প্রতীকী ছবি।
পুজোয় এ বার বাড়ি ফেরা হচ্ছে না অনেক পরিযায়ী শ্রমিকদের। ফি বছর ইদ আর পুজো গায়ে গায়ে পড়ে বলে একবার ঘরে ফিরে ওঁরা দুই উৎসবেরই অংশীদার হয় একে অপরের। এ বার ইদের পরব আগেই শেষ হয়েছে। ফুরিয়েছে মহরমও। কিন্তু তখন করোনা ঠেকাতে লকডাউন চলায় ঘরবন্দিই থাকতে হয়েছিল ওদের। ফলে মাটি হয়েছিল ইদের উৎসব। ভিন রাজ্য থেকে ফোনে ফারুক হোসেন বলছেন, “ভেবেছিলাম পুজোয় পুষিয়ে নেব ইদের আনন্দ। বাস্তবে তা আর হল কই?” একই কথা অজিত সরকারেরও।
শুধু তাই নয়, অন্য বছর দূর রাজ্যে ঘাড় গুঁজে পড়ে থেকে দু’পয়সা বেশি আয় করে বাড়ি ফেরেন তাঁরা। সব খরচ খরচা বাদ দিয়ে হাতে কিছু বাড়তি টাকাও থাকত। তা দিয়ে ইদ হোক বা মহরম আর তার আগুপিছু বাঙালির দুর্গা পুজোয় মেতে উঠতেন ওঁরা। বেঙ্গালুরু থেকে মিঠুন সেখের আক্ষেপ, “এ বার ইদেও আনন্দ হয় নি, পুজোও মাটি হল করোনার জন্য।”
শুধু আনন্দ নয়। উৎসবের দিন ঘরে ফিরে দু’টাকা রোজগারও হত। কেউ পুজো প্রাঙ্গণের মেলায় দোকান দিতেন। খাবার থেকে শুরু করে রেডিমেড কাপড়ের চাহিদা ছিল। অনেকেই ভাল দর্জির কাজ করেন। তাঁদের কেউ মুম্বই, কেউ বেঙ্গালুরুতে থাকেন। পুজোর আগে আগে ফিরে নিজেদের ঘরেই তাঁরা পোশাক তৈরি করতেন। কাপড়ের থান নিয়ে তৈরি থাকতেন মহাজনেরা। ঘরে ঘরে সেলাই মেশিনের আওয়াজ উঠত। তাতে ভালই রোজগার হত। এ বার তা নেই। তাতেই আর বাড়ি ফেরার তাগিদও অনুভব করছেন না জব্বার শেখ বা আতিকুর রহমানরা।
দেশ জুড়ে মার্চের শেষে লকডাউন ঘোষণা হলেও ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়া এ রাজ্যের যুবকরা আটকে পড়েছিলো লকডাউনের গেরোয়। তখন তাঁদের না ছিল হাতে কাজ, না পারছিলেন তাঁরা নিজের গ্রামে ফিরে আসতে। ইসলামপুরের ফারুক হাসান বলেন, ‘‘কাজ না থাকলে আয়ও নেই, ফলে দিন দিন আমাদের কষ্ট বাড়তেই থাকছিল সেই সময়। জমানো পয়সা খরচ করে কখনও লরি কখনও পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরেছিলাম।”
কাজ হারিয়ে ফিরে এসেছিলেন প্রায় লক্ষাধিক পরিযায়ী শ্রমিক। যদিও পরিস্থিতি বিচার করে যখন সরকার উদ্যোগী হল ওদের ফিরিয়ে আনতে ততদিনে জমানো টাকাপয়সার বেশিরভাগটাই খরচ হয়ে গিয়েছে লকডাউনের দিনযাপনে। লকডাউন শিথিল হতেই যান চলাচল শুরু হয়। শুধু মুর্শিদাবাদ নয়, নদিয়া, বীরভূম সহ রাজ্যের একাধিক জেলার পরিযায়ী শ্রমিকরা কেউ বেশি টাকায় বাস ভাড়া করে কেউ বাস কিংবা লরি যখন যেটা জুটেছে তাতেই পড়িমরি করে কাজের জায়গায় ফিরে গিয়েছিলেন রোজগারের টানে। বেঙ্গালুরু থেকে ইসমাইল, অজিত, শেফালী, দুর্গারা জানাচ্ছেন, এখনও কাজ শুরু হয়নি। পেটের দায়ে তাই কখনও জলের বোতল, কখনও সিমেণ্টের বস্তা কুড়িয়ে, কখনও প্লাস্টিক কুড়িয়ে তা বিক্রি করে দিন যাপন করছেন। শেফালী বলছেন, “এই কাজ করে ক’টাকা আয় হয় যে তা নিয়ে ঘরে ফিরে যাব?” সুরজ বাসির বলছেন “পেট চালাতেই তো হিমসিম খাচ্ছি আনন্দ করবার রেস্ত কই?” অজিত সাহা বলছেন, “বরং বাড়িতে থাকলে পুজোর সময় ফুচকা বেচেও এর থেকে বোধহয় বেশি আয় হত। কিন্তু এখন যে ফিরে যাবার পয়সাটুকুও নেই।”
জেলা শ্রম আধিকারিক শেখ আবদুল মুনিম বলেন, “লকডাউনের পর যে লক্ষাধিক শ্রমিক জেলায় ফিরেছিলেন, তাঁদের একাংশ ফিরে গিয়েছেন আবার কাজের জায়গায়। ফলে অন্যান্য বছর পুজোর সময় যে সংখ্যায় তাঁরা জেলায় ফিরে আসতেন এ বার সেই সংখ্যাটি নিতান্তই কম। খুব বেশি হলে হাজার পাঁচেক মতো।”
অন্য বছর উৎসবের সময় নিখাদ আনন্দে মেতে উঠতেন যাঁরা, এ বছর উৎসব ভুলে কাজের খোঁজে হন্যে হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন অন্য রাজ্যের অন্য গলিপথে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy