Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
জগদ্ধাত্রী দুয়ারে পাত পেড়ে

চিংড়ি পাতুরি না কষা কাঁকড়া

রাজার শহরের উৎসব বলে কথা। অতএব আয়োজনও রাজকীয়। রুপোর গ্লাসে জল। পাশেই প্রমাণ মাপের রুপোর থালায় চুড়ো করা বাসমতী চালের সুগন্ধি ভাত। সঙ্গে মান বাটা, সোনামুগের ঘন ডাল আর প্রমাণ সাইজের তোপসে ভাজা।

পুজোর সাজে কৃষ্ণনগর। — সুদীপ ভট্টাচার্য

পুজোর সাজে কৃষ্ণনগর। — সুদীপ ভট্টাচার্য

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৫৪
Share: Save:

রাজার শহরের উৎসব বলে কথা। অতএব আয়োজনও রাজকীয়।

রুপোর গ্লাসে জল। পাশেই প্রমাণ মাপের রুপোর থালায় চুড়ো করা বাসমতী চালের সুগন্ধি ভাত। সঙ্গে মান বাটা, সোনামুগের ঘন ডাল আর প্রমাণ সাইজের তোপসে ভাজা। থালা ঘিরে মানানসই রুপোর বাটিতে পরপর সাজানো লাউপাতায় মোড়া চিংড়ির পাতুরি অথবা কলাপাতায় মোড়া ভেটকির পাতুরি। বাসন্তি পোলাও, খাসি অথবা মুরগির মাংস। মুগডালের বড়ার চাটনি, পাঁপড়। শেষপাতে রসগোল্লার পায়েস আর সরপুরিয়া। তার পর ডাবরে সাজানো সুগন্ধি পান।

কোনও রাজবাড়ির অন্দরমহলে নয়, কৃষ্ণচন্দ্রের শহর কৃষ্ণনগর থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে পায়ে পায়ে সামান্য একটু গেলেই এমন খাবার মিলবে জগদ্ধাত্রী পুজোর ক’দিন। শহরের এক নামী রেস্তোরাঁয় জগদ্ধাত্রী স্পেশ্যাল ওই ‘থালির’ দাম পড়েছে ৫৯৯ টাকা।

কিন্তু দুর্গাপুজো ছেড়ে জগদ্ধাত্রী পুজোয় এমন এলাহী ব্যবস্থা কেন? উত্তরে রেস্তোরাঁর মালিক সঞ্জয় চাকী বলেন, “কৃষ্ণনগরের মানুষের কাছে দুর্গাপুজোর থেকে ঢের গুরুত্বপূর্ণ জগদ্ধাত্রীপুজো। তাই আমরাও সেরা প্রস্তুতিটা নিই এই সময়ে। তার থেকেও বড় কথা হল স্বয়ং মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন এই পুজোর প্রবর্তক। সুতরাং রাজার শহরে তাঁর শখের পুজোর জন্য রাজকীয় আয়োজন ছাড়া মানাবে কেন।” সুতরাং রেস্তোরাঁয় উৎসবের দিনে মিলবে কিছু বিশেষ পদও। যেমন, দেশী মুরগিকে বিশেষ ভাবে ম্যারিনেট করে ‘মোরগ পোলাও’। প্রতি প্লেট ২০০ টাকা। কমবেশি তিনশো গ্রাম ওজনের গোটা ‘ভেটকির তন্দুরি’। মাছ আস্ত রেখে তার পেটের ভেতর বিশেষ ভাবে ম্যারিনেট করা মশলা ভরে তন্দুরে রোস্ট করা ওই পদের দাম ২৯০ টাকা। বিরাট সাইজের কাঁকড়া দিয়ে তৈরি ‘কাঁকড়া কষার’ প্রতি প্লেট ১৯০ টাকা। তবে ‘লাইভ তন্দুরি কাবাব’-এর মজা অন্য রকম। টেবিলে জলন্ত বারবিকিউ-এর তিনটি শিকে তিনটি ভিন্ন স্বাদের পদ সাজানো থাকবে। একটিতে চিকেন টিক্কা কাবাব, রেশমি কাবাব ও হারা কাবাব। দ্বিতীয়টিতে ফিশ টিক্কা এবং তৃতীয়টিতে পনির টিক্কা। ধীরে সুস্থে যখন যেটা খুশি খান। দাম মাত্র ২৪৫ টাকা।

জগদ্ধাত্রী পুজো ঘিরে এ ভাবেই প্রস্তুত হচ্ছে কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁ। পুজোর ক’দিন রুপোর থালায় পরিবেশনের করে কেউ চমক দিলে পিছিয়ে নেই অন্যরা। নিজস্ব মোবাইল অ্যাপসে অর্ডার নিয়ে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌছে দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে আর এক রেস্তোরাঁয়। মালিক অরিন্দম গড়াই জানাচ্ছেন, “খাবারের পদের রকম ফের তো সব রেস্তোরাঁই উৎসবের সময়ে করে। আমরা তার পাশাপাশি জোর দিয়েছি পরিষেবাকে অত্যাধুনিক করে তুলতে। এখানে সম্ভবত আমরাই প্রথম রেস্তোরাঁ, যারা মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।” অরিন্দমবাবু জানাচ্ছেন, যে কোনও অ্যান্ড্রয়েড ফোনে তাঁদের নিজস্ব অ্যাপসটি ডাউনলোড করে নিলেই হল। অর্ডার মাফিক বাড়িতে পৌঁছে যাবে। শুধু তাই নয় সেই সঙ্গে মিলবে পাঁচ শতাংশ ছাড়ও। কৃষ্ণনগরের নিজস্ব উৎসবের দিনে মোবাইল অ্যাপসে অর্ডার দিতে পারেন চটপটি চিকেন ধনিয়া(১৮০ টাকা প্রতি প্লেট), স্পাইসি কড়াই চিকেন, বাদামী মুর্গ, মুর্গ মাখানি কিংবা তন্দুরি চিকেন বাটার মশালা (প্রতিটি ১৭০ টাকা প্লেট)। নিরামিশের পদের মধ্যে রয়েছে নার্গিসী কোপ্তা(১৫০ টাকা), পনির টিক্কা মাখানি (১৬০ টাকা), পনির বাটার মশালা (১১০ টাকা) কিংবা ইয়েলো ডাল ফ্রাই(৭০ টাকা), পাঞ্জাবী তড়কা (৭৫ টাকা) বা ডাল মাখানি (১০০ টাকা)। মিলবে ‘তন্দুরী লাচ্ছার’ মতো খাবারও।

তবে এই রেস্তোরাঁর ‘কম্বো প্যাকের’ তুলনা হয় না। ১৫০ টাকায় দু’জনের নিরামিষ প্যাকে থাকে পাঞ্জাবি তরকা অথবা ডাল মাখানির যেটি পছন্দ। সঙ্গে হয় ৩টি তন্দুর লাচ্ছা পরোটা অথবা ২টি বাটার নান অথবা ৫টি সাধারন তন্দুরি রুটি। ২৩০ টাকায় দু’জনের আমিষ খাবারে সাজানো প্যাকে থাকে তরকা বা ডালের বদলে থাকছে মুর্গ মাখানি অথবা তন্দুরি চিকেন বাটার মশালা অথবা চটপটা চিকেন ধনিয়া যেটা পছন্দ ক্রেতার।

শহরের কেন্দ্রস্থলে আর এক রেস্তোরাঁ আবার জগদ্ধাত্রী পুজোর ক’টা দিন রসনাতৃপ্তির জন্য সেই বেঙ্গালুরু, লখনউ ঢুঁড়ে নিয়ে এসেছেন নানা বিশেষ উপকরণ। রেস্তোরাঁ মালিক সমীর দেব জানান ‘চিকেন লেমন গ্রাস কাবাবের’ জন্য বেঙ্গালুরু থেকে এক ধরনের পাতা এনেছেন, যা থেকে তরতাজা লেবুর গন্ধে কাবাবের স্বাদ যাবে বদলে। ১৮০ টাকা দামের ওই খাবারের সঙ্গে পাল্লা দিতে তৈরি ‘লখনউ বিরিয়ানি’ (১৫০ টাকা প্রতি প্লেট)। মোঘল বাদশাহদের পছন্দের বিরিয়ানির স্বাদ হবহু দিতে উত্তরপ্রদেশের এক বিশেষ জায়গা থেকে এনেছেন মশলা। আবার নানা রকম নুডলসের জন্য নিজেরা তৈরি করেছেন নানা ধরনের সস। ৮০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে নানাধরনের নুডলসের প্লেট উৎসবের সন্ধ্যা জমিয়ে দেবে বলে জানিয়েছেন সমীরবাবু।

রসনার সঙ্গে উপাসনার সম্পর্ক বড় নিবিড়। যে কোনও পুজোপার্বণের দিনে নামিদামী রেস্তোরাঁ থেকে পাড়ার মোড়ের চাউমিনের গাড়ি ঘিরে জমে ওঠা ভিড়ের বহর দেখলেই তা মালুম হয়। লক্ষ্মীপুজো থেকে ইতুপুজো কিংবা ভাইফোঁটা থেকে জামাইষষ্ঠী। বাঙলার চিরকালীন পার্বণগুলির যে কোনওটির দিকে তাকালেই বোঝা যায় সুখাদ্য ছাড়া পার্বণের কথা কোনও কালে ভাবতেই পারেনি বাঙালি। ঋতুর সঙ্গে মানানসই করে মানুষ সাজিয়েছে তার ইষ্টদেবতার ভোগের থালা। শুধু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হাত বদল হয়েছে হাতাখুন্তির। একান্নবর্তী পরিবারের মা-ঠাকুমারা চলে যাওয়ার পর দায়িত্বটা তুলেছেন হোটেল রেস্তোরাঁর মালিক ও রাঁধিয়ের দল। তাতেই মজেছে সবাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Krishnanagar luxurious food
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy