Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

রাতের ফুটবল বেঁধে দেয় উৎসবের সুর

পুজো-পরবের মতো ফুটবলও তাঁদের ফিরিয়ে আনে গ্রামের মাঠে। ঘরে ফেরার আনন্দে জড়িয়ে থাকে রাতভরের ফুটবল—রংচটা জার্সি, কাদা মাঠ আর জেনারেটরের তুমুল শব্দের আড়ালে সে এক শারদীয়া পার্বণ যেন। খোঁজ নিল আনন্দবাজার। মে-জুন থেকে শুরু হয়ে যায় স্কুল ও লিগের ফুটবল। পাশাপাশি চলে একদিনের নক আউট প্রতিযোগিতা। নৈশ ফুটবল শুরু হয় দুর্গাপুজো ও ইদুজ্জোহার আগে আগে। চলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

চলছে ফুটবল খেলা।— নিজস্ব চিত্র।

চলছে ফুটবল খেলা।— নিজস্ব চিত্র।

সুজাউদ্দিন ও কল্লোল প্রামাণিক
শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৭ ০৮:১০
Share: Save:

কথায় ছিল, বারো মাসে তেরো পার্বণ!

ছিল মানে?

কারণ, গত কয়েক বছরে নদিয়া-মুর্শিদাবাদের সীমান্তে পরবের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে চোদ্দো! আর সেই উৎসবের নাম নৈশ ফুটবল।

এন্তার মজা, বিস্তর লোক, দেদার ফূর্তি। আড়ে-বহরে, হইচই-উন্মাদনায় রাতের ফুটবল এখন গুনে গুনে গোল দিচ্ছে নাইট উৎসব, জলসা কিংবা বিচিত্রানুষ্ঠানকে।

মে-জুন থেকে শুরু হয়ে যায় স্কুল ও লিগের ফুটবল। পাশাপাশি চলে একদিনের নক আউট প্রতিযোগিতা। নৈশ ফুটবল শুরু হয় দুর্গাপুজো ও ইদুজ্জোহার আগে আগে। চলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

এই সময় সীমান্তের আটপৌরে খেলার মাঠগুলো সন্ধ্যার পর থেকেই কেমন অচেনা হয়ে পড়ে। গাঁ-গঞ্জে ব্যস্ততাও বেড়ে যায়। টোটো, রিকশা কিংবা গাড়িতে করে চলে জোর প্রচার। বিক্রি হয় টিকিট। জমিন, চেয়ার, ভিআইপি টিকিট বিক্রি করতে করতে গর্জে ওঠে মাইক, ‘মহিলাদের বসিবার ও সাইকেল রাখার সুব্যবস্থা আছে।’ বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে কমবেশি সব উদ্যোক্তারাই কলকাতা থেকে নিয়ে আসেন বিদেশি খেলোয়াড়। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, ইদ কিংবা দুর্গাপুজোর আগে আগে এই ফুটবলই বেঁধে দেয় উৎসবের সুর। এই সময় কর্মসূত্রে বাইরে থাকা লোকজন লম্বা ছুটি নিয়ে ঘরে ফেরেন। ফলে খেলা চালানোর ক্ষেত্রে লোকজনের অভাব হয় না। অভাব হয় না টাকারও। স্পনসর, বিজ্ঞাপন তো আছেই সেই সঙ্গে গ্রামের লোকজন ও ভিনরাজ্য বা ভিনদেশে কাজ করা ছেলেরা অকৃপণ ভাবে আর্থিক সহায্য করেন ।

কখনও আবার স্থানীয় উদ্যোক্তারা পিছিয়ে যেতে চাইলেও গোঁ ধরেন বাইরে থাকা ওই লোকজনেরাই। ডোমকলের জিৎপুর, ফরিদপুরে এমনটা বহু বার হয়েছে। জিৎপুরের আরেজ মণ্ডল ইন্দোরে কাজ করেন। ফোনে তিনি বলেন, ‘‘যে ভাবেই হোক, ফুটবলটা চালিয়ে যেতে হবে কর্তা। এটা গ্রামের ঐতিহ্য। আর ওই ফুটবলের টানেই তো ঘরে ফিরি আমরা।’’ শনিবার রাতে করিমপুরের গোয়াস অনির্বাণ ক্লাবের পরিচালনায় হয়ে গেল নৈশ ফুটবল প্রতিযোগিতা। এ বার আট বছরে পা দিল ওই খেলা। স্থানীয় আনন্দনগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের মোট ১৬টি দল যোগ দিয়েছিল। ফাইনালে বারবাকপুর ফুটবল ফ্যান ক্লাব ৫-০ গোলে মুর্শিদাবাদের কুশাবাড়িয়া ফুটবল দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। অনির্বাণ ক্লাবের সম্পাদক দীপক মজুমদার জানান, তাঁরা অবশ্য টিকিটের ব্যবস্থা করেন না। যে টাকা খরচ হয় তা তাঁরা গ্রামে চাঁদা তুলেই সংগ্রহ করেন। আর খেলোয়াড়দের খাওয়াদাওয়া? গ্রামের কনিকা রায় বলছেন, ‘‘সে দায়িত্ব তো আমাদের। খেলোয়াড়দের রাতের খাবারের জন্য এ বার প্রায় পঞ্চাশ কেজি আটার রুটি তৈরি করেছি। সঙ্গে তরকারি আর মিষ্টি। হেঁশেল সামলে খেলা দেখছি।’’

খেলার পাশাপাশি জমে উঠেছিল এক রাতের মেলাও। ফুচকা, বাদাম, তেলেভাজা—কী ছিল না! করিমপুর আঞ্চলিক ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক মাকু বিশ্বাস জানান, এই আকালেও সীমান্তে এখনও ফুটবলটা চলছে কী ভাবে জানেন? স্রেফ আবেগে ভর করে। ওটাই সব থেকে বড় সম্বল। যাঁরা নগদ টাকা দিতে পারেন না, তাঁরা তুলে দেন আধ শুকনো পাট, ধান, চাল। সব মিলিয়ে ফুটবলও সর্বজনীন উৎসব। যে উৎসবকে ঘিরে সীমান্তে খুশির বাঁধ ভাঙে। (চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

murshidabad Night football
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy