প্রতীকী ছবি।
করোনা আবহে প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাছাড়া করোনা সংক্রমণ রুখতে রাজ্য জুড়ে চলছে কঠোর বিধিনিষেধ। এরই মাঝে চুপিসাড়ে বাড়ছে নাবালিকার বিয়ে। তবে ঝক্কি এড়াতে অধিকাংশ অভিভাবকই অনাড়ম্বর ভাবে বা চুপিসাড়ে বিয়ের বন্দোবস্ত করছেন। অনেকে আবার রাতের অন্ধকারেই চার হাত এক করার বন্দোবস্ত করছেন। চুপিসাড়ে নাবালিকার বিয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় টনক নড়েছে প্রশাসনেরও। ফলে জেলা জুড়েই পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা নজরে আসছে। তবে প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে বিয়ে দেওয়ায় সংখ্যাটাও নেহাৎ কম নয়। আর এই সুযোগে মুনাফা লুটছেন এক শ্রেণির অসাধু ম্যারেজ রেজিস্ট্রারও। তবে অনেকে আবার মনে করছেন শুধু মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়াতেই বাল্যবিবাহের মত সামাজিক অপরাধের সংখ্যাটা বাড়ছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে করোনা আবহেও গত প্রায় দেড় বছরে নাবালিকার বিয়ে রদের সংখ্যাটা তিনশো ছাড়িয়েছে। শুধু মাত্র হরিহরপাড়া ব্লকেই গত বছর করোনা আবহে ব্লকের কন্যাশ্রী যোদ্ধা ও ব্লক প্রশাসনের কর্তারা রদ করেছিলেন ৪৫ টি বাল্যবিবাহ। গত অগস্ট থেকে এবছর মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত হরিহরপাড়া ব্লকে বাল্যবিবাহ রদ করা গিয়েছে ২৭ টি। আর গত দু'সপ্তাহে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে বাল্যবিবাহ রদ হয়েছে ৮ টি। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই পাত্রীর বয়স মেরেকেটে ১৫-১৬। পাশের ব্লক নওদাতেও পরিস্থিতি প্রায় একইরকম।
গত রবিবার ও সোমবার ব্লক প্রশাসনের কর্তারা নওদার আলামপুর ও কালিতলা এলাকায় দুই নাবালিকার বিয়ে রদ করেছে। গত বুধবার দু'টি এবং বৃহস্পতিবার একটি নাবালিকার বিয়ে রদ করেছে হরিহরপাড়া ব্লক প্রশাসন ও কন্যাশ্রী যোদ্ধার। দিন কয়েক আগেও নাবালক যুগলের বিয়ের খবর পেয়ে স্বরূপপুর গ্রামে গিয়ে বিয়ে রদ করেছেন হরিহরপাড়ার বিডিও রাজা ভৌমিক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও হরিহরপাড়া থানার পুলিশ।
দেখা গিয়েছে সব ক্ষেত্রেই চুপিসাড়ে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা। প্রশাসনের কর্তারাও মানছেন, করোনা আবহে স্কুল, টিউশন বন্ধ থাকায় কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের কাছেও নাবালিকা বিয়ের খবরটা কম আসছে। আর সেই সুযোগেই চুপিসাড়ে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। হরিহরপাড়া ব্লকের কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের কো-অর্ডিনেটর জাকিরন বিবি বলছেন, ‘‘করোনার জন্য স্কুল, টিউশন বন্ধ থাকার ফলেই কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের কাছে বাল্যবিবাহের খবর কম আসছে। বিধিনিষেধের মাঝেই অনেকে চুপিসাড়ে বিয়ের বন্দোবস্ত করছেন। আমরা খবর পেলেই করোনা আবহেও বিয়ে রদের চেষ্টা করছি।’’ জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর জয়ন্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘পুলিশ প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। আমাদের লক্ষ্য এই সামাজিক ব্যধি দূর করতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা।’’
তবে সচেতন নাগরিকদের একাংশের মতে শুধু মুচলেকা দিয়ে রেহাই পাওয়াতেই এই ধরনের সামাজিক ব্যাধি কমছে না। জেলা শিশু সুরক্ষা কমিটির চেয়ারপারসন সোমা ভৌমিক বলেন, ‘‘গত জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ১৩৯ টি বাল্যবিবাহ রদের খবর রয়েছে।’’ হরিহরপাড়ার বিডিও রাজা ভৌমিক বলেন, "মাঝেমধ্যেই চুপিসাড়ে নাবালিকার বিয়ের খবর আমাদের কাছে আসছে। আমরাও তৎপর আছি। খবর পেলেই পুলিশ, কন্যাশ্রী যোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা বাল্যবিবাহ রদ করছি। নাবালিকার পরিবারের লোকেদের কন্যাশ্রী, রুপশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পরিবারের লোকেদের বুঝিয়ে মুচলেকা নিচ্ছি। পাশাপাশি নজরদারিও চলছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলছেন, ‘‘বাল্যবিবাহ রদে পুলিশ প্রশাসন তৎপর রয়েছে। অনেকে ১০০ নম্বর ডায়াল করে বা জেলা পুলিশের আলোর পথে অ্যাপে আমাদের কাছে খবর দিচ্ছেন। আমাদের কাছে খবরটা আসলেই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy