Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

সত্যিই কি হাল ফিরবে শ্রমিকদের?

জেলা প্রশাসনের দাবি, সেই চেষ্টাই তো করা হচ্ছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য শ্রম দফতর থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ড-সহ একাধিক সাহায্য দেওয়া হয়। যার পোশাকি নাম ‘সামাজিক সুরক্ষা যোজনা।’

ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া এ রাজ্যের শ্রমিক। —ফাইল চিত্র

ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া এ রাজ্যের শ্রমিক। —ফাইল চিত্র

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৩৭
Share: Save:

কথায় আছে, চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। তেমনি শ্রমিকদের কোনও বিপর্যয়ের পরেই দেখা যায় টনক নড়ে প্রশাসনের। কেরল যে বার বানভাসি হল, সে বার মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনও তৎপরতার সঙ্গে খোঁজ নেওয়া শুরু করল জেলার কত শ্রমিক বাইরে কাজ করেন। সম্প্রতি কাশ্মীরে জঙ্গি হানায় পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যুর পরে ফের প্রশাসন শ্রমিকদের ব্যাপারে তৎপর হয়ে উঠেছে। কাশ্মীর ফেরত শ্রমিকদের সাহায্য নিয়ে সাগরদিঘি ব্লক প্রশাসন আপেল চাষের কথাও ভাবতে শুরু করেছে। কিন্তু তার পরেও প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে— এত সব করেও শ্রমিকদের কি সত্যিই কি হাল ফিরবে?

জেলা প্রশাসনের দাবি, সেই চেষ্টাই তো করা হচ্ছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য শ্রম দফতর থেকে প্রভিডেন্ট ফান্ড-সহ একাধিক সাহায্য দেওয়া হয়। যার পোশাকি নাম ‘সামাজিক সুরক্ষা যোজনা।’ এই প্রকল্পে অন্য জেলাকে পিছনে ফেলে রাজ্যে শীর্ষস্থান দখল করেছে মুর্শিদাবাদ। অক্টোবরের হিসেব বলছে, এই প্রকল্পে রাজ্যে ১ কোটি ১৪ লক্ষ ৫ হাজার জন নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন। তার মধ্যে মুর্শিদাবাদে সংখ্যাটা ১১ লক্ষ ৩২ হাজার ৫২৯ জন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। ওই জেলায় ১১ লক্ষ ৩১ হাজার ৭৭৭ জন নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন।

আগামী ২০ নভেম্বর মুর্শিদাবাদে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তার আগে এই তথ্যে জেলা প্রশাসন উচ্ছ্বসিত হলেও সঙ্গে থাকছে অস্বস্তির কাঁটাও। কারণ, সচেতনতার অভাব-সহ নানা কারণে এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের বাইরে থেকে গিয়েছেন প্রায় তিন লক্ষ শ্রমিক। মুর্শিদাবাদের উপশ্রম কমিশনার পতিতপাবন দাস বলছেন, ‘‘বাকি শ্রমিকদেরও নাম নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।’’

শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে পরিবহণ কর্মী, নির্মাণকর্মী এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে রাজ্য সরকার ওই সব প্রকল্পকে একত্রিত করে ‘সামাজিক সুরক্ষা যোজনা’ প্রকল্প চালু করে।

কী ধরনের সুবিধা দেওয়া হয় এই প্রকল্পে? শ্রম দফতরের এক আধিকারিক জানান, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রকল্প, মৃত্যুকালীন সাহায্য, দুর্ঘটনা জনিত কারণে সাহায্য দেওয়া হয়। এ ছাড়া অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীর ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা খাতে আর্থিক সাহায্য করা হয়। কর্মীদের কাজের মানোন্নয়ণেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ১৫টি স্বনিযুক্তি পেশার লোকজন ছাড়াও নির্মাণ ও পরিবহণ কর্মীরাও এর আওতায় আসবেন।

শ্রম দফতরের এক কর্তা জানান, প্রভিডেন্ট ফান্ডে উপভোক্তা মাসে ২৫ টাকা করে দেবেন, রাজ্য সরকার দেবে ৩০ টাকা। ৬০ বছর বয়স হলে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত পাবেন। অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের স্বাভাবিক মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু হলে মৃতের পরিবারকে এককালীন দু’লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। দুর্ঘটনার জেরে প্রতিবন্ধী হলে দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। কর্মীদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য একাদশ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত বছরে ৪ থেকে ৩০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য করা হয়।

শ্রম দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে হলে এ রাজ্যের বাসিন্দা হতে হবে। বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে এবং পরিবারের মাসিক আয় ৬৫০০ টাকার নীচে হতে হবে। তবে পরিবহণ ও নির্মাণ কর্মীদের ক্ষেত্রের মাসিক আয়ের সীমা নেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidabad Kashmir Labourer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy