Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Murshidabad

হিন্দু না ওরা মুসলিম? প্রশ্নই ওঠে না মুর্শিদাবাদের কিরীটেশ্বরী মন্দিরে

রাজা রামকৃষ্ণ রায়ের মতো সিদ্ধতান্ত্রিক এখানে পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন। বাংলার ইতিহাসের বহু সুখ-দুঃখের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই মন্দির।

কিরীটেশ্বরী। নিজস্ব চিত্র।

কিরীটেশ্বরী। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২০ ২১:০৭
Share: Save:

বাংলার এই কালী সবার। মুর্শিবাদের নবগ্রামের কিরীটেশ্বরী মন্দিরে হিন্দু, মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষের। একই সঙ্গে পুজোর দেখাশোনা করেন তাঁরা।

জানা যায়, রাজা রামকৃষ্ণ রায়ের মতো সিদ্ধতান্ত্রিক এখানে পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন। বাংলার ইতিহাসের বহু সুখ-দুঃখের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই মন্দির।

মন্দিরের সেবাইত নেপাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দেশে যখন ধর্মীয় মেরুকরণের উদ্বেগ, তখন এখানকার মুকুন্দবাগ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা প্রয়াত আবদুল হাকিম মণ্ডলের সংকল্পকে বাস্তবায়িত করতে তাঁর পুত্র জমি দান করেন মন্দিরকে। তবে ইতিহাস বলে বাংলার সংস্কৃতিতে এই ধরনের ঘটনা স্বাভাবিক।”

দেবী কিরীটেশ্বরী মন্দির মুর্শিদাবাদের দহপাড়া রেল স্টেশন থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে। অনেকে বলেন এখানে সতীর মুকুট বা কিরীট পড়েছিল। সেই কারণে দেবীকে ‘মুকুটেশ্বরী’ বলেও ডাকা হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৪০৫ সালে দেবীর প্রাচীন মন্দিরটি ভেঙে পড়ে। তার পরে ১৯ শতকে লালগোলার রাজা দর্পনারায়ণ রায় নতুন মন্দির নির্মাণ করান।

ভাগীরথী তীরে এই দেবস্থানে কালীপুজোর দিন হাজার হাজার শাক্ত-বিশ্বাসীর সমাগম হয়। প্রধান কিরীটেশ্বরী মন্দিরের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হল, এখানে দেবী শিলাস্বরূপা। তাঁর কোনও নিয়তাকার মূর্তি নেই। কোনও ছবিও এখানে পূজিত হয় না। একটি লাল রঙের শিলাকেই এখানে মাতৃজ্ঞানে পূজা করা হয়। শিলাটি একটি আবরণে আচ্ছাদিত। প্রতি বছর দুর্গাষ্টমীতে এই আবরণটি পরিবর্তন করা হয়। যে মুকুটের মহিমাতেই এই শক্তিপীঠের উৎপত্তি তা রানি ভবানীর গুপ্ত মঠে সুরক্ষিত রয়েছে। গুপ্তমঠ দেবী মন্দিরের কাছেই অবস্থিত। প্রসঙ্গত, দেবীর প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষও নবনির্মিত মন্দিরের সামনে অবস্থান করছে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, লালগোলার রাজা ভগবান রায়, মুঘল সম্রাট আকবরের থেকে এই মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পান। ভগবান রায়েরই বংশধর ছিলেন দর্পনারায়ণ। দুর্গা পুজো, কালী পুজো ছাড়াও এখানে দেবীর বিশেষ পুজো হয় মাঘ মাসের রটন্তী অমাবস্যায়। পৌষ মাসের প্রতি মঙ্গলবার এখানে একটি বিশেষ মেলা বসে। এই মেলা রাজা দর্পনারায়ণের কাল থেকে বসছে।

একটি কাহিনি থেকে জানা যায়, পলাশীর যুদ্ধের পর যখন মিরজাফর, নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে তাঁর অন্যতম সঙ্গী রাজা রাজবল্লভকে ডুবিয়ে মারেন। সেই দিন এই মন্দিরের এক শিবলিঙ্গ নাকি নিজে থেকেই ফেটে গিয়েছিল। তার চাইতেও বড় কথা, মিরজাফর শেষ বয়সে কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত হন। তিনি তখন নাকি অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছেন। তাঁর বিশ্বাস জন্মায়, দেবীর চরণামৃত পান করলে তিনি রোগমুক্ত হবেন। দেবীর চরণামৃত যখন তাঁর কাছে পৌঁছয়, তখন সুবে বাংলার নবাব শেষ নিশ্বাস নিচ্ছেন। দেবীর চরণামৃত মুখে নিয়েই নাকি প্রয়াত হন বাংলার ইতিহাসের অন্যতম বিতর্তিক চরিত্র মিরজাফর।

লোক মুখে চলে আসা এই সব কাহিনি সত্য-মিথ্যা যাই হোক, অনেক আগে থেকেই দেবী কিরীটেশ্বরীকে বাংলার হিন্দু-মুসলমান তাদের নিজেদের অংশ বলেই ভেবেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy