Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

ভোট কেড়ে নিয়েছে সুখ

সে দিনের রক্তের দাগ মুছে গিয়েছে পাটিকাবাড়ি বুথ থেকে। এ দিন সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাপট। তা দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সে দিন যদি পুলিশ একটু সক্রিয় হত, তাহলে অকালে চলে যেত না শাহিন। ছোট্ট জুনাইদ তার বাবাকে হারাত না।

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায় ও সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
বেলডাঙা ও নওদা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৯ ১১:১০
Share: Save:

এমনই এক বোশেখের দুপুর। চড়া রোদের মধ্যে বছর চব্বিশের তরতাজা শাহিন মালিথা বেরিয়ে গিয়েছিল ভোট দিতে। মা ফজিলা বিবি পিছন থেকে বার কয়েক ডেকে ছিলেন, কিছু খেয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সে কথাই কানই দেয়নি সে।

বাড়ি থেকে মিনিট কয়েকের হাঁটা পথে বুথে। বলেছিল, ‘‘ভোট দিয়েই ফিরে এসে পেট পুরে খাব গো!’’

তা আর হয়নি। ঘরে ফিরেছিল তার রক্তাক্ত দেহ। নওদার পাটিকাবাড়ি এলাকার শাহিন মালিথা। ভোটের দিন দুপুরে বুথের ভেতরে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়ছিল সে। তেমনি এক বৈশাখের দুপুর, আর এদিনও সে দিনের মতোই কাঠফাটা রোদের মাঝেই ভোট।

সে দিনের রক্তের দাগ মুছে গিয়েছে পাটিকাবাড়ি বুথ থেকে। এ দিন সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাপট। তা দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সে দিন যদি পুলিশ একটু সক্রিয় হত, তাহলে অকালে চলে যেত না শাহিন। ছোট্ট জুনাইদ তার বাবাকে হারাত না।

প্রতিবেশী রমেন প্রামাণিক বলছেন, ‘‘গত বছর পয়লা বৈশাখের দিন এক সঙ্গে হালখাতা করেছি বাজারে। মিষ্টি খেয়েছি কত আনন্দ করে। আর এ বার শাহিন নেই। সেই ভোট হল, মানুষ নীরবে যে যার মতো করে ভোট দিল, কিন্ত শাহিন চলে গেল আমাদের ছেড়ে।’’

বাবা মুকুল মালিথা বলছেন, ‘‘আর ভোট দিয়ে কি হবে বলুন, ছেলেটাই চলে গেল এই ভোটের জন্য। আমরা নেতা নই, কর্মীও নই। তার পরেও ছেলেটাকে আমাদের থেকে সারা জীবনের মতো আলাদা করে দিল ভোট। আমাদের আর কেউ নেই।’’

এ দিন বাড়িতে উনুন জ্বলেনি। পড়শি লোকজন খাবার এনে দিলেও মুখে তুলতে পারেননি মা জুলেখা বিবি। তাঁর একটাই কথা, ‘‘কী করে খাবার মুখে রুচবে! না খেয়ে বেটা আমার ভোট দিতে গেল, আর ফিরল লাশ হয়ে।’’ ছেলের মৃত্যুর পর বউমা একমাত্র নাতিকে নিয়ে চলে গিয়েছে ডোমকলের কুশাবাড়িয়া গ্রামে বাবার বাড়ি। ফলে নাতিটার জন্য মনটা কেমন করলেও উপায় নেই।

ভোট মালিথা পরিবারের পাশাপাশি সুখ কেড়ে নিয়েছে বেলডাঙা-১ ব্লকের সুজাপুরের তপন মণ্ডলের পরিবারেরও। গত পঞ্চায়েত ভোটের দিন বাড়ি থেকে ভোট দিতে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন তিনি। সেসময় বোমার আঘাতে বাড়ির কাছেই মুখ থুবড়ে পড়েন। এ দিন সেই পরিবার ভোট দিয়ে গিয়েছেন, কিন্তু এখনও শোক সামলে উঠতে পারেনি ওই পরিবার।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy