Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
100 Days Work

‘আমাদের কেন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে’

পেটের টানে অনেকেই শিশু সন্তান, বাবা-মা ও স্ত্রীকে ছেড়ে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ইতিমধ্যে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। কেউ কেউ চলে গিয়েছেন বিদেশে।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:২৫
Share: Save:

বকেয়া টাকা যদি বা পাওয়া যায়, কাজের কী হবে? এই প্রশ্নটাই এখন জবকার্ড হোল্ডারদের কাছে অন্যতম প্রধান জিজ্ঞাস্য হয়ে উঠছে। এই প্রকল্পের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল নদিয়া জেলার হাজার হাজার পরিবার। প্রশ্ন উঠছে, আর কত কাল একশো দিনের কাজের জন্য অপেক্ষা করে থাকতে হবে।

বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন চাপড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম হাটখোলার বাসিন্দা আজিজ শেখ বলেন, “সীমান্ত এলাকায় এমনিতেই কাজ নেই। চাষের জমিতে কাজ তেমন মেলে না। একশো দিনের কাজও বন্ধ। এমন চলতে থাকলে বহু ঘরেই হাহাকার পড়ে যাবে।” তাঁর আক্ষেপ,“সারা বছরের চালের খরচ উঠে আসত ওই টাকায়। বাকি খরচ যেমন-তেমন ভাবে তুলে নেওয়া যেত।”

পেটের টানে অনেকেই শিশু সন্তান, বাবা-মা ও স্ত্রীকে ছেড়ে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে ইতিমধ্যে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। কেউ কেউ চলে গিয়েছেন বিদেশে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাড়ভাঙা খাটুনির পর নিজের খরচ চালিয়ে বাঁচানো টাকা তাঁরা বাড়িতে পাঠান। এমনই এক জন ধুবুলিয়ার পরিমল দাস বর্তমানে কেরলে গৃহনির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছেন। তাঁর কথায়, “আমি মাঠে দিনমজুরের কাজ করতাম। সেই সঙ্গে একশো দিনের কাজ তাতে সংসার চলে যেত। সরকার কাজ দেওয়া বন্ধ করায় বাধ্য হয়ে কেরলে এসেছি।” দীর্ঘদিন বাড়ি ফেরেননি ভীমপুরের মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, “আমি অনেক দিন ধরেই পুণেতে রাজমিস্ত্রির কাজ করি। আগে মাঝে-মধ্যে বাড়ি যেতাম, একশো দিনের কাজ করতাম। এখন সেটা বন্ধ। তাই বাড়ি যাওয়াও বন্ধ। বসে খাওয়ার মতো টাকা আমাদের নেই।”

২০২১ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে একশো দিনের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। ফলে গ্রামগঞ্জে অভাবি মানুষদের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। অনেকেরই বক্তব্য, কেন্দ্র না রাজ্য কার দোষে এই প্রকল্প বন্ধ হয়ে আছে, সেটা জানার প্রয়োজন নেই। কাজ চাই, যাতে অন্তত খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা যায়। আজিজ শেখের কথায়, “কেউ যদি টাকা চুরি করে থাকে তা হলে তাকে জেলে পোরা হোক। আমাদের টাকা বন্ধ করা হল কেন? কেন আমরা হকের কাজ পাব না? চুরি যদি কেউ করেও থাকে, তার শাস্তি কেন আমাদের দেওয়া হচ্ছে?”

শুধু গরিব মানুষ নয়, প্রশ্ন তুলছেন এক শ্রেণির সচ্ছল লোকজনও। তাঁরা মূলত একশো দিনের কাজের জন্য নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করেছিলেন বিভিন্ন পঞ্চায়েতে। তাঁদের কোটি কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। এঁদেরই এক জন, কৃষ্ণগঞ্জের অসিত ঘোষের দাবি, “আমার সাড়ে তিন কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। কবে পাব তার ঠিক নেই। নিজের যা ছিল, তার পাশাপাশি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে মাল সরবরাহ করেছিলাম। পাওনাদারেরা ছিঁড়ে খাচ্ছে।” এঁদের সংখ্যাও কিন্তু নেহাত কম নয়। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে দু’তিন জন করে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করেছিলেন। তাঁদের প্রায় সকলেই বিপাকে পড়েছেন। (চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Budget 2024-25
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy