Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

পুলিশ যদি ‘টম’ হয়, সিঁধেল ‘জেরি’

চোর আবার কেমন কথা, বলুন সিঁধেল! নদিয়া সীমান্তের এক কালের দিকপাল সিঁধেল বিড়িতে লম্বা টান দিয়ে গর্জে উঠছেন, ‘‘আর পাঁচটা পেশার মতো এ-ও তো একটা পেশা!

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২০
Share: Save:

‘চোর মানেই চতুর, চুরি হল চাতুরী। চুরিবিদ্যা বড়বিদ্যা— বড় নাম এমনি হয়নি। অতিশয় কঠিন বিদ্যা। এ লাইনে দিকপাল হতে হলে ওস্তাদের কাছে রীতিমত পাঠ নিতে হত’।

(‘নিশিকুটুম্ব’, মনোজ বসু)

চোর আবার কেমন কথা, বলুন সিঁধেল! নদিয়া সীমান্তের এক কালের দিকপাল সিঁধেল বিড়িতে লম্বা টান দিয়ে গর্জে উঠছেন, ‘‘আর পাঁচটা পেশার মতো এ-ও তো একটা পেশা! তা হলে চোর বলে অপমান করা কেন?’’ বৃদ্ধ বলে চলেছেন, ‘‘আমাদের সময়ে সকলেই যে অভাবে এ পেশায় আসতেন, এমন নয়। এ লাইনে রোমাঞ্চও বড় কম ছিল না। আমাদের আত্মসম্মান বোধ ছিল টনটনে।’’ এ প্রজন্মে সে সব কিছুর হদিস পান না তিনি। হাতের কাছে যা পায়, তাই নিয়ে সরে পড়া। ‘‘কেন এ পেশায় এসেছে? না নেশার টাকা কম পড়েছে বলে। এ সব শুনলেও ঘেন্না হয়’’, হাঁফাচ্ছেন রিটায়ার্ড সেই সিঁধেল চোর। তা হলে আপনাদের শিষ্যরা কী করল? এ বার ম্লান হাসেন তিনি, ‘‘তাদেরও তৈরি করেছিলাম। কিন্তু যে বিদ্যা শিখল তা প্রয়োগ করবে কোথায়? মাটির বাড়ি উধাও হয়ে গেল। এখন তো কংক্রিটের জঙ্গল। মাটির ঘর থাকলে এখনও দেখিয়ে দিতুম, ওস্তাদের মার কাকে বলে!’’

মুর্শিদাবাদের অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশকর্তার আজও সিঁধেল-স্মৃতি অমলিন। তিনি বলছেন, ‘‘সে এক সময় গিয়েছে মশাই! ডাকাতির কিনারা করা যেত। কিন্তু সিঁধেলরা একেক সময়ে মাথাখারাপ করে দিত। এখন টিভিতে কার্টুন দেখতে বসলে মনে হয়, সে কালে পুলিশকে যদি টম বলা হয়, সিঁধেল জেরি।’’

খোশবাসপুরের বৃদ্ধ মতিন হায়দারের এখন মনে আছে সেই সিঁধ-কাহিনি। তিনি জানাচ্ছেন, গ্রীষ্ম-বর্ষায় না হয় সিঁধেলরা শরীরে ভাল করে তেল মাখল। ধরতে গেলেই সুড়ুৎ। শীতে তো আর আদুল গায়ে বেরনো যায় না। ফলে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে ও নিজের পরিচয় ঢাকতে এক সিঁধেল হাতে-পায়ে-মুখে-মাথায় ব্যান্ডেজের মতো করে কাপড় বেঁধে বেরিয়ে পড়েছিল। সে যাত্রা কাজ সেরে প্রায় বেরিয়ে পড়েছিল। কিন্তু লাগল কাপড়ে টান। পরে গৃহকর্তা আপ্রাণ টেনে টেনে সমস্ত কাপড় হাতে নিয়েছিলেন। কিন্তু সিঁধেল ঘুড়ির সুতো ছাড়া করে কাপড় ছেড়ে দিয়ে ধাঁ।

মুর্শিদাবাদের আর এক গ্রামে সিঁধ কেটে চুরি করতে ঢুকেছিল চোর, থুড়ি সিঁধেল। খিদে পেয়ে গিয়েছিল তার। গুরুর নির্দেশ অমান্য করে কাজ শিকেয় তুলে শিকে থেকে নামিয়ে এনেছিল হাঁড়িতে রাখা ভাত ও আলু সেদ্ধ। ঘুম ভেঙে গিয়ে তার একটি পা ধরে ফেলেন গৃহকর্তা। সিঁধেল তখন কৃত্রিম কান্নায় ভেঙে পড়ে জানায়, ‘‘ও কর্তা, পা ধরবেন না। ফোড়া আছে। হাত ধরুন।’’ গৃহকর্তা পা ছেড়ে দিতেই পলকে গায়েব সিঁধেল।

(চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Thieves Memories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy