নবাব বাহাদুর ইন্সটিটিউশন। নিজস্ব চিত্র
পাকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি সৈয়দ ইস্কান্দার আলি মির্জার হাতে খড়ি থেকে স্কুল পর্যায়ের লেখাপড়া সবই এই স্কুলে। শুধু ইস্কান্দ আলিই নয়, লালবাগের ‘নবাব বাহাদুর’স ইন্সটিটিউশন’-এর উর্দু বিভাগ থেকে পাশ করে বেরিয়েছেন আরও অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তিই।
কিন্তু বর্তমানে ধুঁকছে এই স্কুলের উর্দুমাধ্যমটি। জেলার একমাত্র সরকারি স্কুল এটিই। কোনও বিষয়ে একজন শিক্ষক তো কোনও বিষয়ে শিক্ষকই নেই। বিজ্ঞানবিভাগে নেই কোনও শিক্ষক। শিক্ষক নেই বলে ছাত্র ভর্তিও কমে গিয়েছে। বর্তমানে এই মাধ্যমে পড়ুয়ার সংখ্যা মাতের ২৬। স্কুল কর্তৃপক্ষের অবশ্য বক্তব্য, পড়ুয়া নেই বলেই শিক্ষক দেওয়া হয়নি।
নবাব পরিবার এবং তাঁদের স্বজনদের ছেলেদের লেখা পড়ার জন্য ১৮২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ওই স্কুলের উর্দু বিভাগটি এখন উঠে যাওয়ার মুখে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কয়েক বছর পর সবার শিক্ষার জন্য ওই স্কুলের দরজা খুলে দেওয়া হয়। উর্দু মাধ্যমের পাশাপাশি চালু করা হয়
বাংলা মাধ্যম।
ওই স্কুলে প্রায় সাড়ে আটশো পড়ুয়া নিয়ে বাংলা মাধ্যম বহাল তবিয়তে চলছে। শিক্ষক ও ছাত্র সংকটে ভুগছে উর্দু মাধ্যমটি। দীর্ঘ দিন থেকে বিজ্ঞান বিভাগের তিন জনের একজন শিক্ষকও নেই। একদা কয়েকশো ছাত্রের উর্দু বিভাগে এখন রয়েছে মাত্র ২৬ জন পড়ুয়া। উর্দু বিভাগের প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ১২টি ক্লাসের জন্য শিক্ষক রয়েছে মাত্র ৭ জন।
লালবাগের নবাবদের বর্তমান বংশধরদের অভিযোগ, শিক্ষকের অভাবের কারণেই উর্দু বিভাগে এত কম ছাত্র। নবাব পরিবারে ছাত্রদের জন্য স্কুল লাগোয়া নিজামত হস্টেল রয়েছে। কিছু দিন আগেও আবাসিক ছাত্রদের বিনা পয়সায় থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, পোশাক, চুল কাটা, সাবান, তেল, গৃহশিক্ষক পর্যন্ত যাবতীয় পরিষেবা মিলত।
নবাব পরিবারের বর্তমান বংশধর সৈয়দ মহম্মদ ফাহিম মির্জা বলেন, ‘‘কোনও শিক্ষক নিয়োগ না করেই বেশ কয়েক বছর ধরে এই স্কুলের শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়। তাই উর্দু বিভাগে ছাত্র সংখার এই হাল। নিজামত হস্টেলর গৃহশিক্ষক থেকে অনেক পদ দীর্ঘ দিন থেকে খালি পড়ে রয়েছে। ফলে নবাব পরিবারের ছাত্ররা দিনের বেলায় নিজামত হস্টেলে খাওয়া-দাওয়া করে বাড়ি চলে যায়। রাতে কেউ সেখানে
থাকে না।’’
ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষক, তথা পরিচালন সমিতির সম্পাদক মাসুদ আলম বলেন, ‘‘ছাত্র সংখ্যা কমে যাওয়ায় শিক্ষক নিয়োগ করা যাচ্ছে না বলে শিক্ষা দফতর থেকে বলা হয়েছে। ১০০ ছাত্র দিতে পারলেই উর্দু মাধ্যমকে আগের গৌরবোজ্জ্বল দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে বলে নবাব পরিবারের বর্তমান
বংশধরদের জানিয়েছি।’’
ওই স্কুলের বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলেন লালবাগের জিতেন্দ্রনাথ দত্ত। কৃষ্ণনগর সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক জিতেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ভাষাতেও দক্ষ। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের ছাত্রবেলায় লেখাপড়া, খেলাধুলা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলা বিভাগের সঙ্গে উর্দু বিভাগের প্রতিযোগিতা চলত। সেই সময় উর্দু বিভাগ ছাত্র সংখ্যায় গমগম করত। লেখাপড়ার মান উন্নত থাকায় বাংলার পাশাপাশি উর্দু বিভাগে গিয়েও আমি লেখপড়া করতাম।’’
বর্তমানে এখন উল্টো দশা। উর্দু বিভাগের দশম শ্রেণির এক ছাত্র বলে, ‘‘শিক্ষক না থাকায় বিজ্ঞানের বিষয়গুলি বাংলা মাধ্যমের ক্লাসের সঙ্গে বসতে হয়। তাতে আমরা পড়া বুঝতে পারি না। ভাষার কারণে শিক্ষকরাও আমাদের বোঝাতে পারেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy