প্রতীকী ছবি।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হৃদরোগের সমস্যা দেখা দেওয়ার পরপরই তাঁকে কলকাতার একটি বড় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, “প্রাক্তন অধিনায়কের সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হওয়াতে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।” চিকিৎসকরা বলছেন, “হৃদরোগের ক্ষেত্রে সময়টাই বড় ফ্যাক্টর। একটু এদিক ওদিক হয়ে গেলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে যেতে পারে।” অথচ মুর্শিদাবাদ জেলার ২৬টি ব্লক হাসপাতাল তো দূর একজনও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নেই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও। এমনকি জেলার বেসরকারি হাসপাতালেও নেই কোনও স্থায়ী হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। আর মুর্শিদাবাদ থেকে দু’শো থেকে আড়াইশো কিলোমিটার দূরের কলকাতা যেতে সময় লাগে পাঁচ থেকে ছ’ঘণ্টা। ততক্ষণে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যূও ঘটতে পারে বলে চিকিৎসকরাই দাবি করেন।
মুর্শিদাবাদে হৃদরোগীর চিকিৎসার জন্য ভরসা সেই মেডিসিনের চিকিৎসক। আর হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ না থাকার জন্য জেলায় সরকারি বেসরকারি কোনও স্তরেই গড়ে ওঠেনি ক্যাথেরাইজেশন ল্যাবরেটরি বা ক্যাথ ল্যাব। ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত কোনও রোগীর ন্যূনতম শারীরিক পরীক্ষা করার কোনও উপায় নেই। তখন মুমুর্ষূ ওই রোগীর চিকিৎসার জন্য তার বাড়ির লোক ছুটে যান কলকাতায়।
কিন্তু রোগীকে যদি জেলাতেই রাখতে হয়, কলকাতা নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা না থাকে, তা হলে কী করণীয়? মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার অমিয় কুমার বেরা বলেন “হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ আমাদের নেই। হৃদরোগে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তিকে সিসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে মেডিসিন বিশেষজ্ঞরাই চিকিৎসা করেন।”
দিন কতক আগে একজন বিশেষজ্ঞকে অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ করা হয়েছে কোমর্বিডিটি আছে এমন রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য বলে অবশ্য সুপার জানিেয়ছেন। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, “হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তো হাতে গোনা। ফলে মেডিসিনের চিকিৎসকরাই তা সামলে দিতে পারেন। আর বিপজ্জনক রোগীর সংখ্যা মেরে কেটে চার থেকে পাঁচ শতাংশ। তাঁদের বাধ্য হয়ে কলকাতা যেতে হয়।”
অথচ বছর দশেক আগে মুর্শিদাবাদের মেডিক্যাল কলেজ হওয়ায় উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিলেন মুর্শিদাবাদবাসী। তবে, নামেই কলেজ ও হাসপাতাল, পরিষেবায় জেলা হাসপাতালেরও অধম বলে দাবি চিকিৎসা পরিষেবা নিতে আসা জেলা ও প্রতিবেশী নদিয়া, বীরভূমের মানুষজনের।
বছর শুরুর দিনই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন অনিতা বিশ্বাস নামে এক বৃদ্ধা। বহরমপুর পঞ্চাননতলার বাসিন্দা অনিতাকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে হন্যে হয়ে গিয়েছেন তাঁর আত্মীয়রা।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ না থাকার কারণে একের পর এক বেসরকারি হাসপাতালে ছুটে গিয়েছেন তাঁরা। অনিতার এক নিকটাত্মীয় বিদ্বান বিশ্বাস বলেন, “হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক পরীক্ষা অ্যাঞ্জিওগ্রাফিই তো হয় না মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে গেলে রোগ নির্ণয়ের জন্য সেখানে কোন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞই নেই।” মেডিসিনের চিকিৎসকরা ডাক্তারী পড়ুয়াদের কিডনী, হার্ট, ডায়ালিসিসের পাঠ দেওয়ার পাশাপাশি রোগীদেরও তাঁরাই চিকিৎসা করেন বলেন হাসপাতালের অধ্যক্ষা শর্মিলা মল্লিক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy