বিক্ষোভে উত্তাল। ফাইল চিত্র।
লোকসভার পরে গত বুধবার রাজ্যসভাতেও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার এই বিলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে ‘দ্য ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ’ (আইইউএমএল)। তারা দাবি করেছে, এই বিল বিভেদমূলক ও অসাংবিধানিক। ভারতের সংবিধান প্রত্যেকের সমানাধিকারের কথা বলে, যা এই বিলে মানা হয়নি।
কিন্তু তাতেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না জেলার মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা। নতুন করে এনআরসি-ভীতিতে ভুগতে শুরু করেছেন নদিয়া জেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। শিক্ষিত যুবকেরা যেমন সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব, ফের নতুন করে নথি জোগাড়ের তোড়জোড় শুরু করেছেন অনেকেই। তাঁদের অনেকেরই আক্ষেপ, আসলে এই বিল আনার মূল লক্ষ্যই হল মুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রমাণের লাইনে দাঁড় করানো। ভয়ের পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে ক্ষোভও। বুধবারই অনেকে মত দিয়েছিলেন, এ ভাবে ধর্মের ভিত্তিতে কোনও বিল আনা যায় না। তা সমতার অধিকারের পরিপন্থী।
রাজ্যের যে কয়েকটি জেলায় মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বেশি তার অন্যতম নদিয়া। কালীগঞ্জ, পলাশিপাড়া, নাকাশিপাড়, কৃষ্ণনগর-২, হরিণঘাটার মতো ব্লকগুলিতে প্রচুর মুসলিম মানুষের বাস। তাঁদের সিংহভাগই মনে করেছেন এই বিল তাঁদের সমস্যায় ফেলবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যও তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না।
রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কোনও রাখঢাক না-করেই বলেছিলেন, ‘‘গোটা পৃথিবী থেকে যদি মুসলিমেরা এসে এ দেশের নাগরিকত্ব চান, তা হলে তা দেওয়া সম্ভব নয়। এ ভাবে চলতে পারে না।’’ আগেই অভিযোগ উঠেছিল, এই বিলে কেবল অ-মুসলিমদের সুবিধা দেওয়া হল। মুসলিমদের সঙ্গে বিভাজনের রাজনীতি করার উদ্দেশ্যেই বিলটি আনা হয়েছে। অমিত শাহ অবশ্য রাজ্যসভায় মন্তব্য করেন, ‘‘প্রতিবেশী তিন দেশের (বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান) রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সেই কারণে ওই তিন দেশ থেকে শরণার্থী হিসাবে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। না হলে উৎপীড়নের শিকার ও মানুষেরা কোথায় যাবেন?’’
কল্যাণীর উত্তর চাঁদামারির বাসিন্দা আসিকুল ইসলাম টোটো চালান। বললেন, ‘‘যাত্রীদের বেশির ভাগই একে সমর্থন করছেন। কারণ, হিন্দুরা এতে লাভবান হবে। এখন তো দেখছি আর কিছুই করার নেই। পাশাপাশি বাস করা দুই সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা আলাদা আইন তৈরি হয়ে গেল।’’ মুসলিমদের অনেকেই যেমন সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। অনেকে আবার নতুন করে নথি সংগ্রহে নেমে পড়েছেন। নাকাশিপাড়ার চ্যাঙার বাসিন্দা আনারুল হক যেমন জানাচ্ছেন, সুপ্রিম কোর্ট যদি বিলের পক্ষে রায় দেয় তখন তো আর নথি জোগাড়ের সময় থাকবে না। তাই এখন থেকেই কাজ শুরু করে দেওয়া ভাল।
জেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একাধিক শিক্ষিত যুবক জানাচ্ছেন, নাগরিকপঞ্জিতে কত সাল থেকে মুসলিমরা ভারতে থাকলে নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন তা এখনও অজানা। তবে অসমের কথা ধরলে তারিখটা হবে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে। নদিয়ায় ওই সময়ের আগে থেকে যে মুসলিমরা ভারতে রয়েছেন তাঁদের নথি জোগাড় করতে হবে। তা না-হলেই এক দিন বলা হবে, ‘সন্দেহজনক ভোটার’। নাম উঠবে না এনআরসির চূড়ান্ত তালিকায়।
মাস কয়েক ধরে জেলার শিক্ষিত মুসলিম যুবকদের একাংশ তৈরি করেছিলেন একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। বুধবারের পর
সেখানে বাতলে দেওয়া হচ্ছে কী ভাবে নাগরিকত্ব প্রমাণের নথি জোগাড় করতে হবে তার বিভিন্ন পন্থা। এই বিলে বহু ইমামও ক্ষুব্ধ। ধুবুলিয়ার সিংহাটি গ্রামের মসজিদের ইমাম নুরুদ্দিন শেখ বলছেন, ‘‘সরকার তো অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে চাইছে। এক ভারত এক আইনের কথা বলছে। তা হলে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে কেন মুসলিমদের সঙ্গে অন্য সম্প্রদায়ের বিভেদ করা হল? সরকার ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতা নষ্ট করতে চাইছে।’’
কয়েক পুরুষ ধরে এ দেশে বাস করছেন ধুবুলিয়ার বাসিন্দা সহেল শেখ। তাঁর কথায়, সাচার কমিটির রিপোর্টেও দেখা গিয়েছে, মুসলিমদের মধ্যে শিক্ষার হার কম। তাঁরা নথির গুরুত্ব বুঝবে কী করে? অনেকের কাছেই নথি নেই। তাঁরা স্রেফ এই কারণে দেশছাড়া হওয়ার ভয় করছেন।’’ দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির গবেষক নাদিম আহমেদ আবার বলছেন, ‘‘এর ফলে নদিয়ার মুসলিমরা ভোগান্তির মুখে পড়বেন। নথিতে সামান্য এ দিক-সে দিক হলেই তাঁদের অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বলা হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy