প্রতীকী ছবি
পঞ্চাশ শতাংশ নম্বর নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে ২০১২ সালে নগর কলেজে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন নবগ্রাম থানার লক্ষ্মণপুর গ্রামের বাসিন্দা ফারুক হোসেন। আশৈশব আর্থিক অনটন সঙ্গে করে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে আর কলেজমুখো হননি তিনি। বলছেন “একপ্রকার বাধ্য হয়েই কলেজ ছেড়ে দিলাম।” উচ্চমাধ্যমিক পড়তে পড়তে তিনি সেনাবাহিনী, বিএসএফের চাকরির চেষ্টাও করেছিলেন। তিনি বলছেন, “মেডিক্যালে পাশ করলাম। পরীক্ষাতেও পাশ করেছিলাম। কিন্তু চুড়ান্ত তালিকায় নাম ওঠেনি কেন তা জানতে পারিনি।” স্নাতক হয়ে চাকরির চেষ্টা করবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু তাঁর বাবার হঠাৎ শরীর খারাপ হয়। আট জনের সংসারে আর্থিক অনটন চরমে পৌঁছয়। কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছেন। কোথাও কোনও কাজ পাননি। গ্রামের শিশুদের টিউশন পড়ানো শুরু করেন ফারুক। কিন্তু তাদের অবস্থাও তো ফারুকের মতো। কেউ সময়ে পয়সা দিতে পারত না। তখন এক দিন সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে পাড়ার মোড়ের আড্ডায় ফারুক গ্রামের অন্য অনেকের মতো ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। তিনি বলেন, “এখানে থাকলে না খেতে পেয়ে মরে যেতাম।”
পরের দিন কাউকে কিছু না জানিয়ে রাত আটটায় বাস ধরে বহরমপুর, সেখান থেকে খাগড়াঘাট স্টেশন হয়ে একা একা হাওড়া তারপর মুম্বই। সে আজ থেকে বছর ছয়েক আগের কথা। সেখানে গ্রামের এক পরিচিতের মাধ্যমে দৈনিক তিনশো টাকার বিনিময়ে নির্মাণ শিল্পে সহযোগীর কাজে যোগ দেন। বলছেন, “কখন রাজমিস্ত্রি হয়ে গেলাম, জানতেও পারলাম না। কোনওদিন পাঁচশো, কোনওদিন হাজার টাকা করে পাই। স্বস্তি পেয়েছি। গ্রামে পাকা বাড়ি করেছি, চার বোনের বিয়ে দিয়েছি।’’
কিন্তু করোনাভাইরাসের ভয়ে কোম্পানির কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আয়ও বন্ধ হয়েছে। বাড়ি ফিরেছেন অনেক কষ্ট করে। কিন্তু বাড়িতে থাকবেন না। লকডাউন উঠলে যাতায়াত স্বাভাবিক হলে আবার ফিরে যাবেন মুম্বই। তিনি বলছেন, “শুনেছি এখানে একশো দিনের কাজ দেবে স্থানীয় পঞ্চায়েত। কিন্তু তাতে আয় কত হবে? তা দিয়ে কী সংসার চলবে? আর সেই পয়সাও সঙ্গে সঙ্গে পাব না। জানি না তার উপর কাউকে ভাগ দিতে হবে কি না।” সার্টিফিকেটগুলো দেখলে মায়া হয় তাঁর। তিনি বলছেন, “ওগুলো এখন কাগজ ছাড়া আর কিছু নয়। এখন মনে হয় আরও আগে যদি মুম্বই চলে যেতাম ভাল হত। পড়াশোনার কী দাম পেলুম বলুন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy