয়া-বিরোধীদের দাবি, শেষ পর্যন্ত তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই উজ্জ্বলকে চেয়ারম্যান করার কথা জানিয়ে দেন। তার পরেই এই বৈঠক ডাকা। কিন্তু মহুয়া বাদে তাঁর গড়া নতুন জেলা কমিটি বা তাঁর বসানো ব্লক সভাপতিদের কাউকে ডাকা হয়নি। কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা মহুয়ার গড়া জেলা কমিটির সহ-সভাপতি অসীম সাহাকেও ডাকা হয়নি। এ দিন তিনি দাবি করেন, “দলের অফিসিয়াল বৈঠক হলে জানতে পারতাম। কারা কী বিষয়ে বৈঠক ডেকেছেন, জানি না। তাই কোনও মন্তব্যও করব না।”
তৃণমূলের নদিয়া জেলা পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মতোই এই বৈঠক ডাকা হয়েছে জানিয়ে উজ্জ্বল বলেন, “জেলার বিধায়কদের পাশাপাশি সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। মহুয়াকে আসতে বলা হয়েছে। তিনি কেন আসেননি, বলতে পারব না। সম্ভবত করিমপুরে কোনও কর্মসূচিতে ছিলেন।” মহুয়াকে ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি, মোবাইল বার্তার উত্তরও দেননি। রাতে রাজীব বলেন, “নদিয়ায় দলের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে উজ্জ্বল বিশ্বাসের নেতৃত্বে এই কোর কমিটি গড়া হয়েছে। জেলা কমিটির বিষয় নয় বলে তাঁদের কাউকে ডাকা হয়নি। মহুয়া মৈত্র একটি পারিবারিক কারণে আসতে পারবেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন।“
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy