প্রতীকী চিত্র
শামশাবাদের টোল প্লাজার ধার থেকে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তরুণী পশু-চিকিৎসক শেষ ফোনটা তাঁর দিদিকে করেছিলেন। ওই রাতে অচেনা জায়গায় একা, বিপন্ন তরুণী দিদিকে বলেছিলেন, ‘‘ভয় লাগছে। আমার সঙ্গে কথা বলতে থাক।’’ যদিও খুব বেশিক্ষণ কথা বলার সময় তিনি পাননি। তারপরেই ঘটে যায় সেই মর্মান্তিক ঘটনা।
পথেঘাটে নানা কাজে বেরনো একা মেয়েদের এই ভয়ের পরিবেশ থেকে রক্ষা করতে উদ্যোগী হল নবদ্বীপের পুলিশ। শনিবার থেকে চালু করা হল মেয়েদের জন্য একটি হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ। যে গ্রুপের সদস্যরা পথেঘাটে যে কোনও অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বিপন্ন বোধ করলেই ওই গ্রুপে তা জানাবেন। তিনি নবদ্বীপের কোথায় আছেন বুঝে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কাছে পৌঁছবে পুলিশি সহায়তা।
‘নট অ্যালোন’ নামের ওই গ্রুপের ভাবনা নবদ্বীপ থানার আইসি কল্লোলকুমার ঘোষের। মাসখানেক আগের একটি ছোট্ট ঘটনা থেকেই তাঁর এই ভাবনা। সে দিন রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ নবদ্বীপ ঢপওয়ালির মোড় থেকে রামসীতা পাড়ার দিকে যাওয়ার সময় দুই বাইক আরোহী এক তরুণীর কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে। তিনি সে সময় কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। কিছু দূরে তাঁর মাও ছিলেন। ঘটনার পর দিন তাঁরা বিষয়টি পুলিশের গোচরে আনেন। যদিও তখন পুলিশের বিশেষ কিছু করার ছিল না। অবশ্য এমন ঘটনা শহরে নতুন কিছু নয়। বাইক চড়ে হার বা মোবাইল ছিনতাইয়ের ভুরি ভুরি নজির আছে নবদ্বীপে।
নবদ্বীপের আই সি বলেন, “ওই দিনের ঘটনা থেকে দু’টো বিষয় আমার মনে হয়েছিল। এক, পথেঘাটে নানা কাজে বার হওয়া মহিলাদের সব চেয়ে বড় সমস্যা হল কোনও বিপদআপদ ঘটলে তাৎক্ষণিক ভাবে সাহায্যের জন্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁরা কাউকে পান না। পরে অনেক লোকজন, পুলিশ গেলেও ততক্ষণে বিপদ ঘটে যায়।’’ তিনি জানান, যদি এমন একটা হোয়াটস-অ্যাপ গ্রুপ থাকে যেখানে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ঘটনা কোথায় ঘটছে জানতে পারে, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। পাশাপাশি, যিনি সমস্যায় পড়েছেন তিনি এটুকু নিশ্চিত হয়ে রাস্তায় বেরতে পারেন যে পুলিশের সঙ্গে তাঁর সব সময় যোগাযোগ থাকছে। কোনও কিছু ঘটলেই সঙ্গে সঙ্গে সাহায্য আসবে।
পুলিশের মতে বহু ক্ষেত্রে ঘটনাগুলো তাদের গোচরেই আসে না। হয়ত শেষপর্যন্ত তেমন কিছু ঘটেনি, তাই আর পুলিশের ঝামেলায় যেতে চান না অনেকেই। এটা আরও মারাত্মক। কেননা যারা ওই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তারা এতে বেশি করে প্রশ্রয় পেয়ে যায়। থানায় যেতে না চাওয়ার সেই মানসিকতা বদলাতে এই গ্রুপ ইতিবাচক ভূমিকা নেবে বলে পুলিশের অনুমান।
শনিবার বিকেলে ঘরোয়া এক অনুষ্ঠানে এই গ্রুপের কার্যকারিতার কথা তুলে ধরা হয়। উপস্থিত ছিলেন নবদ্বীপ শহরের বাসিন্দা বিভিন্ন পেশার মেয়েরা। এমন একটি গ্রুপের কথা জেনে ভীষণ খুশি সকলেই। নাট্যকর্মী এবং পেশায় শিক্ষিকা সানন্দা ঘোষ বলেন, “এমন কিছুরই অপেক্ষায় ছিলাম। আশ্বস্ত লাগছে। চাকরি বা নাটকের প্রয়োজনে নিয়মিত বাইরে বেরোতে হয়। এখন নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারব।”
‘নট অ্যালোনে’র সদস্য সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। জানা গিয়েছে গ্রুপের সাড়া কেমন, তা দেখে পরে একটি অ্যাপের পরিকল্পনাও মাথায় আছে পুলিশ কর্তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy