—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ডলফিন বাঁচাতে এ বারে কড়া অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। এত দিন সচেতনতামূলক প্রচারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। তাতে সাধারণ মৎস্যজীবীদের মধ্যে অনেকটা কাজ হলেও দুষ্কৃতীদের হাত থেকে ডলফিনদের রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। জলে ইলেকট্রিক শক দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে ভাগীরথী নদীতে মাছের সঙ্কট বাড়ছে, তেমনই হত্যা হচ্ছে ডলফিনের।
বিষয়টি নিয়ে খবর হতেই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। মৎস্য দফতর থেকে শুরু করে সেচ, পরিবেশ ও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক। সেখানেই স্থানীয় পুলিশকে আরও বেশি করে সতর্ক থাকার পাশাপাশি ডলফিন হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সমস্ত ধরণের আইনি ব্যবস্থার সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি নদিয়ার নয়াচর-চর বালিয়াডাঙা এলাকায় ভাগীরথী নদীতে একের পর শিশু থেকে প্রাপ্ত বয়ষ্ক থেকে শিশু ডলফিনের মৃতদেহ ভেসে উঠতে থাকায় ডলফিনরা কতটা অসুরক্ষিত তা আবারও প্রমাণ হতে থাকে। স্থানীয়দের দাবি, এলাকার বেশ কিছু দুষ্কৃতী বিদ্যুৎবাহী লম্বা লম্বা লোহার রড ব্যবহার করে মাছ শিকার করে। একাধিক বড় বড় ব্যাটারি ও স্টেবিলাইজার ব্যবহার করা হয়। জলের ভিতরে বিদ্যুতের শক খেয়ে বড় বড় মাছ লাফিয়ে উঠলে বা ভেসে উঠলে জাল দিয়ে সেই সমস্ত মাছ ধরা হয় বলে স্থানীয়েরা জানান।
এই কারণে শুধু যে বড় বড় মাছ ভেসে উঠছে তাই নয়, মৃত্যু হচ্ছে প্রচুর সংখ্যক ছোট মাছের। সেই সঙ্গে মারা পড়ছে ডলফিন। স্থানীয় সাধারণ মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, এ ভাবে মাছ ধরা বন্ধ করতে না পারলে শুধু ডলফিনই নয়, অদূর ভবিষ্যতে কার্যত মাছের আকাল দেখা দেবে ভাগীরথীতে। যে কারণে নদীর দুই তীরের বাসিন্দাদের ভিতর থেকে প্রশাসনের কাছে আরও সক্রিয় ও কড়া পদক্ষেপের দাবি উঠতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতরের কর্তাদের নিয়ে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ বৈঠকও করেছে জেলা প্রশাসন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, জুলাই, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে তিনটি শিশু ও একটি পূর্ণবয়ষ্ক ডলফিনের দেহ উদ্ধার হয়। ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি এক সঙ্গে দু’টি ডলফিনের বাচ্চার দেহ উদ্ধার হয় বলে স্থানীয়দের দাবি। যাদের বয়স ৯ থেকে ১০ মাসের মধ্যে বলে জানা গিয়েছে। কালীগঞ্জের চর বালিয়াডাঙা দ্বীপ-নয়াচর এলাকা প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে ওঠা ডলফিনদের বাসস্থান ও প্রজনন ক্ষেত্রটিকে রক্ষা করতে উদ্যোগী হয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার ইন্ডিয়া’। সম্প্রতি চর বালিয়াডাঙা দ্বীপকে ‘ঐতিহ্যমন্ডিত জীব বৈচিত্র পার্ক’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ভাগীরথীর দুই তীরের গ্রামে তৈরি করা হয়েছে ‘প্রকৃতি বন্ধু’-এর মত স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী।
ধারাবাহিক প্রচারের ফলে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সচেতন করা গেলেও ইলেকট্রিক শক দিয়ে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্ত দুষ্কৃতীদের আটকানো যায়নি। এ বারে তাই কড়া পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। স্থানীয় কালীগঞ্জ থানার পুলিশকে বলা হয়েছে, এই এলাকায় তাদের ‘সোর্স’ আরও সক্রিয় করতে। কে বা কারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত তা চিহ্নিত করতে। সেই সঙ্গে যারা এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে তাদেরকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি পরিবেশ আইন, বন্যপ্রাণী আইন ও মৎস্যআইনের মত কড়া আইন প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে।
সেই সঙ্গে মহকুমাশাসককে ওই এলাকায় ১৬৩ বিএনএস ধারা প্রয়োগ করে সমস্ত ধরণের বেআইনি কাজ নিষিদ্ধ করার নোটিস জারি করতে বলা হয়েছে। সেই নোটিস বিভিন্ন এলাকায় টাঙিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি পড়ুয়াদের সচেতন করার জন্য নির্দিষ্ট প্রকল্পের কথাও ভাবা হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রলয় রায়চৌধুরী বলেন, “যেমন করেই হোক ডলফিনগুলো রক্ষা করতে হবে। দেখতে হবে ছোট ছোট মাছ মারা না পড়ে। তার জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ করার প্রয়োজন সেটাই করতে হবে। সেই মত পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy