মহিলা পুরোহিত বিয়ে দিলেন বহরমপুরের পাত্র-পাত্রীর। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
চেনা ছকের বাইরে বেরিয়ে মেয়ের বিয়ে দিলেন বহরমপুর শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক গৌতম বড়াল। শুক্রবার সন্ধ্যায় এই শহরেরই শিল্পতালুকে একটি অভিজাত হোটেলে মহিলা পুরোহিতদের দিয়ে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত কন্যার বিয়ে দিয়েছেন। কলকাতার বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা রোহিণী পাল প্রতিষ্ঠিত ‘পুরো নতুন বৈদিক বিবাহ দল’-এর তিন জন মহিলা পুরোহিত শাস্ত্রীয় মন্ত্র বাংলা অনুবাদ-সহ উচ্চারিত করে বিয়ের কাজ সারেন। ওই তিন জন মহিলা পুরোহিত হলেন বহরমপুরের ভূমিকন্যা গার্গী চক্রবর্তী, কলকাতা থেকে আগত ধৃতি চট্টোপাধ্যায় এবং কৈশিকী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরা তিন জনই এ দিন সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণ করে বৈদিক মতে বিয়ের যাবতীয় কাজকর্ম সারেন। সঙ্গে মন্ত্র বাংলায় অনুবাদও করেন।
বিয়ে হল গৌতম বড়ালের কন্যা সায়ন্তিকা বড়ালের সঙ্গে কলকাতার তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার আধিকারিক বহরমপুরেরই গোরাবাজারের সুবীর বিশ্বাসের। তবে এই বিয়েতে দীর্ঘ দিন ধরে প্রথাগত ভাবে হয়ে আসা কন্যাদান পর্ব থেকে শুরু করে লজ্জাবস্ত্র, পানপাতা দিয়ে মুখ ঢাকা, গাঁটছড়া বাঁধা হয়নি।
কয়েকশো আত্মীয় পরিজন-বন্ধু বান্ধবদের উপস্থিতিতে বর কনে ছকভাঙা এই বিয়ে সারেন। বর কনে দুজনেই বলেছেন, চেনা ছকের বাইরে বেরিয়ে এই বিয়ের অনুষ্ঠানে তাঁরা খুশি।
কনের বাবা চিকিৎসক গৌতমবাবু বলছেন, ‘‘মেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত। ওর ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে মহিলা পুরোহিতদের দিয়ে বিয়ের আয়োজন করেছি। মেয়ের খুশিতে আমার খুশি। তাই তাঁর ইচ্ছাকে মর্যদা দিয়েছি।’’
পৌরোহিত্যের কাজে এগিয়ে এলেন কেন? গার্গী চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘বৈদিক যুগে ঋষিদের সঙ্গে ঋষিকা’রাও পূজা পাঠ, যজ্ঞের কাজ করতেন। বিবাহের বৈদিক মন্ত্রগুলি সূর্যা নামের এক নারীর রচনা। তাই এতে নারীর অধিকার নেই এ কথা ঠিক নয়।’’ তাঁর দাবি, ‘‘কন্যাদান, লজ্জাবস্ত্র, পানপাতা দিয়ে মুখ ঢাকা, গাঁটছাড়া— এগুলি আমরা বিয়েতে পালন করি না।। সিদুঁর দান একটি অবমাননাকর ইতিহাস বহন করে। সেটাও ধীরে ধীরে লোপ করার চেষ্টা চলছে। তাতে এগিয়ে আসছেন মফস্সলের ছেলেমেয়েরাও।’’
গার্গী জানান, আড়াই বছর আগে কলকাতায় ‘পুরো নতুন বৈদিক বিবাহ দল’ তৈরি করা হয়। যার পুরোধা হলেন, অধ্যাপিকা রোহিণী পাল। সেই দলে ১০ জন মহিলা সদস্য রয়েছেন। তাঁরা পুরোহিত হিসেবে শুধু বিয়ের কাজ করেন। তাঁর দাবি, মহিলা পুরোহিত হিসেবে তাঁরা অনেক জায়গা থেকে ডাক পাচ্ছেন। কিন্তু যত জায়গা থেকে ডাক পাচ্ছেন, তত জায়গায় যাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের দাবি, অন্য কোনও সংস্থা বা মহিলা পুরোহিত মুর্শিদাবাদ জেলায় বিয়ের কাজ করেছে কি না তাঁদের জানা নেই। তবে তাঁদের সংস্থা ‘পুরোনতুন বৈদিক বিবাহ দল’ এর মুর্শিদাবাদে এটাই প্রথম কাজ। তাঁরা চান শুধু শহর নয়, মফস্সল থেকে গ্রামাঞ্চলে মহিলা পুরোহিতদের দিয়ে বৈদিক মতে বিয়ে দেওয়া হোক।
এই ভাবে বিয়েতে খুশি সায়ন্তিকা ও সুবীরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy