একটা সময়ে সেখানে লাল নিশানই উড়ত। ‘লাল-গড়’ হিসেবেই পরিচিতি ছিল তার।
কিন্তু, কল্যাণীর সগুনা থেকে সিপিএমের সেই প্রভাব কার্যত ধুয়ে মুছে গিয়েছিল ২০০৮-এ পঞ্চায়েত ভোটের পরে। আর পালাবদলের পরে চালু হয়েছিল তৃণমূলতন্ত্র। সগুনা বাজারে তা-ও টুকটাক রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকলেও সুভাষনগরে গত পাঁচ বছরে কোনও সভাই করতে পারেনি তারা।
অবশেষে, সোমবার রাতে সেখানে পথসভার করল সিপিএম। টানা আট বছর পরে। এক সময় তৃণমূলের ভয়ে যে সুভাষনগরে সিপিএমের মিছিলে পা মেলানোর সাহস দেখাতেন না এলাকার বাসিন্দারা, সেখানে জোটের সভায় প্রচুর স্থানীয় মানুষ যোগ দেন। শুধু তা-ই নয়, ওই সভায় তৃণমূলের জনা পঞ্চাশেক কর্মীও সিপিএমে যোগ দেন। তাঁদের হাতে দলের পতাকা তুলে দেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে।
মঙ্গলবার আবার তাহেরপুরের জনসভায় অধীর চৌধুরী ও শঙ্কর সিংহের সামনে কংগ্রেসে যোগ দেন শ’দেড়েক তৃণমূল কর্মী। সোমবার রাতেও কৃষ্ণনগর-২ ব্লকে প্রায় ৩০০ তৃণমূল কর্মী যোগ দেন কংগ্রেসে। ফলে, শনি ও রবিবার তৃণমূল ছেড়ে জোটের সঙ্গী হওয়ার যে ধারা দেখা যাচ্ছিল, সোম এবং মঙ্গলবার তা অব্যাহত রয়েছে। একই ভাবে ঘর ভাঙছে বিজেপিরও।
সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতাদের দাবি, জোটের ধাক্কায় তৃণমূল শিবিরে যে ভাঙন শুরু হয়েছে, তা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ধীরে-ধীরে মানুষের ভয় ভাঙছে। এতদিন যাঁরা তৃণমূল করেও দলের বিরুদ্ধে রাগ গোপন করে চুপচাপ ঘরে বসেছিলেন, তাঁরা এ বার পথে নামছেন। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করছেন, তাঁদের দল থেকে কেউ সিপিএম বা কংগ্রেস শিবিরে যায়নি।
শনিবারই প্রথম এই প্রবণতা চোখে পড়েছিল কল্যাণীতে। সে দিন মদনপুরের আলাইপুরে বেশ কিছু তৃণমূল কর্মী সিপিএমে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে জনা ষাটেক বিজেপি কর্মীও দল ছেড়ে সিপিএমে যোগ দেন। রাত পোহাতে না পোহাতেই রবিবার হরিণঘাটায় ফের তৃণমূলের ঘর ভেঙে বেশ কিছু তৃণমূল কর্মীকে দলে নেয় সিপিএম। সেদিনই নাকাশিপাড়ায় বিজেপির শ’তিনেক নেতা-কর্মী সিপিএমে যোগ দেন। সে দিন তাদের দোসর ছিলেন বেশ কিছু তৃণমূল কর্মীও।
সগুনার সুভাষনগর কার্যত তৃণমূলের ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। গত পঞ্চায়েত ভোটে এই এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা বাড়ি থেকে বেরোতেই পারেনি। সৌজন্যে, ভূতের উপদ্রব। সেখানে সিপিএমের কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি এক কথায় ছিল অসম্ভব। সিপিএমের মদনপুর লোকাল সম্পাদক রূপক সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এলাকার মানুষের সাহায্য পেয়েছি বলেই ওখানে এত দিন পরে আমরা সভা করতে পারলাম।’’ সিপিএমের প্রার্থী অলকেশ দাসের দাবি, এলাকার কিছু তৃণমূল কর্মী তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। এ দিন তাঁদেরই জনা পঞ্চাশেক যোগ দিয়েছেন। অনেকেই সরাসরি আসতে সাহস পাচ্ছেন না। কল্যাণী ব্লক তৃণমূল সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায় অবশ্য গোটা বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘আমাদের কোনও কর্মী ওদের দলে যোগ দেননি। বরং চর যাত্রাসিদ্ধিতে ওদেরই দেড়শো কর্মী আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন।’’
সোমবারই ধুবুলিয়ার সোনডাঙায় কংগ্রেস-সিপিএম জোটের সমর্থনে মিছিল হয়। তার আগে এলাকার কিছু তৃণমূল কর্মী দলবদল করে কংগ্রেসে যোগ দেন। ব্লক কংগ্রেস সভাপতি জয়ন্ত সাহা, কৃষ্ণনগর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সভাপতি নীলিমা খাতুনেরা উপস্থিত ছিলেন। কৃষ্ণনগর-২ ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি জয়ন্ত সাহার দাবি, যে ৩০০ তৃণমূল কর্মী এ দিন দলে এলেন, এক সময়ে তাঁরা কংগ্রেস করতেন। ভূল বুঝতে পেরে ঘরে ফিরলেন। যদিও তৃণমূলের কৃষ্ণনগর-২ ব্লক সভাপতি শিবশঙ্কর দত্তের দাবি, “সিপিএমের লোককে তৃণমূল সাজিয়ে কংগ্রেসে যোগদানের গল্প শোনাচ্ছে। আমাদের দলের কেউ কংগ্রেসে যোগ দেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy