প্রতীকী ছবি।
মাত্র কয়েক দিন আগেই জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন ওরফে মধু পরিষ্কার ঘোষণা করেছিলেন, তিনি দলের একনিষ্ঠ কর্মী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তাঁর নেত্রী। দলবদলু শুভেন্দুর সঙ্গে যে কোনও সম্পর্ক নেই, তাও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনাক্রম তা বলছে না। তাঁর বাড়ির সামনে শুভেন্দুর ফ্লেক্স ঝুলেছে মাত্র ক’দিন আগেও। তার পরে, শুক্রবার তাঁর বাড়ি থেকে সামান্যই দূরে দলের প্রতিষ্ঠা দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন মোশারফ হোসেন। গরহাজির মধু ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত জেলা পরিষদের সদস্য সঞ্জয় হালদার, নওদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ ঘোষ সহ নওদা ব্লকের একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানও। শুক্রবার দলের প্রতিষ্ঠা দিবসে নওদার আমতলা এলাকায় দলীয় কার্যালয় ও বাজার সংলগ্ন এলাকায় একাধিক কর্মসূচির আয়োজন করে ব্লক তৃণমূল। সেই কর্মসূচিতে জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খান, স্থানীয় বিধায়ক সাহিনা মমতাজ হাজির ছিলেন।
দলীয় কর্মীদের একাংশের দাবি নওদার মধুপুরের মধুর বাড়ি থেকে আমতলার দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। দলের জেলা সভাপতি আবু তাহের জানিয়েছেন, মোশারফকে এই সভায় যথাবিধি আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। মধু নিজেও তা স্বীকার করছেন। তা হলে কেন যায়নি? মধুর বক্তব্য, ‘‘আমার অন্য কাজ থাকায় যেতে পারিনি। আমি দলেই রয়েছি।’’
যদিও তৃণমূলের সূত্রেই খবর, এদিন সকালে বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও মধু ও তাঁর অনুগামীরা দলের সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। নওদা ব্লক সভাপতি সুনীল মণ্ডল বলেন, ‘‘মধুর এহেন পদক্ষেপ স্পষ্ট করে দিচ্ছে তাঁর অন্য কোনও রাজনৈতিক
পরিকল্পনা রয়েছে।’’
দলীয় কর্মসূচিতে মধুর অনুপস্থিতির বিষয়ে জেলা সভাপতি আবু তাহের খানও বলেন, ‘‘দেখা যাক এই খেলা আর কত দিন চলে।’’
এদিন নওদার দলীয় কর্মসূচি থেকে আবু তাহের তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘‘দলে থেকে যারা দলের সাথে বেইমানি করছেন দল থেকে তাঁরা বেরিয়ে যান। দলে কোনও অনুগামী, ফ্যান ক্লাব চলবে না।’’ কারও ব্যক্তি পাল্লায় পড়বেন না বলেও দলীয় কর্মীদের বার্তা দেন তিনি। তাহেরের এই ধরনের বক্তব্য যে মধুকে লক্ষ্য করেই তা নিয়ে নওদায় শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।
সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরেই কংগ্রেস থেকে সদলবলে তৃণমূলের পতাকা ধরেছিলেন মধু। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ হিসেবেই জেলায় মধুর পরিচিতি। শুভেন্দুর সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি হওয়ার পরে মারগ্রামে মফেজুদ্দিন মণ্ডলের স্মরণসভা নিয়েই মধুর সঙ্গে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বিবাদ প্রকট হয়। ওই সভায় শুভেন্দুর পাশে থেকেছিলেন মধু। তা ছাড়া, জেলা পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব থেকে অপসারণের পরে সম্প্রতি জেলা পরিষদের সমস্ত সদস্যদের নিয়ে জেলা সভাপতির বৈঠক ছাড়া আর অন্য কোনও রাজনৈতিক সভা বা কর্মসূচিতে দেখা যায়নি মধুকে। তবে সেই সভায় মধু দলের প্রতিই আনুগত্য দেখান। শুভেন্দুর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ না দেওয়ার বিষয়টিও স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন তিনি।
তবে মধুর হাবভাব এখন অন্য বার্তা দিচ্ছে বলেই মত রাজনীতির কারবারিদের। ভোট কুশলী পিকেও সর্বস্তরের নেতা কর্মী, জনপ্রতিনিধিদের একসাথে চলার নিদান দিয়েছেন।
সেখানে শুক্রবার সকালে দলের কর্মসূচিতে যোগ না দিলেও তার ঠিক ঘণ্টা খানেক পরে আমতলা এলাকাতেই একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে যোগ দিতে দেখা যায় মধু, সঞ্জয়কে। যা দেখে অনেকেই মনে করছেন ইচ্ছাকৃত ভাবেই দলের কর্মসূচিতে অনুপস্থিত ছিলেন মধু, সঞ্জয়রা। যদিও মধু বলেন, ‘‘দলবদলের কোনও প্রশ্নই নেই।’’
তবে দলের শীর্ষ নেতাদের একাংশের দাবি ব্যক্তিগত কাজে অনুপস্থিতির বিষয়ে দলকে মধু আগাম কিছু জানাননি। তবে দলের কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি ভালো ভাবে মেনে নিতে পারছেন না দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরাই।
দলবদলে বিজেপিতে যোগ না দিলেও মধু ছেড়ে আসা পুরনো দল কংগ্রেসের দিকেই ঝুঁকতে পারেন বলে জল্পনা শুরু হয়েছে নওদায়। জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘শুধু নেতা নয় যে কোনও কর্মীই আমাদের দলে স্বাগত। তবে কে কখন যোগ দেবেন সময় হলেই মানুষ তা দেখতে পাবেন।’’
বিজেপির জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘দলে যদি কেউ আসতে চান, তা হলে দরজা খোলা। তবে শুভেন্দু অনুগামীদের কেউ এখনও যোগাযোগ করেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy