নিজস্ব চিত্র
তাঁরা একে অপরের কাছে পরিচিত ছিলেন ঘোষবাবু, দাসবাবু নামে। ওইটুকুই। নামের দরকার হয়নি। প্রতিদিনের যাতায়াতের ফাঁকে রাজ্য, রাজনীতির কথা হত। কখনও ফাঁক গলে এসে পড়ত ঘর-সংসার। ট্রেন বন্ধ হওয়ায় ছিটকে গিয়েছেন একে অন্যের থেকে। কেউ কাজ হারিয়েছেন। কেউ বা বদলেছেন পেশা, মায় ঠিকানাও।
দীর্ঘ ৮ বছর ধরে সকাল ৭টা ১০-এর কৃষ্ণনগর-শিয়ালদহ লোকালে পিছনের দিক থেকে ৪ নম্বর কামরার দ্বিতীয় গেটের বাঁ দিকের আসনে বসে কলকাতা যেতেন সৌমেন ঘোষ। কখনও বসে, কখনও সহযাত্রীকে আসন ছেড়ে দিয়ে। কলকাতার একটি ছাপার কাগজ সরবরাহকারী অফিসে সেলসম্যানের কাজ করতেন তিনি। কাজ সেরে বাড়ি ফেরাও সেই ট্রেনে। লকডাউনে ট্রেন বন্ধ হওয়ায় ছেদ পড়ে সেই যাত্রায়। ছেদ পড়েছে কাজেও। মালিক যেতে বারণ করেছেন। ৫ জনের সংসার চালাতে এখন মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার বিক্রি করছেন তিনি। সহযাত্রীরা কেউ কেউ সাহায্য করেছেন। কিন্তু সেই ভরসায় তো সংসার চলে না। অপেক্ষায় আছেন কবে আবার ট্রেন চালু হবে। কলকাতায় গিয়ে কাজ খোঁজার চেষ্টা করবেন। একরাশ হতাশা নিয়ে সৌমেন বলেন, ‘‘অফিস তো আর নেই। আগে যাত্রী হিসেবে চড়তাম, ট্রেন চললে হয়তো হকার হতে হবে।’’ কলকাতার বড়বাজারে এক কোম্পানিতে কাজ করেন সুখময় সরকার। তিনিও ছিলেন ৭টা ১০-এর লোকালের যাত্রী। এখন বাসে কলকাতা গিয়ে অফিস করার মতো আর্থিক বা শারীরিক সামর্থ্য তাঁর নেই। যদি ট্রেন চালু হয়, তা হলে ফের অফিসে যোগ দেবেন। কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী পবিত্র পাল রানাঘাটের গাংনাপুরের নাসিরকুলি গ্রাম থেকে ১৫ বছর ধরে সকালে ৭ কিলোমিটার সাইকেলে চেপে রানাঘাট স্টেশনে এসে ৮টা ৩২-এর রানাঘাট লোকাল বা ৮টা ৫১-র ভাগীরথী এক্সপ্রেস ধরে কলকাতায় কর্মস্থলে যেতেন। লকডাউনে সংস্থা খোঁজ নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আর্থিক সাহায্য সে ভাবে মেলেনি। সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে মুনিশ খেটেছেন। বাস চালু হওয়ার পর এক দিন বাসে অফিস যান তিনি। খরচ হয়েছে ২০০ টাকার মতো। রোজ এত টাকা খরচ করা সম্ভব নয় বলে আর অফিস যাননি। কাজ বাঁচাতে বাড়ি না-ফিরে কলকাতায় কর্মস্থলের কাছাকাছি থাকছেন কৃষ্ণনগরের রিঙ্কু মন্ডল। আগে কৃষ্ণনগর থেকে মাতৃভূমি লোকালে যাতায়াত করতেন।
রানাঘাট মহিলা প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যা পায়েল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রানাঘাট থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০০ মহিলা ট্রেনে কাজের জন্য কলকাতায় যেতেন। ট্রেন বন্ধ থাকায় অনেকের কাজ গিয়েছে বলে খবর পাচ্ছি। আমার নিউটাউনে অফিস। এখন বাসে ধর্মতলা গিয়ে নিউটাউন যাওয়া সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাস পরিষেবা যথেষ্ট নয়।’’ আনলক-১-এ ‘কৃষ্ণনগর কালীনারায়ণপুর ডেলি প্যাসেঞ্জার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ লোকাল ট্রেন চালুর দাবিতে কৃষ্ণনগর স্টেশন মাস্টার মারফত ডিআরএম-এর কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে। অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৌমাভ চৌধুরী বলেন, ‘‘ট্রেন বন্ধ থাকায় কর্মস্থানে যেতে না পারায় প্রচুর মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছেন।’’ ট্রেন চালু না-হলে আগামীতে রেল মন্ত্রীর কাছে গণ-স্মারকলিপি দেওয়ার ভাবনা আছে বলে জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy