—নিজস্ব চিত্র।
রাজমিস্ত্রির কাজ করেন বাবা। মা টুকটাক কাজ করেন। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। সেই আর্থিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করতে করতে মাধ্যমিকে সফল মুর্শিদাবাদের নওদার তনভির সরকার। মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৪০।
সংসার চালাতে বাবা-মা বাড়িতে খুব বেশি থাকার সুযোগ পান না। ছেলের দিকে সে ভাবে নজরও দিতে পারেন না তাঁরা। কিন্তু তনভির তার লক্ষ্যে অবিচল। মাধ্যমিকে ৯১ শতাংশ নম্বর পাওয়া আসলে তনভিরের দৃঢ় মানসিকতার প্রকাশ, বলছেন তাঁর শিক্ষকরা।
মুর্শিদাবাদের নওদার গঙ্গাধারী এলাকায় তনভিরের বাড়ি। অবশ্য বাড়ি বললে বাড়িয়ে বলা হবে। এক কামরার টালির চালের ঝুপড়ি। সেখানে কোনও ক্রমে বসবাস। সেই ঝুপড়িই এখন তনভিরের সৌজন্যে চর্চায়। মুর্শিদাবাদের নওদা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রটি চায় চিকিৎসক হতে। সে জানে স্বপ্নপূরণে বাধা অনেক। কিন্তু স্বপ্ন দেখার সাহস ছাড়তে রাজি নয়।
তনভিরের বাবা জিয়াফুর সরকার জানান, তিনি যে কাজ করেন, সেটা নিয়মিত জোটে না। ছেলের উচ্চশিক্ষার ইচ্ছেপূরণে কী ভাবে হবে, তা নিয়ে তিনি সন্দিহান। ছোট থেকে পড়াশোনা করতে ভালবাসে ছেলে। তার ইচ্ছে পূরণ করতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন মা ফোলিনা বিবিও। ছেলের সাফল্যে চোখে জল মায়ের। তাঁর মনে পড়ে যায় গ্রামের বাড়িঘর ফেলে ছেলের পড়াশোনার জন্য কলকাতার ঝুপড়িতে আশ্রয় নেওয়ার কথা। স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে ফোলিনা বলেন, ‘‘এক জন নেতার (রাজনৈতিক) ছেলে সকালবেলা সেজেগুজে স্কুলে যাচ্ছিল। দেখে প্রশ্ন করেছিলাম, ওরা কোন স্কুলে পড়ে। জবাবের বদলে জুটেছিল বক্রোক্তি। বলেছিলেন, ‘ও সব খোঁজ নিয়ে তোরা কী করবি? খরচ কত জানিস? যা ছেলেকে পাড়ার খিচুড়ি স্কুলে ভর্তি করে দে। আমি বলে দিচ্ছি।’’ সেদিনের অপমান গিলে নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন ফোলিনা। ওই রাতেই সিদ্ধান্ত নেন কলকাতা যাবেন। যে ভাবে হোক পরিশ্রম করে ছেলেকে ভাল স্কুলে পড়াবেন।
স্বামী-স্ত্রী কোনও ক্রমে কাজ জুটিয়ে ফেলেন। ছেলেকে ভর্তি করেন মুর্শিদাবাদের ওই আবাসিক স্কুলে, যেখানে পড়তে যেতেন স্থানীয় নেতার ছেলেপুলে। পরে মেয়েকেও ভর্তি করেছেন জেলার নাম করা আবাসিক স্কুলে। ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ যত বৃদ্ধি পেয়েছে, সমানুপাতিক ভাবে পরিশ্রম বাড়িয়েছেন স্বামী-স্ত্রী। এখন ভোর ৫টায় কাজে বেরিয়ে রাত দশটায় ঘরে ফেরেন তনভিরের মা। ছেলেও সেই পরিশ্রমের যোগ্য সম্মান দিয়েছে। চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে এক নামী আবাসিক স্কুলে ভর্তি হয়েছে সে। টালিনার কথায়, ‘‘প্রথম ধাপ ছুঁয়ে দেখলাম আমরা। এখনও অনেক পথ বাকি। ছেলে চিকিৎসক হলেই লক্ষ্য পূরণ হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy