কৃষ্ণনগরে অঞ্জনা নদী দখল হয়ে অনেক জায়গায় নালায় পরিণত হয়েছে। — নিজস্ব চিত্র।
সরকরি জমি, জলাশয়, খাল বুজিয়ে বেআইনি বহুতল নির্মাণের কথা উল্লেখ করে রাজ্যের একাধিক পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই তালিকায় নেই কৃষ্ণনগর পুরসভা। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শহরের বাসিন্দারাই। কারণ, এই শহরেরই বুক চিরে চলে যাওয়া অঞ্জনা নদীর পুরোটাই দখল হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। সেখানে গড়ে উঠেছে বেআইনি বাড়ি, বহুতল, এমনকি একাধিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। যে অঞ্জনা খালকে এই শহরের নিকাশি ব্যবস্থার প্রধান আধার বলে মনে করা হয়, সেখানেই এখন কংক্রিটের রাজত্ব। প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রী কেন কৃষ্ণনগর পুরসভাকে অঞ্জনা নদী দখল করে গড়ে ওঠা নির্মাণ ভাঙার কিংবা নদীর স্বাভাবিক গতিপথ ফেরানোয় উদ্যোগের প্রসঙ্গ তুললেন না।
কৃষ্ণনগর শহরের ভিতর দিয়ে চলে যাওয়া অঞ্জনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নদীপ্রবাহ। এই শহরের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া জলঙ্গি নদী থেকে যা উৎপত্তি হয়ে মিশেছে রানাঘাটের কাছে চূর্ণী নদীতে। কৃষ্ণনগর শহরের নিকাশি ব্যবস্থাই যে শুধু এর উপরে নির্ভরশীল, তা নয়। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার সেচের জল ও মৎস্যজীবীদের বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন ছিল এই নদী। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এই নদীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁর কবিতায় ঠাঁই দেন অঞ্জনার। কিন্তু সেই নদী বর্তমানে কোথাও নালা, আবার কোথাও খালে পরিণত হয়েছে। শহরের বাইরে কোথাও নদীবক্ষে বাঁধ দিয়ে তাকে জলাশয়ে পরিণত করা হয়েছে। সেখানে মাছ চাষ করা হচ্ছে।
কী করে এমন অবস্থা? অনেকেই মনে করেন, রাজা রূদ্র রায় বহিরাগতদের কৃষ্ণনগরে ঢোকা নিয়ন্ত্রণ করতে অঞ্জনা নদীর উৎসমুখ ছোট করে দেন। সেটাই অঞ্জনার এই বেহাল অবস্থার জন্য দায়ী। তার পর থেকে একটু একটু করে অঞ্জনার দুই পাড় দখল হতে থাকে। বিশেষ করে, কৃষ্ণনগর শহরের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় সাত কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সব চেয়ে বেশি দখল হতে থাকে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৯৪-৯৫ সাল নাগাদ গৌরীশঙ্কর দত্ত পুরপ্রধান থাকার সময়ে পুরসভার অনুমতি নিয়ে অঞ্জনা নদীর পাড়ে বাড়ি তৈরি হতে শুরু করে। পরে ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সালে উদয় মিত্র পুরপ্রধান থাকাকালীন তা চরম আকার ধারণ করে বলে অভিযোগ। দু’জনেই মারা গিয়েছেন। তাঁদের উত্তরসূরী প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহা দাবি করছেন, “২০০৮ সালের পর থেকে কিন্তু পুরসভা অঞ্জনার পাড়ে একটাও বাড়ি তৈরির অনুমতি দেয়নি। বরং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছিলাম। কিন্তু আদালতের নির্দেশে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম।”
২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৎকালীন পুরপ্রধান অসীম সাহাকে অঞ্জনা সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই মতো সমীক্ষা করে প্রকল্প তৈরি করে রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়। ৮২ লক্ষ টাকা অনুমোদনও করা হয়েছিল বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। পুরসভার পক্ষ থেকে দখলমুক্ত করার অভিযান শুরু হয়। কিন্তু বিষয়টি গড়ায় হাই কোর্ট পর্যন্ত। পুরসভা কর্তৃপক্ষের দাবি, হাই কোর্টের নির্দেশে সেই অভিযান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় পুরসভা। ফেরত যায় টাকা। তার পর থেকে অঞ্জনাকে দখলমুক্ত করার আর কোনও উদ্যোগ হয়নি।
পুরসভা কী আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে পারত না? বর্তমান পুরপ্রধান রিতা দাস বলেন, “দখল যা হওয়ার, সবটাই হয়েছে অনেক আগে। গোটা বিষয়টি আইনি জটিলতার মধ্যে চলে গিয়েছে। নতুন করে কিছু করা যায় কিনা, চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy