প্রতীকী চিত্র।
প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তার পরও সংশয় কাটছে না নদিয়ার চাকরি প্রার্থীদের। কেউ আবারও আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বলছেন, কেউ বলছেন রাস্তায় নেমে বৃহত্তর আন্দোলনের কথা।
দীর্ঘ দিন ধরে গোটা রাজ্যের মত নদিয়া জেলাতেও প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ হয়ে আছে। ২০১৪ সালে প্রাথমিক ও ২০১৫ সালের উচ্চ প্রাথমিক ক্ষেত্রে শিক্ষক নিয়োদের পরীক্ষা হয়। তার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ এনে আদালতে একাধিক মামলা হয়েছিল। মামলাকারীদের তালিকায় আছেন জেলার অনেকেই। আন্দোলনও হয়। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অব প্রাইমারি এডুকেশন’-এর প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য গত বিধানসভা ভোটে পলাশিপাড়া কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার পর সেখানে চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান ২০১৪ সালের প্রাথমিকের টেট পাশ করা প্রার্থীরা।
২০১৪ সালে প্রাথমিকে নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছিল। নানা টানাপড়েনের পর এই বছর ভোটের আগে গোটা রাজ্যে ১৫২৮৪ জনের নামের তালিকা বের হয়। তার মধ্যে নদিয়া জেলায় পর্ষদের পাঠানো তালিকা অনুযায়ী ৬৯ জনের নিয়োগ হয়ে যায়। বিষয়টি জানার পর তালিকায় নাম থাকা বাকি চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগের দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করেন। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাতেও তাঁরা পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। এঁদেরই এক জন জসীম আলি বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। কারণ আমাদেরই যে নিয়োগ করা হবে সেটা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। ফলে যতক্ষণ না নিয়োগপত্র হাতে পাচ্ছি, উদ্বেগ থেকেই যাবে।”
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচনের আগে যে ১৫ ২৮৪ জনের নামের তালিকা প্রকাশ হয়েছে সেখানে নদিয়া জেলার প্রায় আঠারোশো জনের নাম আছে। কিন্তু সংসদ থেকে রাজ্যের কাছে ৪০৩টি শূন্যপদের তালিকা পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে ৬৯ জনের নিয়োগ হয়ে গিয়েছে। বাকি ৩৩৪ জনের নিয়োগ পরে হওয়ার কথা। তালিকায় নাম থাকা প্রায় আঠারোশো জনের মধ্যে বাকি প্রায় চোদ্দোশো জনের নিয়োগ হবে জেলার বাইরে। জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাকিপ্রায় চোদ্দোশো জনের কাউন্সিলিং করে নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা রাজ্য বোর্ডের।
আবার যাঁরা ২০১৪ সালের টেটে পাশ করেছিলেন কিন্তু তালিকায় নাম নেই এমন চাকরি প্রার্থীরা হতাশ। এঁরা আবার নতুন করে আন্দোলনের কথা ভাছেন। ডিএলএড-দের অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন অনেকেই। তাঁদের অন্যতম নদিয়ার সৈকত বিশ্বাস। তিনি ‘প্রাথমিক শিক্ষক বঞ্চিত ডিএলএড ঐক্য মঞ্চ’-এর জেলা কমিটির সহ-সম্পাদক। সৈকতের মতে, “মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্যে ধোঁয়াশা রয়েছে। তিনি নিয়োগের কথা বলেছেন। কিন্তু সেখানে আমাদের নিয়োগ করা হবে নাকি আবার নতুন করে পরীক্ষা হবে তা পরিষ্কার করে বলেননি।” তাঁর আক্ষেপ, “ডিএলএডদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে কিনা সেটাও পরিষ্কার করে বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। দেখা যাক, আদালত কী রায় দেয়।” নদিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি জ্যোতিপ্রকাশ ঘোষ বলেন, “আমরা রাজ্যের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। যেমন নির্দেশ আসবে সেই মত পদক্ষেপ করা হবে।”
উচ্চ প্রাথমিক নিয়েও স্বস্তিতে নেই চাকরি প্রার্থীরা। সোমবার এসএসসি-র তরফে যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতেও কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন অনেকে। ২০১৫ সালে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা দিয়েছিলেন নদিয়ার আমজেদ আলি। ইন্টারভিউয়ে ডাক পাননি তিনি। শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালে রাজ্যে বিভিন্ন জেলার ৬৫ জনের সঙ্গে তিনিও হাইকোর্ট মামলা করেন। অভিযোগ ছিল অনিয়মের। আমজাদ বলেন, “২০ হাজার জনের নামের তালিকা বের হয়েছিল। আমাদের থেকে কম নম্বর পেয়ে ইন্টারভিউয়ে ডাক পেল অনেকেই। চরম অনিয়ম হল। আদালতে গেলাম। আদালতের নির্দেশে আমাদের মত প্রায় ছ’হাজার জনের তালিকা বার হল।” তিনি বলেন, “সোমবার যে তালিকা বের হল তাতে আমাদের নাম নেই। আমরা আবার আদালতে যাব।”
নদিয়া জেলায় বর্তমানে উচ্চ প্রাথমিকে তিন হাজারের মত শূন্যপদ আছে। তবে তার মধ্যে ২০১৫ সালের নিয়োগের পরীক্ষার সময় দু’দফায় সাতশো শূন্যপদের তালিকা জেলা থেকে রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছিল। ধরে নেওয়া হচ্ছে, সেই সব পদে এ বার নিয়োগ হতে পারে। কিন্তু আদালতের ভ্রুকুটি থেকেই যাচ্ছে। একাধিক বার ফোন করেও জেলার মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শক মৃণালকান্তি সিংহ রায়কে পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy