Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ফিরতে চাইলেও ফেরা যায় না

সে দিনের কোনও পূর্ণাঙ্গ ছবি ইন্দ্রের মনে নেই। শুধু কানের পাশে টানা বেজে চলেছে ঢাকের আওয়াজ। অতীতের ছবি চোখের সামনে দৃশ্যকল্পের মতো ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছে টাটকা স্মৃতি হয়ে।

হারিয়ে যাওয়া সেই কবেকার স্মৃতি-কথাকে ছুঁতে চাওয়ার ইচ্ছেরা দিশেহারা হয়ে গেলেই ইন্দ্র পাড় আঁকড়ে বসে থাকে।  প্রতীকী চিত্র

হারিয়ে যাওয়া সেই কবেকার স্মৃতি-কথাকে ছুঁতে চাওয়ার ইচ্ছেরা দিশেহারা হয়ে গেলেই ইন্দ্র পাড় আঁকড়ে বসে থাকে। প্রতীকী চিত্র

শুভাশিস সৈয়দ
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৯ ০২:৩৫
Share: Save:

নদীর পাড় বরাবর মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে কাশফুল। দোল খাচ্ছে বাতাসে। আকাশে শরৎকালের পেঁজা তুলোর মতো মেঘ উড়ে বেড়াচ্ছে। কুমোরপাড়ায় ব্যস্ততা তুঙ্গে। ঠিক এমনই এক সন্ধ্যা নামার আগের মুহূর্তে কলেজঘাটে যেন লেখা হয়ে গিয়েছিল বিসর্জনের গল্প-কথা।

সে দিনের কোনও পূর্ণাঙ্গ ছবি ইন্দ্রের মনে নেই। শুধু কানের পাশে টানা বেজে চলেছে ঢাকের আওয়াজ। অতীতের ছবি চোখের সামনে দৃশ্যকল্পের মতো ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছে টাটকা স্মৃতি হয়ে। পাড়ে বসে রয়েছে ইন্দ্র। পায়ের নীচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে বর্ষার গর্ভবতী ভাগীরথী। নির্জন-শান্ত বাতাস ও নীরবতাকে সম্বল করে ভীষণ ভাবে জীবন্ত ভাগীরথী ইন্দ্রের শহরের বুক চিরে বয়ে যায়।

হারিয়ে যাওয়া সেই কবেকার স্মৃতি-কথাকে ছুঁতে চাওয়ার ইচ্ছেরা দিশেহারা হয়ে গেলেই ইন্দ্র পাড় আঁকড়ে বসে থাকে। কৃষ্ণনাথ কলেজ জীবনের ইতিবৃত্ত জানা ভাগীরথী আজও একই ভাবে বয়ে চলেছে। নিজের মতো করে। নিজের ছন্দে। মাঝখানে পেরিয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকটা বছর। স্মৃতির শ্রান্ত মিছিলে কত নাম, কত স্মৃতি! সে সব যেন কোথায় হারিয়ে গেল!

এখন পাঁচুদার দোকানও স্মৃতি। সেখানে কালো পিচ রাস্তা বাঁক নিয়েছে। নেই সেই পাউরুটি-ডিম টোস্টের চেনা গন্ধ। কাঞ্চন তার ফুচকার গাড়ি নিয়ে এখনও কি এসে দাঁড়ায় গেটের কাছে? হারিয়ে যাওয়া মুখগুলোকে কি সে এখনও খোঁজে, ইন্দ্রের মতোই! জানে না ইন্দ্র। তার অস্তিত্বে টান লাগে। অর্বাচীন প্রহর যেন স্বপ্নের কুহক গোন!

আকাশ ঘোর নীল। নদীতে মাঝিদের পারাপার। রাস্তার ঠিক ওপারে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ কলেজ। তার পাশ দিয়ে হেঁটে গেলেই শিশিরের শব্দের মতো নিস্তব্ধতা দেওয়াল জুড়ে গড়িয়ে পড়ে। ঘাটের পাশে দাঁড়িয়ে একটি স্টিমার। পৃথিবীর যাবতীয় আকর্ষণ যেন ইন্দ্রকে নিয়ে আকাশের শূন্যতায় দোল খায় সন্ধ্যায়। অপ্রকাশিত বেদনায় মানুষ কি নীল হয়ে যায়?

নৌকা এপার-ওপার ভাসে। ইন্দ্র নিশ্চুপ বসে। হারিয়ে যাওয়া মুখগুলোর কথা কি এক বার মনে পড়ে! ঠিক সেই সময়ে ইন্দ্রের নাম ধরে যেন কেউ ডাকে। বাড়ি ফিরে আসার আগে ফের সেই ডাকটা শুনতে পায়। সে উঠে দাঁড়ায়। দেখে, মাঝ নদী থেকে আলোর অবয়ব তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকতে ডাকতে মিলিয়ে যাচ্ছে ওপারে। সেই আবছায়া ও অস্পষ্ট মুখের দিকে চেয়ে থাকল ইন্দ্র। নিষ্পলক।

শহরে কখন ঝুপ করে রাত নেমে আসে, টের পায়নি ইন্দ্র। রাত গভীর হওয়ার আগে ফিরে আসে ঘরে। অনুভব করল—সব কিছু থেকে ফেরা যায় না। ঢের কিছু বাকি থেকে যায়। শূন্যতায় ঝুলে থাকার মতো। ফের অসহায়তা ঘিরে ধরে ইন্দ্রকে...!

সকালে দরজা খোলে না কেউ...

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidabad Bhagirathi River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy